বসন্ত ও শরত্ এবং যুদ্ধরত রাজ্যসমূহ সময়পর্বের সংস্কৃতিঃ বসন্ত ও শরত্ সমযপর্বের শেষার্ধে প্রাচীনকালের বিদ্বত্সমাজের বিকাশ লাভ হতে থাকে। কনফুসিয়াস(খৃঃ পূঃ৫৫২--৪৭৯)ছিলেন সামন্ততান্ত্রিক শ্রেণীবিভাগের একজন সমর্থক। বিদ্যা ও জ্ঞানের সারসংকলন এবং তার বিস্তারের জন্য তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়পর্বে সামাজিক এবং অর্থনীতিক আলোড়নের তীব্রতা চিন্তাজগতেও গভীরভাবে সাড়া জাগায়। আর তার ফলে নিজ নিজ চিন্তা ব্যক্ত করা এবং তাত্ত্বিক বিতর্কে 'শত-মতবাদের চিন্তা-ধারা'র সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কনফুসিয়াসপন্থীরা অভিজাত সম্প্রদায়ের কর্তৃত্বাধীন সমাজের শ্রেণীবিভাগ সমর্থন করে রাজা ওয়েন ও রাজা উ'র (অর্থাত্ পশ্চিম চৌ) ঐতিহ্যকে আদর্শরূপে মেনে নিয়ে ব্যক্তিগত আচরণবিধি তৈরী করেন এবং শ্রেণীবিভাগ ও পিতৃশাসিতগোত্র-ভিত্তিক সংঘাবাসের মত ব্যক্ত করেন।
মো তি (খৃঃ পূঃ ৪৮০?--৩৯০?) সমর্থকেরা অর্থাত্ মো তি-দর্শনবাদীরা রাজাদের মধ্যে পরস্পর ধ্বংসকারী যুদ্ধ এবং তাদের বিলাসিতাপূর্ণ জীবনযাপনের বিরোধিতা করতেন। মো-পন্থীরা দুর্বলের প্রতি বলশালীর অত্যাচার ,গরীবের প্রতি ধনীর ভ্রুকুটি, হীনজাত লোকের প্রতি অভিজাত ব্যক্তির ঘৃণা এবং সরল মনোভাবের মানুষের প্রতি ছলনার আশ্রয় নেওয়ার মতো সব আচরণের সমালোচক ছিলেন। তাঁরা চাইতেন শান্তি,মিতব্যয়িতা,মৌভ্রাত্র এবং পারস্পরিক সাহায্য। তাঁরা নির্যাতিত কৃষক(যাদের মনে তখনও বিদ্রোহীভাবে জাগেনি) এবং ক্ষুদ্র কারিগর ও ব্যবসায়ীদের চিন্তা প্রতিফলিত করতেন।
দার্শনিক লাও জি এবং চুয়াং জি(খৃঃ পূঃ ৩৬৫?--২৯০?)-এর অনুগামীরা --যাদের তাওপন্থী বলা হত --সামাজিক বিবর্তনের বিরোধী ছিলেন এবং তাঁরা চাইতেন মানুষেরা আদিম যুগের সমাজে ফিরে গিয়ে চিরকাল নিঃসংগে জীবনযাপন করুক । এই ধরণের দর্শনে ব্যক্ত হয়েছিল অবক্ষয়ী অভিজাত সম্প্রদায়ের মতবাদ।
আইনবাদী ভাবধারার প্রতিনিধিরা যেমন শাং ইয়াং (খৃঃপূঃ ৩৯০?--৩৩৮),হান ফেই (খৃঃ পূঃ২৮০?--২৩৩)ইত্যাদি চাইতেন এক কেন্দ্রীভূত রাজতন্ত্র এবং আইনের শাসন।নব্য জমিদারশ্রেণীর রাজনীতিক অভিলাষ তাদের ভাবধারায় ব্যক্ত হয়েছিল।
এই সব বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদে প্রতিফলিত হয়েছিল তত্কালিন বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং তাদের স্বার্থের সংঘাত।
|