v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-07 13:03:30    
সান সিং তোই সভ্যতা বিশ্বে আলোড়ন

cri

    চীনের বিস্তীণ ভূভাগে প্রাচীনকালে একই সময় অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজা বিদ্যমান ছিল । বর্তমানের চীনের সিছুয়ান প্রদেশ ছিল প্রাচীন সু রাজ্যাএর ভূভাগ । গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে আবিষ্কৃত সান সিং তোই সভ্যতা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ।

    সিছুয়ান প্রদেশের কুয়াংহান শহরের ভেতরে অবস্থিত সান সিং তোই ধ্বংসাবশেষ হচ্ছে পাঁচহাজার থেকে তিন হাজার বছর আগেকার প্রাচীন সু রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ । ১৯২৯ সালের বসন্তকালে একজন স্থানীয় কৃষক ক্ষেতে চাষাবাদ করার সময়ে আকস্মিকভাবে একটি সূক্ষ্ম সুন্দর জোডপাথরের তৈরী বস্তু আবিষ্কার করেন । এটা বিশ্ববাসীর ব্যাপক দৃষ্টি কাড়ে । ১৯৮৬ সালে প্রত্নতাত্ত্বিককর্মীরা দুটো বিরাট ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেন এবং এক হাজারেরও বেশী চমত্কার মূল্যবান পুরাকীর্তি উদ্ধার করেন । এটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হবে । এর সংগে সংগে মানুষের মনে অনেক ঐতিহাসিক রহস্যও জাগে ।

    সান সিং তোই সংস্কৃতির একটি রহস্য হচ্ছে এখানে উদ্ধারকৃত বহু ব্রোঞ্জনির্মিত মুখোশ । এর আগে মধ্যচীনের হোনান প্রদেশে অনেক সূক্ষ্ম সুন্দর ব্রোঞ্জিপাত্র উদ্ধার করা হয়েছিল । কিন্তু ব্রঞ্জের তৈরী কোনো মুখোশ উদ্ধার করা হয় নি । সান সিং তোই ধ্বংসাবশেষে উদ্ধারকৃত প্রায় যাবতীয় ব্রঞ্জনির্মিত মুখোশের ভূ মোটা , চোখ বড় , নাসিকা উঁচু এবং মুখ চোপ্টা । প্রায় যাবতীয় মুখোশেরই চোয়াল নেই , ভংগীটা হাসার মতোও নয় , বা রাগার মতোও নয় । এই সব মুখোশৈর দুটো কানে একটি করে ছোট ছিদ্র থাকে । আধুনিককালের স্থানীয় অধিবাসীদের মুখের চেহারার সংগে এই সব মুখোশের মুখের চেহারার অনেকটা মিল আছে । এই সব মুখোশ থেকে কি বোবা যায় তা নিয়ে অনেক চিন্তা করেও প্রত্নতত্ত্ববিদরা তার উত্তর পান নি ।

    সান সিং তোই ধ্বংসাবশেষ থেকে ব্রঞ্জনির্মিত একটি ছিপছিপে ও লম্বাকৃতির মানুষের মূর্তিও পাওয়া গিয়েছে । তার চেহারা ঠিক ব্রঞ্জনির্মিত মুখোশগুলোর মতো । তার পরনে সোয়ালোপাখির লেজের মতো একটি লম্বা ঢিলা পোশাক । তার পা নগ্ন । একটি উঁচু পাদভূমির উপর তিনি দন্ডায়মান । মূর্তির উচ্চতা একশো সত্তর সেন্টিমিটারের মতো । এটি হচ্ছে এপর্যন্ত সংরক্ষিত বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্রঞ্জনির্মিত মূর্তি । মূর্তির একহাত উর্ধে আর একহাত নিচে , কোনো এটা জিনিস ধরবার মতো । উদ্ধারের সময়ে তার হাতে কোনো জিনিস আবিষ্কৃত হয় নি । বিশেষজ্ঞরা বলেছেন , মূর্তিটির ভাবভংগী দেখে মনে হয় সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা জাদুকরের মূর্তি । যজ্ঞানুষ্ঠানে তার আবির্ভাবের কথা ।

           মুখোশ ও মানুষের মূর্তি ছাড়াও সান সিং তোই ধ্বংসাবশেষ থেকে সোনার লাঠি , ব্রঞ্জনির্মিত পবিত্র বৃক্ষ , হাতির দাঁত ইত্যাদিও উদ্ধার করা হয়েছে । সোনার লাঠির দৈর্ঘ্য এক দশমিক চার দুই মিটার । এর উপরে অনেক সুন্দর ও রহস্যময় চিত্র খোদিত আছে । মুখোমুখী দুটো পাখি , পিঠাপিঠি দুটো মাছ , মাছের মাথা ও পাখির গলদেশে তীরের মতো একটি জিনিস এবং একই সময় রহস্যময় হাসি-ভরা একটি মানুষের মাথার একটি ছবি । ব্রঞ্জনির্মিত পবিত্র বৃক্ষও মানুষকে অবাক কবে । মোট তিন স্তরে নয়টি ডাল বিশিষ্ট বৃক্ষের উচ্চতা প্রায় চার মিটার । প্রতিটি ডালের উপর একটি করে পাখি দাঁড়িয়ে আছে । গবেষণা করে জানা গেছে , এটা সাধারণ কোনো পাখি নয় , বরং সূর্যের প্রতিনিধিত্বকারী একধরণের পবিত্র পাখি ।

         গবেষণা করে জানা গেছে , সান সিং তোই ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধারকৃত বিপুল ব্রঞ্জনির্মিত দ্রব্যের যেমন স্পষ্ট প্রাচীন সু রাজ্যের সংস্কৃতির চিহ্ন , তেমনি পশ্চিম এশিয়া ও অন্যান্য এলাকার সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য আছে । বিশেষ করে বিশ্বের বিখ্যাত মাইয়া সংস্কৃতি ও প্রাচীন মিসরের সংস্কৃতির সংগে এই সব ব্রঞ্জনির্মিত মূর্তি ও সোনার লাঠি ইত্যাদি দ্রব্যের বেশ সাদৃশ্য আছে । এগুলো স্পষ্টতঃই চীনের হুয়াংহো নদীর মধ্য ও নিমন্তববাহিকা অনচলের ব্রঞ্জ সংস্কৃতি থেকে আলাদা । তাছাড়া যজ্ঞক্ষেত্র থেকে উদ্ধারকৃত সত্তরটি হাতির দাঁত থেকে দেখা গেছে , তখন আশেপাশের রাজ্যগুরৌর সংগে এমন কি আরো দূরের জায়গার সংগে সান সিং তোই'র প্রাচীন সু রাজ্যের পণ্য আদানপ্রাদান শুরু হয়েছে । সমকালীন ইউরোপে উদ্ধারকৃত পানপাত্রের সংগে কিছু মৃন্ময় পানপাত্রের সাদৃশ্য থেকে অনুমান করা যায় , সান সিং তোই'র ব্রঞ্জনির্মিত দ্রব্যের উপর সম্ভবতঃ পশ্চিম এশিয়া , নিকট প্রাচ্য , ইউরোপ ইত্যাদি জায়গার সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছিল । সান সিং তোই পুরানির্দশনগুলো চীনের প্রতন্তত্ত্ব নন্দনতত্ত্ব , ইতিহাসবিদ্যা ইত্যঅদি ক্ষেত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা পূরণ করেছে ।