কারো কারো দুটি চোখ অন্ধ হলেও তাদের কেউ কেউ কখনো আলো হারায়নি। তাদের জীবন সব সময় আলোময়। কারন তাদের অন্তরের জানালা খুলে গেছে। যদিও কোনো কোনো লোক শ্রবন শক্তি হারিয়ে বধির হন, কিন্তু তারা অন্যান্যদের সংগে আদানপ্রদান করতে পারেন, কারন তারা ভালবাসা দিয়ে দুনিয়াকে অনুভব করেন।নির্বাহু মেয়ে লি চিহুয়া তাদের মধ্যে একজন ছোটো বেলায় লি চিহুয়া তার বাহু দুটো হারান। কিন্তু তিনি পা দিয়ে বিসুয় সৃষ্টি করেছেন।যদিও তার বাহুদুটো নেই, তবু পা দিয়ে অক্ষর লিখতে আর ছবি আঁকতে পারেন, এবং পা দিয়ে শিল্পিকলা ইনস্টিটিউটের দরজা খুলে দিয়েছেন।
১৯৮৪ সালে অন্তর্মগোলিয়ার এক গ্রামের গরিব বৃষক-পরিবারে লি চিহুয়ার জন্ম। তার মা একজন মনোরোগী, প্রত্যেক বছরের শরত্কালে বা শীতকালে তার মা একবার করে মনোরোগে আক্রান্ত হন। যখন লি চিহুয়ার বয়স একশ'দিন তখন তার মা আবার মনোরোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তার মাকে খুজে বের করার জন্যে লি চিহুয়ার বাবা ছোটো মেয়ে চিহুয়াকে বাড়িতে রেখে বাইরে যান। সেদিন মাত্র একশ দিন বয়সের চিহুয়া বিছানায় পা নেড়ে নেড়ে খেলছিলো। হঠাত্ পাশের জ্বলন্ত প্রদীপ পায়ে লেগে উল্টে যায়। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল। শেষ পর্যন্ত লি চিহুয়ার প্রান রক্ষা পেলেও সে তার দুটো হাত দিনের জন্যে হারাল। লি চিহুয়া ধীরেধীরে বড় হয়ে উঠে। ছোটো বয়সের চিহুয়া তখন হাত না থাকার অসুবিধা অনুভব করতে পারল না।
এ সম্পর্ক লি চিহুয়া বলেছেন, প্রথমে আমি মনে করি জন্ম থেকেই আমার হাত নেই, তাই ছোটো বন্ধুবান্ধবদের সংগে খেলার সময়ে আমি কোনো অসুবিধা অনুভব করতাম না। তারা যা করতে পারত আমি তা সবই করতে পারতাম, তাই আমার পক্ষে কোনো অসুবিধা ছিল না। পাঁচ ছয় বছর বয়সে লিচিহুয়া পা দিয়ে সেলাই করতে শিখেছে, পা দিয়ে অক্ষর লিখতে আর ছবি আঁকতে শিখেছে, লেপ-কম্বল ভাঁজ করতে শিখেছে আর রানা করতে শিখেছে। পরে ট্রাকটর চালাতেও শিখেছে। তিনি ন' বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্পন্ন করে শ্রেষ্ঠ ফল দিয়ে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন। "আমি সবচেয়ে সুখী" শিরোনামে তার রচনা তার থানায় প্রথম পুরষ্কার পায়।
আমি সবচেয়ে সুখী,
আমার আছে আমার ঊষ্ণ-হৃদয়, বাবা, মা আর ভাই বোন,
বাবা আমার মনের সুর্য,
মা একজন রোগী হলেও তার ভালবাসা বৃষ্টি আর শিশিরের মতো, মাঝে মধ্যে বিরতি হয়, তবে তার এই ভালবাসা আমার কাংখিত ভালবাসা।
আমার ভাই বোন আমার সংগে খেলতেন, এবং কখনো তারা আমাকে কষ্ট দেন নি।
সবারই দুটি বাহু আছে, আমারও ভিন্ন রকম বাহু-দুটো আছে, আমার সহপাঠীরা যা করতে পারে আমি তার সবই করতে পারি, আমি মাকে সব কাজে সাহায্য করতে পারি। আমি বাবকে রান্না করতে সাহায্য করতে পারি, আমি স্কিপিং অর্থাত্ রশি দিয়ে লাফাতে পারি, আমার হাত এতবেশি কাজ করতে পারে, আমি নিজেকে সবচাইতে সুখী বলে আমি মনে করি।
