v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-01 13:01:38    
অভিনেত্রী লি লিং

cri

    লি লিং হচ্ছেন চীনের একজন বিখ্যাত চলচিত্র ও টেলিভিশন অভিনেত্রী , গত বিশ-বাইশ বছরে তিনি ছায়াছবি ও টেলিভিশন- নাটকে বিভিন্ন যুগের ও মহলের নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন ।কিছু দিন আগে আমাদের সংবাদদাতা লি লিংয়ের একটি সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । সাক্ষাত্কার দেয়ার গোটা প্রক্রিয়া লি লিংয়ের মুখের মৃদু হাসি আমাদের সংবাদদাতার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে , তার দুটি বড় বড় চোখ যেন কথা বলতে পারে । ১৯৫৮ সালে চীনের বৃহত্তমো সাংহাই শহরে লি লিংয়ের জন্ম । ছোট বেলা থেকেই লি লিং এক চঞ্চল মেয়ে , তিনি নাচ-গান পছন্দ করেন । কিন্ডারগার্ডেনে পড়ার সময় শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের নাচ-গান শেখানোর সময় সব ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকবারইলি লিং সবার আগে নাচ-গান শিখে ফেলতেন এবং শিক্ষকের প্রশংসা পেতেন । মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা পছন্দ করতে শুরু করেন , তিনি বলেছেন , এ সম্পর্কে তার মামার প্রভাব সবচেয়ে বেশী । আমার মামা একজন চিত্রশিল্পী । তিনি প্রায়ই আমাকে শিল্পকলা সম্পর্কিত কাহিনী শোনান এবং চিত্রকর্ম উপভোগের নিয়ম ব্যাখ্যা করেন । তাই মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমি নানা ধরনের শিল্প কর্ম উপভোগ করতে পছন্দ করি ।

    ১৯৭৮ সালে লি লিং পরীক্ষার মাধ্যমে চীনের কেন্দ্রীয় অপেরা দলে ভর্তি হন । তিনি এই দলে অভিনয় শিখেছেন এবং একাধিক অপেরায় অভিনয় করেছেন । এই সময় তিনি চলচিত্র ' মিয়াও মিয়াও 'তে এক সুন্দর মনের শিক্ষিকার ভুমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পেলেন । তার সৃষ্ট এই চরিত্র দর্শকদের সমাদর পেয়েছে । তখন থেকে লি লিংয়ের খ্যাতি ক্রমেই বাড়ে ।

    চলচ্চিত্র ' মিয়াও মিয়াও ' তে লি লিংয়ের চমত্কার অভিনয় দেখে অনেক চলচিত্র পরিচালক লি লিংকে অন্য ছবিতে অনুরুপ চরিত্র সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছেন , কিন্তু লি লিং এই সব সুযোগ গ্রহন করেন নি । তিনি জানেন , অভিনয়ের নৈপুন্য উন্নত করার জন্য তাকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের চরিত্র সৃষ্টি করতে হবে , শুধু এই ভাবেই তিনি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মহলে স্থায়ীভাবে দাড়াঁতে পারেন । তখন লি লিংয়ের বয়স মাত্র বিশ-বাইশ বছর , এই বয়সে অভিনয় সম্বন্ধে এই ধরনের দূরদর্শী দৃষ্টিভংগী পোষন করা সহজ ব্যাপার নয় । লি লিং ' মিয়াও মিয়াও' নামক নারী শিক্ষিকার চরিত্র সৃষ্টির পর বিভিন্ন যুগের , সমাজের বিভিন্ন স্তরের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । ১৯৮২ সালে তিনি ছায়াছবি ' অজানা বন্ধু'তে এক বন্দী নারীর চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । তার অভিনয়ের অকপটতা ও আন্তরিকতা চলচ্চিত্র মহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশংসা পেয়েছে। ১৯৮৪ সালে তিনি ছায়াছবি ' হুয়াং শান এর মেয়ে ' তে পল্লী অঞ্চলের এক স্বনির্ভরমেয়ের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন , এই মেয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে নিজের উপর নির্ভর করার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে এক পরিবারে কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করেছেন। তার চমত্কার অভিনয়ের জন্য এই ছবি চীনের চলচিত্র মহলের সোনালী মোরগ পুরস্কার পেয়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন । এর পর লি লিং ' সুং ছিং লিং ও তার বোনেরা ' নামক সিরিজ নাটকে সাফল্যের সংগে সুং ইয়াত সেনের স্ত্রী সুং ছিং লিংয়ের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন , সুং ছিং লিং এক সময় চীনের রাষ্ট্রীয় মাতা ছিলেন , তিনি যেমন সুন্দরী , তেমনি বুদ্ধিমতী। লি লিংয়ের সৃষ্ট চরিত্রগুলো একেবারে ভিন্ন সমাজ ও ভিন্ন চরিত্রের লোক হলেও প্রত্যেকটি চরিত্র প্রাণবন্ত বলে দর্শকরা খুব পছন্দ করেন ।

