v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-08 11:03:23    
চীনের মোরগ রাশি বছর

cri

    গত ৯ই ফেব্রুয়ারী ছিল চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন , চীনের বসন্ত উত্সব আসলে চীনের চান্দ্র পঞ্জিকার নববর্ষ। এই দিন থেকে চীন মোরগ বছরে প্রবেশ করেছে । চীনের চান্দ্রিক পঞ্জিকায় চীনাদের জন্মের বারোটি রাশি বছরকে প্রতিনিধিত্বকারী বারোটি জন্তু হলো যথাক্রমে ইদুঁর , গরু , বাঘ , খরগোস , ড্রাগন , সাপ , ঘোড়া , ছাগল , বানর , মোরগ , কুকুর ও শুওর । এই বারোটি জন্তুর রাশি বছর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে । বারো বছর প্রতিটি রাশি বছর একবার করে ফিরে আসে । যেমন আমি মোরগ রাশি বছরে জন্ম নিয়েছি , আমার মেয়ে ইদুর রাশি বছরে জন্ম নিয়েছে আর আমার স্বামী ঘোড়া রাশি বছরে জন্ম নিয়েছেন । এই বারোটি জন্তুর রাশি বছরের বিন্যাস সম্বন্ধে নানা ধরণের ব্যাখ্যা আছে । কোনো কোনো লোক বলেন এটা চীনের সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীদের জন্তু দিয়ে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের ক্রম অনুসারে বিন্যস্ত করা হয় , কোনো কোনো লোক বলেন ,এই বারোটি রাশি বছরের নিয়ম ভারত থেকে এসেছে । আরেকটি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে , এই বারোটি জীবজন্তুর সক্রিয়তা অনুসারে নির্বাচন ও তাদের বিন্যাস স্থির করা হয় । চীনের ইতিহাসে খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর ইউয়ান রাজবংশ থেকে একদিন একরাতের ২৪ ঘন্টাকে বারো ' শিছেন ' -এ ভাগ করা হয় । রাত ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত সময়পর্ব ইদুর সবচেয়ে  সক্রিয় , কাজেই ইদুরকে বারোটি জন্তুর প্রথম স্থানে রাখা হয়েছে । সন্ধ্যা পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত সময় মোরগ মাঠ থেকে ফিরে আসে ,কাজেই মোরগকে বারোটি জন্তুর মধ্যে দশম স্থান দেয়া হয়েছে ।

    বারোটি রাশি বছরের মধ্যে যদিও মোরগ দশম স্থান অধিকার করে , তবে ভোর বেলা মোরগ অন্য জন্তুর চেয়ে আগে জাগে এবং মোরগের ডাক আমাদের জন্য একটি নতুন দিন নিয়ে আসে , তাই মোরগের ডাক এক নতুন সুচনার প্রতীক ।

    প্রাচীন চীনের অধিবাসীরা মোরগকে খুব আদর করতেন । তাদের মতে মোরগের পাঁচটি গুন আছে । মোরগের মাথায় লাল ঝুঁটি আছে বলে দেখতে টুপি পরা পন্ডিতের মতো , মোরগ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহসী , কিছু খাবার দেখে অন্য মোরগদের ডাকে বলে মোরগ খুব দয়ালু জন্তু ,তা ছাড়া মোরগ প্রতিদিন সময়োচিতভাবে মানুষকে ঘুম থেকে জাগতে সাহায্য করে , এ ক্ষেত্রে তারা কোনো দিন ভুল করে না ।তাই মোরগ এক দায়িত্ববোধ সম্পন্ন জন্তু । যুগ যুগ ধরে চীনের বিভিন্ন রাজবংশের কবি ও সাহিত্যিকরা তাদের রচনায় মোরগের প্রশংসা করেছেন। চীনের প্রয়াত নেতা মাও সে তুং নয়া চীন প্রতিষ্ঠার সময় তার কবিতায় লিখেছিলেনঃ মোরগের জোরালোডাক চীনা জনগনের জন্য এনেছে মুক্তি ও স্বাধীনতা। এই কবিতার লাইন চীনের আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই জানেন ।

