সিনচিয়াং প্রদেশে অনেকগুলো ছোট ছোট সংখ্যালঘু জাতির বাস। এরা একত্রে বসবাস না করে বিচ্ছিন্নভাবে বাস করে। যে কারণে এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করা মোটেও সহজ নয়। যার ফলে এই প্রদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চীনের অন্যান্য প্রদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে পশ্চাত্গামী। কিন্তু চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা উন্নয়ন ব্যবস্থার আওতায় গত কয়েক বছরে সিন চিয়াং প্রদেশের সাম্প্রতিক শিক্ষা ব্যবস্থঅর আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তন শুধু শহর কেন্দ্রীক নয়, তা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে গ্রামাঞ্চলেও। এখন দেখা যায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কৃষক, পশুপালক এদের ছেলে মেয়েরাও স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে।
এখন আপনাদের বলবো শার্চিয়াক শহরের একটি মাধ্যমিক স্কুলে হাসাক জাতির ছাত্রছাত্রীরা তাদের পাঠ্যবইয়ের পড়া কিভাবে পড়ে সে কথা।
শার্চিয়াক মাধ্যমিক স্কুল সিন চিয়াংএ-এর প্রদেশের রাজধারী উলুমুচি শহরের উপকণ্ঠে পশুপালন এলাকায় অবস্থিত। সেদিনও এই স্কুলটির খুবই জরাজীর্ণ অনস্থা ছিলো। ভাঙ্গাচুরা একটি ভবন, দাতে ভাঙ্গাচুরা কয়েকটি কক্ষ। এখন সেখানে তৈরি হয়েছে আধুনিক অনেকগুলো ভবন। শিক্ষা ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রদের খাবার ঘর সহ শরীর চর্চা কেন্দ্র। স্কুলটি এখন মূলত আবাসিক স্কুলে পরিণত হয়েছে। হাসাক সংখ্যালঘু জাতির একজন ছাত্র তাল্যাকক্সি আমাদের জানায়ঃ "তিন বছর ধরে আমি এই স্কুলে পড়ালেখা করছি। এই স্কুলে আসার শুরুতে কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘর ভাড়া করে আমাকে থাকতে হতো বাইরে। সেখানে রান্না করেও খেতে হতো। কিন্তু এ বছর আমাদের স্কুলের নতুন ভবন, নতুন ছাত্রা বাস এবং নতুন খাবার ঘর তৈরী হওয়ার ফলে আমি এখন থাকছি স্কুলের ছাত্র বাসে। খাই স্কুলের ডাইনিং হলে। আমাদের নতুন শ্রেণী কক্ষ অনেক বড় আর সুন্দর। আমরা ভালোভাবে এখন শিক্ষকের পাঠদান শুনতে পাই। কিন্তু সবচেয়ে আনন্দের কথা হলো এখানে আমাদের সবকিছু অবৈতনিক। আমি দারুণ খুশি।
সিন চিয়াং প্রদেশ দূর্গম এলাকা বলে এখানকার সংখ্যালঘু জাতিগুলো একদিকে যেমন বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করত, অন্য দিকে এখানকার যা তায়াত ব্যবস্থা ছিলো জটিল। শিক্ষকেরা ঘোড়ায় চড়ে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের বই পৌঁছে দিতো এবং পাঠদান করে আসতো। কিন্তু গত শতাব্দীর নব্বই দশকে এ ব্যবস্থার প্রভূত পরিবর্তন হয়। সংখ্যালঘু জাতির কৃষক আর পশুপালনকারীদের একত্র করে একই গ্রামে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়। এবং গ্রামে গ্রামে স্কুল, কলেজ নির্মাণ করা হয়। আগের মতো এখন আর শিক্ষকদের ঘোড়ায় চড়ে শিক্ষার্তিদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে পাঠদান করতে হয় না। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ঘোড়ায় চড়ে শিক্ষাদান ব্যবস্থার বিলুপ হয়েছে।
এক পরিসংখ্যান জানা গেছে, নতুন শতাব্দীর শুরু থেকে ও সমস্ত এলাকার অনুন্নত স্কুলগুলোকে ঢেলে সাজাতে আবাসিক স্কুল নির্মাণ করতে এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে চীন সরকার প্রায় একশ কোটি ইউয়ান বরাদ্ধ দিয়েছে। নয় বাত্সরিক এই শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দু'টি দিক রয়েছে: এক, শিক্ষা ব্যবস্থা অবৈতনিক এবং প্রত্যক শিক্ষার্থীকে নয় বছর পাঠ গ্রহণ করতে হবে। দুই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলো নির্মাণ করতে হবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় আট হাজার সাতশটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ হয়েছে। এ সমস্ত স্কুলে প্রায় ৪৩ লক্ষ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। কথা প্রসংগে সিন চিয়াং প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা নুর পাইকেলি আমাদের জানানঃ শিক্ষাঘাতে কেন্দ্রী সরকারের বরাদ্ধ এবং স্থানীয় সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতা এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্রমাগত উন্নত করছে। গত কয়েক বছরে এখনকার তুণমূল পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থার এতটাই উন্নতি সাধিত হয়েছে যা রীতিমত বিষ্ময়ের।
