সি থৌ চেই অথার্ত্ পাথরের গ্রাম হচ্ছে দক্ষিণপশ্চিম চীনের কুয়েচৌ প্রদেশের পু ই জাতির একটি গ্রাম । অতীতে আবাদী জমির খুবই অভাব এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বলে সি থৌ চেই বরাবরই ছিলো একটি অত্যন্ত দরিদ্র গ্রাম । গত দশ বছরে আশেপাশের অনেক গ্রামের সংগে একত্রে স্থানীয় স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদের প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে সক্রিয়ভাবে পযর্টনশিল্পের উন্নয়ন ঘটানোর ফলে গ্রামটির চেহারা ও গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার অবস্থা অনেকটা বদলে গেছে ।
এঁকেবেঁকে পাহাড়ী পথ বেয়ে সংবাদদাতা ও পযর্টকরা গাড়ীতে করে সি থৌ চেই গ্রামে পৌঁছান । জানা গেছে ,এই গ্রামের চারশো বছরের ইতিহাস আছে । গোটা গ্রামের পাঁচশো আশিজনেরও বেশী অধিবাসীর মধ্যে প্রায় আশি শতাংশই পু ই জাতির লোক । গ্রামের মধ্যে ঢুকলে চোখে পড়ে সব বসতিই পাথরের তৈরী । গোটা গ্রামই একটি পাথরের রাজ্য । এই সময়ে একজন বুড়োর গানের আওয়াজ সংবাদদাতার মনোযোগ কাড়ে ।
গায়কের নাম লি ছিয়ান সেন । বয়স ছেষট্টি বছর । তিনি হচ্ছেন গ্রামের "প্রবীণ লি'র পুরাকীর্তি উদ্যানের" মালিক । একশো বগর্মিটারের বেশী জায়গা জুড়ে নিমির্ত এই পুরাকীর্তি উদ্যানে চারশো'রও বেশী পুরাকীর্তি প্রদশির্ত হচ্ছে । প্রবীণ লি বলেছেন ,
"এখানে আমাদের পু ই জাতির বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কৃতি,প্রধানত ঐতিহ্যিক আসবাবপত্র ,উত্পাদন হাতিয়ার ,সূচিকর্ম আর ঐতিহ্যিক পোশাক ও শিল্পকর্ম প্রদশির্ত হচ্ছে ।"
পুরাকীর্তি উদ্যান একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আঙিনায় অবস্থিত । প্রবীণ লি বলেছেন,এখানে বেড়াতে আসা অধিকাংশ লোক তার এই পুরাকীর্তি উদ্যান দেখতে আসেন । রোজ কমপক্ষে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশজন আর বেশীরপক্ষে শ'খানেক পযর্টকের সমাগম হয় এইখানে ।
পুরাকীর্তি উদ্যানে শিল্পকর্ম বিক্রিও হয় । টিকেটের আয় নিয়ে প্রবীণ লি'র মাসিক আয় হয় এক হাজার ইউয়ানেরও বেশী । তিনি বলেছেন , তার পরিবারের আয় গ্রামের মাঝারী পযার্য়ের ।
প্রবীণ লি'র বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসে সংবাদদাতা পাথরের সংকীর্ণ পথ বেয়ে সামনে এগোতেই হাঁস-মুর্গীর ডাক শুনতে পান । কিছুক্ষণ পর সংবাদদাতা আরেকটি পরিবারের দোতলা পাকা বাড়ীতে ঢোকেন । এই পরিবারের কর্তার নাম ফেন ছুয়েন ইউ । তিনি বিয়ের পরও বাবা-মা আর ছোটো ভাইয়ের সংগে থাকেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন , অতীতে গ্রামে কোনো পাকা সড়ক ছিলো না । তার পরিবার স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষুদে কৃষকের জীবনযাপন করতো । তখন গোটা পরিবার সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করেও মাত্র কোনোমতে অন্নের সমস্যা সমাধান করতে পারতো । গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে গ্রামে পযর্টনশিল্পের উন্নয়ন শুরু হয় এবং পাকা সড়ক নিমির্ত হয় । তার বাড়ীর অবস্থান মন্দ নয় , নদীর তীরে ,প্রাকৃতিক দৃশ্যও বেশ সুন্দর । তাই তারা পযর্টকদের অভ্যথর্না জানাতে শুরু করেন । গোড়ার দিকে পযর্টকদের শুধু চা সরবরাহ করতেন ,ছোটোখাটো ব্যবসা করতেন । ধীরে ধীরে সঞ্চয় বাড়ার ফলে তার পরিবার গ্রামের প্রথম রেস্তোরাঁ খোলে ।
প্রথমদিকে রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত চাল নিজ পরিবারের চাষ করা এবং শাকসব্জী নিজ বাড়ীর আঙিনায় উত্পাদিত । কিন্তু এখন অতিথিদের সংখ্যা বেড়েছে , তাদের অভ্যথর্না জানাতেই গোটা পরিবার ব্যস্ত , আর চাষাবাদের সময় নেই । তাই তারা অন্যান্য পরিবারের কাছ থেকে জ্বালানি কাঠ , চাল , তেল , লবণ ইত্যাদি কিনতে শুরু করেছেন । এখন চাষাবাদ না করলেও তার পরিবার রেস্তোরাঁ চালিয়ে প্রতি বছর দশ থেকে বিশ হাজার ইউয়ান উপাজর্ন করতে পারে ।
জানা গেছে , প্রত্যেক পযর্টক শুধু বিশ ইউয়ান খরচ করেই গ্রামবাসীদের পরিচালিত রেস্তোরাঁয় দুই বেলা পু ই জাতির স্বাদের সুন্দর সুন্দর খাবার খেতে পারেন ।
সমৃদ্ধ পযর্টনশিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে সি থৌ চেই গ্রামের অধিবাসীদের জীবন বছরের পর বছর আরো সচ্ছল হয়ে উঠছে । শুধু সি থৌ চেই নয় , তার আশেপাশের গ্রামগুলোর অধিবাসীদের অবস্থাও তথৈবচ । চেন সান গ্রামের দায়িত্বশীল ব্যক্তি লি লিয়াং পিন বলেছেন ,গ্রামবাসীদের শুধু আয়ই বাড়ে নি ,তাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে । এখন গ্রামের অধিকাংশ পরিবারে টেলিফোন ,টেলিভিশন ও কলের পানির ব্যবস্থা হয়েছে । মোবাইলফোন গ্রামবাসীদের অপরিহায্য টেলিযোগাযোগের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে । গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে ।
|