    মোরগ সম্বন্ধে একটি বিখ্যাত কাহিনী আছে । কাহিনীর নামঃ মোরগের ডাকে অসি চর্চা । চিন রাজবংশের আমলে চুতি ও লিউ কুন নামক দুজন যুবক ছিল ,তারা দুজন এক ঘরে থাকতেন , একসাথে পড়াশুনা করতেন এবং পরস্পরকে অনুপ্রেরনা দিতেন । একদিন ভোর বেলায় চু তি স্বপ্ন দেখার সময় হঠাত মোরগের ডাক শুনেন , তিনি মুহুর্তের মধ্যে জেগে উঠে লিউ কুনকে বলেন , তুমি শোনো , মোরগ গান গাইছে , এটা আমাদের ডাকছে , আমাদের তাড়াতাড়ি উঠতে হবে । তারা দুজন উঠে অন্ধকারে উঠানে অসি চর্চা শুরু করেন । সেদিন থেকে তারা প্রতি দিন মোরগের ডাক শুনেই উঠেন , সকাল সাত –আটটা পর্যন্ত অসি চর্চা করেন , পরবর্তীকালে চু তি চিন রাজবংশের এক বিখ্যাত বীর হলেন । আরেকটি উপকথায় বলা হয়েছে , চিন রাজবংশের একজন কর্মচারী সুং ছু চুন একটি বাজার থেকে একটি মোরগ কিনে বাসায় নিয়ে আসেন , তিনি মোরগটিকে খুব আদর করেন , তাকে ভালো ভালো খাবার দেন এবং মোরগটিকে এক খাঁচায় রেখে জানালার সামনে ঝুলিয়ে দেন । একদিন এই মোরগ হঠাত এই কর্মচারীর সংগে মানুষের কথা দিয়ে তার সংগে আলাপ করতে শুরু করে। সুং ছু চুন অবাক হলেন , কিন্তু মোরগটি বলতে থাকে , সেই দিন থেকে মোরগটি সারা দিন তার মালিককে সুন্দর সুন্দর কথা বলে , তার মালিক মোরগের কথা থেকে অনেক কিছু শিখেন , শেষে তার পদোন্নতি হল ।

    প্রাচীন চীনে একটি উপকথায় বলা হয়েছে , পূর্ব সাগর নামে এক জায়গায় এক পাহাড় আছে , পাহাড়ের একটি বড় পিচ গাছে একটি সর্গীয় মোরগ থাকে । প্রতিদিন সুর্য উঠার সংগে সংগে স্বর্গীয় মোরগ ডাকতে শুরু করে , তার ডাক শুনে আশেপাশের মোরগরাও একসংগে ডাকে । আশেপাশের সব ভুত সর্গীয় মোরগের ডাক শুনে ভয়ে পালিয়ে যায় , কেননা তারা যদি পালিয়ে না যায় , তাহলে স্বর্গীয় দেবতা তাদের ধরে বাঘকে খেতে দেন । তাই প্রাচীনকাল থেকেই চীনারা মনে করেন মোরগ ভুত তাড়িয়ে দিতে পারে এবং তার ডাক মানুষকে এক নতুন দিনে নিয়ে যায় । তাই চীনারা মোরগকে খুব আদর করেন , মোরগ দেখতে খুব সুন্দর , চীনা ভাষায় মোরগের উচ্চারণ চি , এই উচ্চারণ কল্যানের উচ্চারণ একই , মোরগের ঝুঁটির উচ্চারণ কুয়ান , এই উচ্চারণ বড় অফিসারের সামিল বলে লোকেরা মোরগ ও মোরগ-ফুলের ছবি বাড়িতে এটেঁ দেন , এতে চীনাদের মঙ্গল ও পদোন্নতির কামনা ও আকাংখা প্রতিফলিত হয়েছে। চীনে মোরগ সম্পর্কিত উপকথা ও প্রবাদ আরো আছে , চীনারা মোরগকে পছন্দ করেন এবং মোরগকে সোনাগী মোরগ ডাকেন । মজার ব্যাপার হলো মানচিত্রে চীনের ভূভাগের আকার ঠিক যেন একটি মোরগ । এ বছর চীনের মোরগ রাশির বছর , মোরগ বছরের প্রারম্ভে আশা করি সোনালী মোরগের ডাকে পৃথিবীর জনগণ প্রানশক্তি, আনন্দ ও শান্তিতে সুখী জীবন যাপন করতে পারেন।