v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-28 21:48:02    
মঙ্গলীয় জাতির জামা-পোষাক

cri

    অন্তঃমঙ্গোলীয় স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের এর্দোস তৃণভূমিতে বিয়ের অনুষ্ঠানটি খুব জাঁকজমকপূর্ণ, বিশেষ করে মঙ্গোলীয় জাতির জামা-পোষাক এত সুন্দর এবং আকর্ষনীয় যে, যেন একটি জামা-পোষাকের প্রদর্শনী চলছে: নানা ধরণের, নানা রঙের কাপড় দেখা যায়।

   চীনের মঙ্গোলীয় জাতি এমন একটি জাতি সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে যার লোকসংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশী। বর্তমানে তার লোকসংখ্যাঅন্যূন ৪৮লক্ষ।

    ওদের অধিকাংশ উত্তর চীনের মঙ্গোলীয় তৃণভুমিতে বসবাস করে। ইতিহাসের দিক থেকে বোঝা যায়, মঙ্গোলীয় জাতি পশু পালনের ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন এবং এ জাতির লোকজন খুব সাহসী। তাঁরা মঙ্গোলীয় তৃণভূমি ও বৈকাল হ্রদের চার দিকের বণাঞ্চলে বসবাস করেন। এয়োদশ শতাব্দির প্রথম দিকে  মঙ্গোলীয় জাতির নেতা চেংগিস খান বিভিন্ন উপজাতিকে পরাজিত করে একটি নতুন দেশ গড়ে তুলেছেন। তার পর চেংগিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলীয় বাহিনী কয়েকটি সামরিক তত্পরতা চালিয়ে তাদের রাজ্য মধ্য-এশিয়া ও দক্ষিণ রাশিয়া ইত্যাদি এলাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

    বিভিন্ন উপজাতিকে পরাস্ত করে ইউরোপ আর এশিয়া এ দু'টি মহাদেশে ধন-রত্ন, রেশম সম্পদ ও নানা জাতির জামা-পোষাকের প্রাঠান্য সংগে নিয়ে এসেছে বলে মঙ্গোলীয় জাতির জামা-পোষাকে রকমারিতা ও জাঁকজমক সৃষ্টি হয়েছে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি, যেমন দক্ষিণ-পশ্চিমমঙ্গোলীয় এদোর্স তৃণভূমিতে বসবাসকারী মঙ্গোলীয়রা চুলকে নানাভাবে সাজায়। সেখানে সকল অবিবাহিত মেয়েরা লম্বা লম্বা চুল দিয়ে বেণী বাঁধে । বিয়ের আগের দিন সম্মানিত প্রবীণরা মেয়ের জন্য একটি বিভাজন অনুষ্ঠান করেন। অনুষ্ঠানটি এই রকম প্রথমে মুখের দু'পাশে বিনুনি করে থাকে। তার পর বেণী দুটোর ওপর বরের দেয়া চকচকে দামী ফিতা বেঁধে রাখে। ফিতাটি কার্পাস তুল অথবা রেশম দিয়ে তৈরী। এর ওপর রত্ন, দামী পাথর, রুবি ইত্যাদি জিনিস দিয়ে সাজানো। এ রকম চুলের ফিতা বাঁধা খুব দামী। কয়েক পাল ঘোড়া অথবা কয়েকশ উট দিয়ে বিনিময় করা যায়।

    এ রকম রীতি এখনও বিদ্যামান। কিন্তু আগের চেয়ে অত জাঁকজমকপূর্ণ নয়। হু রিচা একজন মঙ্গোলীয় মেয়ে। তিনি পেইচিংয়ে থাকেন। তাঁর জাতীয় জামা-পোষাক নিয়ে তিনি বলেছেন, মঙ্গোলীয় জাতির পোষাক এত সুন্দর, যে আমি খুব চাই এ রকম পোষাক পরতে। কিন্তু পেইচিং আসার আগে কখনও পরি নি।

    আমাদের সংবাদদাতা তাঁর সাক্ষাত্কার নেয়ার সময়ে দেখেছেন, তিনি একটি নীল লম্বা পোষাক পরেছেন, দেখতে খুব রানী মতো এবং সুন্দর। হু আমাদের সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন, মঙ্গোলীয় জাতির নারী-পুরুষ , জোয়ান-বুড়ো যুবক-যুবতী নির্বিশেষে সকলেই এমন লম্বা পোষাক পরতে পছন্দ করেন। বিশেষত কিছু গুরুত্বপূর্ণ উত্সবে নানা ধরনের লম্বা পোষাক দেখা যায়। দেখতে কত সুন্দর ও জাঁকালো।