    শিল্পীদের মধ্যে অনেকে বেশী লাভ পাওয়ার জন্য নিজের খ্যাতি দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যান । কিন্তু লি লিং কখনো টাকা পয়সার জন্য এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন নি । তার পক্ষে এক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চরিত্র সৃষ্টি করা সবচেয়ে সুখের ব্যাপার । তিনি বলেছেন , আমি বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও সিরিজ নাটকে অভিনয়ের আমন্ত্রন কম পাই নি , কিন্তু আমি সব আমন্ত্রন গ্রহন করি নি , কেননা কোনো কোনো চরিত্র আমার পক্ষে উপযুক্ত নয় , অথবা কোনো কোনো কাহিনী আমি পছন্দ করি না । এ কথা বলা যায় , আমি বেছে বেছে অভিনয় করেছি বলে আজ পর্যন্ত আমি যে সব ক'টি চরিত্র সৃষ্টি করেছি , তার সবই সার্থক হয়েছে ।

    সিরিজ নাটক ' সর্বোচ্চ সম্মান '-এ লি লিং একজন নারী পুলিশের ভুমিকায় অভিনয় করেছেন । চরিত্রের এই নারী পুলিশ নিস্বার্থভাবে কাজ করে নিজের পরিবার-পরিজন , বিশেষ করে স্বামীর প্রতি অবহেলা করেছেন , স্বামী এর জন্য অসন্তুষ্ট। এই নারী পুলিশ কিন্তু টের পান নি , দুজনের সমঝোতার অভাব থেকে সৃষ্ট মনোমালিন্য বাড়তে বাড়তে তার স্বামী পরিশেষে আরেক নারীর প্রেমে পড়েছেন । এই সিরিজ নাটকে লি লিংয়ের অকৃত্রিম অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা জয় করেছে । তার সৃষ্ট নারী পুলিশের চরিত্রে একজন প্রৌঢ নারীর জীবনের সুখদুঃখ জীবন্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ।

    গত বিশ-বাইশ বছরে লি লিং দর্শকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের চরিত্র সৃষ্টির প্রচেষ্টা করেছেন । তিনি বলেছেন , আমি ছায়াছবি ও টেলিভিশন নাটকে যে সব চরিত্র সৃষ্টি করেছি , সেগুলোর মধ্যে কোনো অনুরুপ স্টাইলের চরিত্র নেই । নেতিবাচক চরিত্রসহ আমি সব ধরনের চরিত্র সৃষ্টি করতে চাই । আমি প্রতিটি চরিত্রের মানসিক দ্বন্দ্ব ও সুখ-দুঃখ প্রকাশ করতে চাই , এটা আমার ও দর্শকদের পক্ষে শিক্ষনীয়।

    অভিনয় ছাড়া লি লিং চীনের গণ- রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনেরও প্রতিনিধি , তিনি প্রায়ই সাধারন নাগরিকদের সংগে দেখা করেন এবং তাদের মতামত শোনেন । তাদের জীবনের নানা বাস্তব সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি সরকারের কাছে প্রস্তাব দাখিল করেন । লি লিংয়ের দাখিল করা প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বেশীর ভাগই শিশুশিক্ষা ও স্কুলবয়সী ছেলেমেয়ের সমস্যা সম্পর্কিত। লি লিং বলেছেন , ছায়া ছবি ' মিয়াও মিয়াও'তে একজন যুব শিক্ষকের চরিত্র সৃষ্টির পর তিনি ছেলেমেয়েদের শিক্ষার বিষয়কে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন , তিনি আশা করেন , প্রতিটি ছেলেমেয়ে ভালো পরিবেশে মানুষ হবে ।