রেন পি শি একজন মহান মার্কসবাদী , শ্রেষ্ঠ সর্বহারা বিপ্লবী ,রাজনীতিবিদ ও সাংগঠনিক , তিনি ছিলেন মাও শে তুঙয়ের নেতৃত্বাধীন চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির প্রথম প্রজন্মেরনেতৃগোষ্ঠীর সদস্য।
রেন পি শির আসল নাম ছিল রেন ফেই কুও , ১৯০৪ সালের ৩০শে এপ্রিল হুনান প্রদেশের সিয়ান ইনে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ১৯২০ সালের আগষ্ট মাসে চীনের সমাজবাদী যুব লীগে যোগ দেন এবং ১৯২২ সালের প্রথম দিকে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দেন । ১৯২৫ সালের জুলাই মাসে চীনের যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন , ১৯২৭ সালের মে মাসে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন । চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি ও কোমিনটাংয়ের সহযোগিতা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯২৭ সালের ৭ই আগষ্ট রেন পি শি হানখৌতে অনুষ্ঠিত চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরী অধিবেশনে অংশ নেন । অধিবেশনে তিনি সক্রিয়ভাবে ভূমি বিপ্লবের প্রস্তাব পেশ করেন এবং পার্টির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন । ১৯২৮ সালে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন ,১৯৩১ সালে পার্টির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসের চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৫ সালের নভেম্বর মাসে তিনি হোলুনের সংগে লাল ফৌজের দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ রেজিম্যান্ট নিয়ে লং মার্চে অংশ নেন , লং মার্চের সময় রেন পি শি দৃঢভাবে মাও সে তুঙয়ের নেতৃত্বাধীন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিকে সমর্থন করেন , চান কো থাওয়ের বিছিন্নতাবাদী তত্পরতার বিরোধীতা করেন এবং লাল ফৌজের তিনটে প্রধান শক্তির সাফল্যজনক মিলনের প্রচেষ্টা চালান । জাপ- আক্রমন বিরোধী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রেন পি শি চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের উত্তর-চীন শাখা কমিটির সদস্য , আট রুট বাহিনীর রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান হন , তিনি চু তে ও ফেন তে হুয়াই প্রমুখের সংগে আট রুট বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে সানসি প্রদেশের সম্মুখ ফ্রন্টে জাপ- আক্রমণ প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে রেন পি শি চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে মস্কো গিয়ে কমিনিষ্ট আন্তর্জাতিকের কাছে চীনের জাপ-আক্রমণ বিরোধী যুদ্ধের পরিস্থিতি ও চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কর্তব্য ব্যাখ্যা করেন , জাপ-আক্রমণ বিরোধী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন এবং কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিকের সমঝোতা ও সমর্থন পান । ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে রেন পি শি দেশে ফিরে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীতে কাজ করেন । ১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হিসেবে পার্টির শুদ্ধিকরণ অভিযান ও উত্পাদন আন্দোলনে মাও সে তুঙকে সাহায্য করেন এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রদত্ত দায়িত্বে ' কয়েকটি ঐতিহাসিক সমস্যা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত' রচনার কাজ পরিচালনা করেন । ১৯৪৩ সালের মার্চ মাসে রেন পি শি ,মাও সে তুঙ ও লিউ শাও চির সংগে মাও সে তুঙয়ের নেতৃত্বাধীন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলী গঠন করেন । ১৯৪৫ সালে পার্টির সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে রেন পি শি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও সম্পাদক মন্ডলীর সম্পাদক নির্বাচিত হন । ১৯৪৬ সালের পর রেন পি শি মাও সে তুঙ ও চৌ এন লাইয়ের সংগে কাজ করেন , গোটা দেশের মুক্তি যুদ্ধ পরিচালনায় মাও সে তুঙকে সাহায্য করেন , পার্টির জমি সম্পর্কিত নীতি প্রণয়নকরেন এবং ভূমি সংস্কার অভিযান পরিচালনা করেন । ১৯৪৯ সালের প্রথম দিকে চীনের নতুন গণতান্ত্রিক যুব লীগ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরিচালনার কাজ করেন এবং জাতীয় যুব লীগের অবৈতনিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ।
রেন পি শি তার সারা জীবনের প্রতিটি কাজে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন না । তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ হলেও কাজ বন্ধ করেন না । অতিরিক্ত ক্লান্তির দরুণ রেন পি শি গুরুতরভাবে রোগাক্রান্ত হন , ১৯৫০ সালের ২৭শে অক্টোবর তিনি পেইচিংয়ে মৃত্যুবরণ করেন , মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৪৬ বছর । কমরেড ইয়ে চিয়েন ইং রেন পি শির অবদানের উপযুক্ত মূল্যায়ন করে বলেছিলেন , তিনি আমাদের পার্টি ও জনগণের উট , তিনি ভারী বোঝা বহন করে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করেন , তাঁর কাছে বিশ্রাম , উপভোগ ও নিজস্ব স্বার্থ বলে কিছুই নেই। তিনি একজন বিশিষ্ট কমিউনিষ্ট , কমিউনিষ্ট পার্টির শ্রেষ্ঠ সদস্য , তিনি আমাদের সবার দৃষ্টান্ত ।
|