    লম্বা পোষাককে মঙ্গোলীয় পোষাকও বলে। মঙ্গোলীয় পোষাক খুব জনপ্রিয়। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী মঙ্গোলীয় জাতির লম্বা পোষাক একটু পৃথক। মঙ্গোলীয় জাতির প্রাচীন জনপদ বুরিয়াতের কথা ধরা যাক। ঐতিহ্যিক মঙ্গোলীয় লম্বা পোষাকের তুলনায়, বুরিয়াতের মঙ্গোলীয় নারীরা বিভক্ত লম্বা পোষাক পরেন। বিভক্ত মঙ্গলীয় লম্বা পোষাক এ রকম। কাপড়ের আস্তিন ও কাঁধ আলাদা আলাদাভাবে কাটা হয়। আধুনিক জামাকাপড়ের মত আস্তিন কাঁধের সংগে সেলাই করে যোগ করা হয়। গায়ের কাপড়টিও স্ক্যার্ট থেকে বিচ্ছিন্ন।

    মাদাম ইয়াং ইউয়ান এমন একজন অধ্যাপক, যিনি সংখ্যালঘু জাতির জামা-কাপড় নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেছেন, বুরিয়াতের মঙ্গোলীয় নারীদের পোষাক এভাবে তৈরী হয়, কাজেই একটি দুর্গত গল্পের সংগে নিবিড়ভাবে জড়িত। 

    বুরিয়াতের নারী তাঁদের বীরাঙ্গনা রানী পালাচিনের স্মরণে এ ধরনের কাপড় পরেন, রানী পালাচিন বিদেশী আক্রমণের প্রতিরোধে তাঁর জাতির লোকজন নিয়ে শত্রুদের সংগে তুমুল যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু অবশেষে পরাজিত হয়েছেন। শত্রুরা তাঁকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে। শত্রুরা তাঁর দেহ ভাগ করেছে। সেজন্য বুরিয়াতের লোকেরা তাঁর মৃত্যুর স্মরণে এ পদ্ধতিতে জামা-কাপড় তৈরী করে। মাদাম ইয়াং বলেছেন, গল্পটা খুব শোচনীয়। কিন্তু তাতে ঠিক বোঝা যায়, জাতীয় পোষাক এক জাতির প্রতীক হিসেবে অস্বিত্বমান। ইতিহাসে মঙ্গোলীয় জাতির ৪০টি জনপদ ছিলো। প্রতিটি জনপদের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জামা-কাপড় ছিলো। চেংগিস খান বিভিন্ন জনপদকে পরাজিত করে ঐক্যবদ্ধ মঙ্গোলীয় জাতি গড়ে তোলেন বলেও এ সব জনপদ মঙ্গলীয় জাতির জামা-পোষাক বহু রকমের।

    সময়ের গতিতে আধুনিক মঙ্গোলীয় জামা-পোষাকের স্পষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। উয়ুনপাটু একজন মঙ্গোলীয় পণ্ডিত । তিনি মঙ্গোলীয় জাতির সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি মনে করেন যে , যে কোনো ধরনের পোষাক সময়ের গতিতে পরিবর্তন হয়। ঐতিহ্যিক লম্বা পোষাক, বুটজুতা, কৃষি-উত্পাদন আর আধুনিক জীবন-যাপনের সংগে মানানসই নয়। কাজেই তার উন্নতি হতেই হবে। কিন্তু উত্তর চীনের একটি প্রাচীন জাতি হিসেবে মঙ্গোলীয় জাতির জামা-পোষাক এখনও খুব জনপ্রিয় এবং আকর্ষনীয়। তিনি আরও বলেছেন, মঙ্গোলীয় জাতির জামা-কাপড় বিস্তীর্ণ তৃণভূমির সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীবন-যাপন ও উত্পাদনের পদ্ধতির পরিবর্তনের সংগে ও জাতির জামা-পোষাকেরও পরিবর্তন হয়। নতুন জামা-পোষাক মঙ্গোলীয় জাতির বর্তমান চিন্তা-ধারণা প্রতিফলিত হয়। আমাদের মত যারা শহরে থাকে, তারা অনেক সময়ে লম্বা পোষাক পরে না। কিন্তু উত্সব অথবা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমরা ঐতিহ্যিক জামা-পোষাক পরি। যেমন টুপি, লম্বা পোষাক, বেল্ট, বুটজুতা ইত্যাদি।

    উয়ুনপাটু মনে করেন যে, একটি জাতির জামা-পোষাক যদি খুব জনপ্রিয় হয়ে আসছে , তাহলে কেবল সে জামা-পোষাক চিরদিন থাকতে পারে। বর্তমানে মঙ্গলীয় জামা-কাপড় চীনের জাতীয় লোকশিল্প সংরক্ষণ প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং সরকার ও সমাজের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিদের দৃষ্টি দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। তিনি বিশ্বাস করেন, মঙ্গোলীয় জাতির জামা-পোষাক পুরানিদর্শন হিসেবে যাদুঘরে প্রবেশ করবে না। সময়ের গতিতে তার উন্নতি হতেই হবে এবং আরো অনেক লোক তাকে পছন্দ করবে, উপভোগ করবে।