ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত , তার পূর্ব দিকে বিশাল অটলান্টিক মহাসাগর । ব্রাজিল হচ্ছে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশ । জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯০ লক্ষ , আয়তন ৮৫ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার । পোর্তুগীজ ভাষা হচ্ছে তার সরকারী ভাষা। অধিকাংশ অধিবাসী ক্যাথলিক ধর্ম বিশ্বাস করেন ।
১৬ শতাব্দীর প্রথম দিকে পর্তুগালের সমুদ্রচারী ব্যক্তি ব্রাজিলে পৌঁছলেন , তারপর পর্তুগাল যুদ্ধাভিযান চালাতে বাহিনী পাঠিয়ে জোর করে ব্রাজিলকে উপনিবেশ হিসেবে দখল করলো এবং ৩০০ বছর শাসন করলো । ১৮২২ সালে ব্রাজিল স্বাধীন হয়ে ব্রাজিল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৮৯ সালে সাম্রাজ্য ব্যবস্থা বাতিল করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৮৯১ সালে দেশের নাম ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্র স্থির করা হয়েছে । ১৯৬৭ সালে দেশের নাম পরিবর্তে ব্রাজিল ফেডারেল প্রজাতন্ত্র হয়েছে ।
ব্রাজিলের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই ভালো । তার উত্তরাংশ অতিক্রম করা আম্যাজন নদী হচ্ছে পৃথিবীতে অববাহিকা সবচেয়ে বিস্তীর্ণ , প্রবাহের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি নদী । পৃথিবীর ফুসফুস নামে পরিচিত আম্যাজন বনের অধিকাংশ ব্রাজিলে আছে । তার আয়তন ৭৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার, বিশ্বের মোট বনের আয়তনের তিন ভাগের এক ভাগ ।
ব্রাজিলে প্রচুর খনিজ সম্পদ আছে , প্রধানতঃ লৌহ , ইউরেনিয়াম , ম্যাংগ্যানীজ , তেল , প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা প্রভৃতি।
ব্রাজিল হচ্ছে লাতিন আমেরিকার প্রথম অর্থনৈতিক বড় দেশ , অপেক্ষাকৃত সুসম্পূর্ণ শিল্প ব্যবস্থা আছে , তার শিল্পের উত্পাদন মূল্য লাতিন আমেরিকায় প্রথম স্থানে আছে । ইস্পাত ও লৌহ , মোটরগাড়ি , জাহাজ , তেল , রাসায়নিক শিল্প , বিদ্যুত , জুতা প্রভৃতি শিল্পের সুনাম পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে । কফি রাজ্য নামে পরিচিত ব্রাজিল হচ্ছে বিশ্বের প্রথম কফি উত্পাদন এবং রপ্তানি দেশ । তার আখ এবং কমলার উত্পাদনের পরিমাণও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি । ব্রাজিলের পর্যটন শিল্প খুব উন্নত মানের , বিশ্বের দশটি বৃহত্তম পর্যটনের বৈদেশিক আয় অর্জনকারী দেশের অন্যতম ।
ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়া হচ্ছে ২০ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যার একটি আধুনিক শহর । ১৯৮৭ সালে , ইউনেস্কো ব্রাসিলিয়া শহরকে মানবজাতির সাংস্কৃতিক সম্পদ ঘোষণা করেছে ।
১৯৭৪ সালে চীন ও ব্রাজিলের কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর দু'দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে বিকশিত হয়েছে । বিশেষ করে সাম্প্রতিক দশ বারো বছরে চীন ও ব্রাজিলের সম্পর্ক সার্বিকভাবে উন্নতি হয়েছে , উচ্চ পর্যায়ের পারস্পরিক সফর অব্যাহত ছিলো। প্রেসিডেন্ট চিয়াং ছে মিন ১৯৯৩ সালের নভেম্বর এবং ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে ব্রাজিল সফর করেছেন । ব্রাজিলের দু জন প্রেসিডেন্ট ফের্নান্দো হেনরিক কার্দোসো এবং লুলা যথাক্রমে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর এবং ২০০৪ সালের মে মাসে চীনে রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন । দু'দেশের সরকার দীর্ঘকালীন , স্থিতিশীল , পারস্পরিক উপকারিতামূলক রণনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নিরন্তর প্রয়াস করেছে । ১৯৯৯ সালে চীন ও ব্রাজিলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি প্রথম পৃথিবীর সম্পদ উপগ্রহ সাফল্যের সঙ্গে উতক্ষেপন করা হয়েছে । এখন ব্রাজিল হচ্ছে লাতিন আমেরিকায় চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার , চীন হচ্ছে ব্রাজিলের চতুর্থ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং তৃতীয় রপ্তানি বাজার ।
|