পশ্চিম পেইচিংয়ে অবস্থিত গ্রীষ্মপ্রাসাদের কাছাকাছি একটি নতুন কলেজ গড়ে উঠেছে। তার নাম " কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডার-প্রশিক্ষণ কলেজ", যা চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনের সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডার নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ নীতি চীনের সংখ্যালঘু জাতি নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা একদিকে চীনের রাজনীতির ক্ষেত্রে নানা জাতির সমযোগ্যতা প্রতিফলিত করে, অন্যদিকে জাতীয় রাজনৈতিক জীবনের গণতান্ত্রায়নের প্রতীক।
শেন মিংকুও কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডার প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন কোরীয়া জাতির ক্যাডার। তিনি উত্তরপূর্ব চীনের কোরীয়া জাতির বাসস্থল থেকে এসেছেন। তিনি মনে করেন, সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ নীতি যেমন সংখ্যালঘু জাতির কর্মকর্তাদের গুণ বিকশিত করে, তেমনি সংখ্যালঘু জাতির বাসস্থলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে।
এ নীতি অনেক ভালো, যাতে নানা জাতির সমযোগ্যতা দেখা যায়। প্রশিক্ষণের পর আমি শহরে ফিরে এসেছি। আমার কর্মের সামথ্য দ্রুত উন্নত হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটা দেশের সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডার প্রশিক্ষণ নীতির সংগে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
শেন মিংকুও-এর মতো চীনের বিশেষ সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডার প্রশিক্ষণ নীতির কল্যাণে চীনে মোট ১৭ লক্ষ সংখ্যালঘু জাতির মানুষ শহরের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ।
গত শতাব্দী পঞ্চাশ দশকে চীনে সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। চীনের সংখ্যালঘু জাতির শিক্ষা গবেষণা সংস্থার পরিচালক থেং সিং বলেছেন, " গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের সরকার সংখ্যালঘু জাতির কলেজ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫০ বছরের উন্নয়নের ফলে এই নীতি একটি সুসংবদ্ধ নিয়মে গড়ে উঠেছে। সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ সরকারী বরাদ্দ থাকে।
বর্তমান চীনে সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের ও প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের জন্যে একটি সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। একশোটি বিশেষ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , যাতে সংখ্যালঘু জাতি এলাকায় দলে দলে ক্যাডার আর নানা রকমের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগতকাজে নিয়োজিত লোকেদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। তাঁরা সংখ্যালঘু জাতি এলাকার অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখে থাকেন।
চীনে সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দুই প্রকারের। এক: স্বল্প-মেয়াদী প্রশিক্ষণ, দুই: দীর্ঘকালীন যোগ্যতা অর্জনের শিক্ষা। চীনের কেন্দ্রীয় জাতিতাত্ত্বিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডার প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক চিন চিংচেন স্বল্প-মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়ে বলেছেন, "স্বল্প-মেয়াদী প্রশিক্ষণ সংখ্যালঘু জাতির শিল্পকলা, বিভাগে কর্মরত ক্যাডারদের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য চালু হয়। এ রকম প্রশিক্ষণে যে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তা বিশেষ এক সমস্যারস মাধানের উপায় উদ্ভাবন করে বলে এ রকম প্রশিক্ষণ দ্রুত সফল হয়। এ রকম প্রশিক্ষণ সাধারণত তিন মাসের। এ সব কারণে প্রশিক্ষণটি খুব জনপ্রিয়।"
একটি উদাহরণ দিচ্ছি, সম্প্রতি চীনের কেন্দ্রীয় জাতিতাত্ত্বিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ বিভাগগের আয়োজিত একটি প্রশিক্ষণে সিনচিয়াং উইগুর এলাকার জন্য আইন-জ্ঞান বিষয়ে ক্যাডারদের শিক্ষাদান করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এ ধরণের প্রশিক্ষণকে স্বাগত জানিয়েছে।
ক্যাডাররা নিজ জাতিকে গভীরভাবে ভালোবাসে, নিজ জাতির ইতিহাস, বর্তমান পরিস্থিতি ও বৈশিষ্ট্য ভালো জানে, নিজ জাতির ভাষা-অক্ষর, রীতিনীতি, ধর্ম-বিশ্বাস আয়ত্ত করে বলে নিজ শহরের অর্থনীতি, সংস্কৃতির বিকাশে তারা ক্ষমতাবান ও উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করেন।
সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের এই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চরিত্রগুলো অনুযায়ী সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও অব্যাহতভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, যাতে সে এলাকার উন্নয়নের চাহিদার সংগে খাপ খাওয়ানো যায়। চীনের কেন্দ্রীয় জাতিতাত্ত্বিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক চিন চিংচেন বলেছেন, "বর্তমানে আমরা যে কোর্সের আয়োজন করেছি, তা সবই সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের চাহিদা মোতাবেক। যেমন বৈদেশিক ভাষা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কম্পিউটার ইত্যাদি। আমরা এ রকম শিক্ষাদানকে খুব গুরুত্ব দিই এবং শিক্ষাদানের মাধ্যমে সাধারণ জ্ঞান ছড়িয়ে পড়েছে বলে তা শিক্ষার্থীদের মাঝে সমাদৃত হয়েছে।"
স্কুলের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া, সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের রাজনৈতিক ও পেশাগত মান উন্নত করার জন্য চীন সরকার আরও অনেক ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে। যেমন তাদেরকে উন্নতঅর্থনৈতিক এলাকায় প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো, সংখ্যালঘু জাতি এবং উপকূলীয় এলাকা ও উন্নত এলাকার ক্যাডারদের মধ্যে আদান-প্রদানের নীতি প্রণয়ন করা ইত্যাদি।
চীনে সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণনীতি সংখ্যালঘু জাতি নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাকে সুসংবদ্ধ করার জন্য আমাদের দেশে বিশেষ আইন আছে। চীনের " সাধারণ বিধান" ও সংখ্যালঘু জাতির স্বায়ত্ত শাসন বিধানে" সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের ও নানা রকমের বৈজ্ঞানিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নির্ধারিত আছে। যেমন চীন সরকার সরকারী কর্মীদের নিয়োগের সময়ে কয়েকটি নিদিষ্ট নম্বর সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারের জন্য রেখে দেয়। সংখ্যালঘু জাতির স্বায়ত্ব শাসিত এলাকার আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নিজের ইচ্ছে মতো সরকারী কর্মীদের নিয়োগ করতে।
৫০ বছর ধরে বিকশিত হওয়ার পর চীনের সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডারদের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। তাঁরা স্থানীয় অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন ও সমাজের স্থিতিশীলতায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখছেন।
|