পুরো চীন জুড়ে রয়েছে ৫৬টি জাতি। এর মধ্যে সিংচিয়াং-এর প্রদেশেই বাস করেই ৪৭টি সংখ্যালঘু জাতি। সিন চিয়াং-এর সংখ্যালঘু জাতির সার্বিক উন্নয়নের সংগে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দু'হাজার সাল থেকে এ প্রদেশের ছাত্রছাত্রীদেরকে তাদের নিজস্ব ভাষার পাশপাশী চীনাভাষায় পাঠদান করা হয়। যার ফলে সংখ্যালঘু জাতির শিক্ষা মান অনেক উন্নত হয়েছে। এ বছর থেকে সিনচিয়াং প্রদেশের রাজধানী উলুমুচি শহরে সংখ্যালঘু জাতি আর হান জাতির একত্রে পাঠদান ব্যবস্থা চালু হয়েছে। উলুমুচি শহরের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক লি চিয়েন শেং জানানঃ সিন চিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতির মানুষেরা চাইত তাদের ছেলেমেয়েরা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করুক। তাদের সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করত আমরা নিরীক্ষামূলকভাবে সংখ্যালঘু জাতি ও হান জাতি ছাত্রছাত্রীদের একত্রিত করে তাদের দৈত্ব ভাষায় শিক্ষাদান ব্যবস্থা চালু করেছি। এর ফলে দেখা গেছে, অধিত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীরা আমাদের এই নতুন ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থায় লেখাপড়া করতে আগ্রহী। পাশাপাশী চারপাশের স্কুগুলো আমাদের কাছে আবেদন করতে শুরু করেছে, তাদেরকেও যেন এ শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
তৃণমূল পর্যায়ের এ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাব উন্নত পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও প্রভাব ফেলেছে । উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল শেষ করার পর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হবার জন্য পুরো চীন জুড়ে একটি ভর্তি নির্বাচনী পরিক্ষা হয়ে থাকে। এ বছর সে পরিক্ষায় অনেক ভালো করেছে সিন চিয়াং-এর ছাত্রছাত্রীরা। এই প্রদেশের প্রায় ৩২০০জন ছাত্রছাত্রী শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি সুযোগ পেয়েছে।
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার সময়ে, সিনচিয়াং প্রদেশে মাত্র একটি ছোট আকারের বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো আর সেখানে লেখাপড়া করতো ৩ শো জন ছাত্রছাত্রী। এখন সেই সিন চিয়াং প্রদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উন্নত পর্যায়ে ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রী এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করছে।
নয় বাত্সরিক এই শিক্ষা পরিকল্পনায় আশা করা হচ্ছে ২০০৭ সালের মধ্যে সিন চিয়াং প্রদেশের সব মানুষ শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা পাবে এবং পশ্চিস চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এদের দক্ষ মেধাকে কাজ লাগাতে পারবে। সিন চিয়াং প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের ভাইস-পরিচালক লিই হুয়া এ বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেনঃ "সিন চিয়াং-এর শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত উন্নত হচ্ছে। আমরা একটি ঐতিহাসিক সুযোগের সম্মুখীণ। আমরা বিশ্বাস করি সিনচিয়াং-এর শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশিত হতেই হবে।
|