লি চিহুয়া বলেছেন, নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে থাকতে আমি যে বৃহত্তম উপকার পেয়েছি। তা হল আমি টিকে থাকতে শিখেছি, আমি বাথরুম ব্যবহার করতে শিখেছি। অনেক কাজ যদি আপনি নিজে চেষ্টা না করেন, তাহলে কোনোদিনই আপনি জানবেন না যে এ ব্যাপারে আপনি যোগ্য কিনা। আমি চেষ্টা করেছি এবং জেনেছি যে, আমি এ ব্যাপারে সক্ষম, আমি সফল হয়েছি। বাথরুম ব্যবহার করা স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে কোনো সমস্যাই নয়, কিন্তু নির্বাহু মেয়ে লি চিহুয়ার পক্ষে এটা একটা বিরাট সমস্যা । কিন্তু এই সমস্যা তার নিজের প্রচেষ্টায় সমাধান হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুলে লি চিহুয়া লেপ-কম্বল ভাঁজ করতেও শিখে নিয়েছে।
লি চিহুয়া বলেছেন, একজনের বড় হওয়ার জন্যে যে প্রয়োজনীয় পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়, নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের জীবনে আমি তা অতিক্রম করেছি।
১৯৮৪ সালে লি চিহুয়া নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল পাশ করে, শারিরিক অবস্থার কারনে সে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরিক্ষায় অংশ নেয় নি। এই বছরের শরত্কালে লি চিহুয়ার মা আবার রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ছেড়ে আর ফিরে আসেন নি। কিছু দিন পর এক বরফের নদীতে তার মার লাশ পাওয়া গেলো। তার মা চিরদিনের জন্যে এই দুনিয়া ত্যাগ করেছেন।
লি চিহুয়া একজন ভাল মেয়ে, বাবামাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন তিনি । তিনি মনে করেন যে তার অসাবধান তার জন্যে মার আকস্মিক ঘটনা ঘটে। তিনি বলেছেন, আমি মার কাছে ঋনি। তখন আমি খুব ছোটো ছিলাম, আমি মাকে মূল্যায়ন করতে পরিনি। মেয়ে হিসেবে আমার করনীয় কর্তব্য পালন করতে পারিনি আমি। লি চিহুয়া নিজের দুই পা দিয়ে ন' বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্পন্ন করেছে, নিজের প্রচেষ্টায় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সব বিষয় শিখে নিয়েছেন। আবার এই পা দুটো দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা খুলে দিয়েছেন।
লি চিহুয়া আমার মনে এক স্বপ্ন আছে শিরোনামে গানটি গেয়েছেন।
অবশেষে লি চিহুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তাবায়িত হয়েছে।
লি চিহুয়া হাসিখুশী মেয়ে। কান্নার সময়েও হাসি তার মুখে লেগে থাকে। তিনি বলেছেন, আমার এক জোড়া হাত আছে, অনান্যদের তুলনায় এক জোড়া ভিন্ন হাত আছে, অন্যান্যরা যা করতে পারে আমি তা সবই করতে পারি, মাকে কিছু করতে সাহায্য করতে পারি, বাবাকে রান্না সাহায্য করতে পারি, আমি বন্ধুবান্ধবদের সংগে খেলাধুলা করতে পারি, আমার হাত এতবেশি কাজ করতে সক্ষম, আমি সবচেয়ে সুখী।
|