গত কয়েক বছরে চীনের পর্যটন শিল্পের দ্রুত উন্নীত হয়েছে । ১৯৯২ সাল ছিলো চীনের পর্যটন বর্ষ ।১৯৯২ সালে চীনের পর্যটন শিল্পের আয় হয়েছিল : তিন শো পঁচানব্বই কোটি মার্কিন ডলার । নানা পর্যটনদলের সদস্য হিসাবে যারা চীনে এসেছিলেন ,তাদের সংখ্যা চলল্শি লক্ষ । ১৯৯৩ সালে চীনে -আসা পর্যটকদের সংখ্যা চার কোটি পনের লক্ষে পৌঁছেছিল । তাদের মধ্যে বিদেশীদের সংখ্যা গাড়ে ছেচল্লিশ লক্ষ। গত বছর চীনের পর্যটন শিল্পের আয় চার শো সাত্ষট্টি কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে ।
চীনের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই আছে নানা ধরনের প্রাচীন দর্শনীয় স্থান আর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য । সেগুলোর প্রতিটিরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে । কোনো কোনো দর্শনীয় স্থানে আকাশছোঁয়া পাহাড়ৈর নীচে স্বচ্ছ ঝরনা কলকল শব্দে বয়ে যায় । সূর্যের আলোয় কোনো কোনো দর্শনীয় স্থানের প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তি ঝলমল করতে থাকে ।এখন আপনাদের কাছে চীনের দুটো দর্শনীয় স্থান হানচৌ শহর সুচৌ শহরের সংক্ষিপ্ত পরিচিত দিচ্ছি ।চীনের লোকেরা প্রায়ই বলে , আকাশে আছে স্বর্গ ,আর মর্ত্যে আছে সুচৌ আর হানচৌ । এই কথার মানে : সুচৌ শহর আর হানচৌ শহর মর্ত্যের স্বর্গ ।
চীনের কিয়াং সু প্রদেশের থাই হদের তীরে এই সুচৌ শহর চীনের অন্যতম প্রাচীন সাংস্বৃতিক আর ঐতিহাসিক শহর । সুচৌ শহরের আয়তন এক শো কুড়ি বর্গ কিলোমিটার । সুচৌ শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর উপরে আছে ছোট-বড় অনেক সেতু । নদীর ধারে শহরবাসীদের বাড়িঘর । সুচৌ একটি নদীমাতৃক শহর । এয়োদশ শতাব্দীতে ইটালির পর্যটক মার্কো পোলো সুচৌ শহরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন :সুচৌ শহর প্রাচ্যের ভৌনস।
পূঁহিপত্রের সাক্ষ্য অনুযায়ী ,এক সময়ে সুচৌ শহরে তিন শোরও বেশী সেতু ছিল । কালক্রমে কোনো কোনো সেতু ধ্বসে পড়েছে । বুনিয়াদী গঠনকাজের প্রয়োজনে কোনো কোনো সেতুকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু বেশ কয়েকটি সেতু এখনো সুরক্ষিত আছে । যেমন ,দক্ষিণ উপকন্ঠের বাওতাই সেতু । একান্নটি থাম সম্বলিত । এই মহিমা ব্যঞ্জক সেতুর দৈর্ঘ্য চার শোমিটার । দূর থেকে দেখলে মনে হয় , হদের স্বচ্ছ পানির উপরে বাঁধা জেড পাথরের একটি বিরাট কোমর্বন্দ ।
সুচৌ শহরের আর একটি নামঃ বাগান শহর। সারা সুচৌ শহরে ছড়িয়ে আছে এক শো সওরটিরও বেশী বাগান । বেশীর ভাগ বাগান চার শো বছর আগে তৈরি হয়েছিলো । অলক্ক কয়েকটি বাগানের ইতিহাস এক হাজার বছরের । দক্ষিণ চীনের উদ্যান -রচনাশৈলীর বৈশিষ্ট্যগুলো সমন্বিত করে সুচৌ শহরের বাগানগুলো গড়ে তোলা হয়েছে । এক একটি বাগান যেন এক -একটি শিল্পকলার জাদুঘর ।সেগুলোর মধ্যে "ছাংলাং থিং" "সি জি লিন" "জুওজেং ইউয়ান" আর "লিও ইউয়ান" সবচেয়ে আকর্ষনীয় । এই চারটে বাগানে চীনের সং রাজত্বকালের ,ইউয়ান রাজত্বকালের ,মিং রাজত্বকালের আর ছিং রাজত্বকালের উদ্যান-রচনাশৈলীর পরিচয় পাওয়া যায় ।
হানচৌ শহর চীনের চে কিয়াং প্রদেশের রাজধানী । হানচৌ শহর প্রাচীনকালে চীনেরও রাজধানী ছিল । হানচৌ শহরের পশ্চিম হ্রদের সৌন্দর্যবিশ্ব বিখ্যাত। পশ্চিম সি হ্রদ যেন দক্ষিণ চীনের একজন সুন্দরী , যার পেলবতা আর লাবন্য অতুলনীয় ।
পশ্চিম হ্রদের তিন দিকে সবুজ পাহাড় আর এক দিকে হানচৌ শহরের বাড়িঘর । সূর্য উঠলে পশ্চিম হ্রদের টলটলে পানির উপর আলো ঝিকমিক করে।পশ্চিম হ্রদের মধ্যভাগে "সিয়াও ইং চৌ" " সান তান ইন ইয়ু" আর "হু সিন তিং" নামে তিনটা জায়গার শোভা অতি মনোরম ।
পশ্চিম হ্রদের উত্তর পশ্চিম ভাগের তান সেতু পাই বাঁধের শেষ প্রান্ত। বাঁধটির দুধারে দুটো পীচ গাছের মাঝখানে একটি করে উয়িলো গাছ । বসন্তের সমাগমে ফুলে ফুলময় পিচ গাছ, সবুজ উয়িলো গাছ ,হ্রদের স্বচ্ছ পানি আর বৃক্ষশোভিত পাহাড়ের সমন্বয়ে সতেজ প্রানপ্রাচুর্যে ভরপুর একটি দৃশ্য দেখা দেয় । হানচৌ শহরের "লিউ লাং ওয়েন ইং" "হুয়া কাং কুয়ান ইয়ু" "পিংহু ছিউ ইয়ু" প্রভৃতি নামের কয়েকটি জায়গার অপরুপ সৌন্দর্যও বিশেষভাবে উপভোগ করার মত ।
|