v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-25 14:46:31    
রিভার স্নেল বিক্রেতা কোটিপতি ইয়েন ছি

cri
    কেউই কল্পনা করতে পারেন না যে ,রেঁস্তোরেন্টের একটি তরকারির মাধ্যমে কোটিপতি হওয়া যায় ।

    তার নাম ইয়েন ছি । ভাজা ঝাল স্বাদের রিভার স্নেল থেকেই তার ব্যবসার শুরু । এখন তার সারাদেশে তেপ্পান্নটি চেন্ – রেঁস্তোরেন্ট ও সাত হাজারেরও বেশী কর্মী রয়েছে ।

    আসলে দশ বছর আগে অধিকাংশ লোকের মতো তিনিও আরামদায়ক বেতনভোগীর জীবনযাপন করতেন । তিনি ছোংছিং শহরের একটি ব্যাংকের একজন হিসাবরক্ষক ছিলেন ।

    তিনি ও তার বন্ধুবান্ধবরা আবিষ্কার করলেন যে ,শহুরেরা শহরের উপকণ্ঠে গিয়ে সুস্বাদু মৌসুমী খাবার খেতে পছন্দ করেন । উপকণ্ঠের খাবারের স্বাদ তাদের বেশী আকষর্ণ করে ।

    উনিশশো চুরানব্বই সালে শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরের ছেনতু-ছোংছিং এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ইয়েন ছি নিজের প্রথম ছোটো রেঁস্তোরেন্ট খুললেন ।

    তিনি ভাবতে পারেন নি যে , তরকারীগুলো সাধারণ বলে রেঁস্তোরেন্টের মোট পাঁচটি টেবিলের সবগুলোই প্রায়ই খালি থাকে ।

    বন্ধুবান্ধবরা তাকে বললেন , শুধু বৈশিষ্টপূর্ণ খাবারই লোকদের আকষর্ণ করতে পারে ।

    ইয়েন ছি অনেক ভেবেচিন্তে অবশেষে স্নেল রাঁধার সিদ্ধান্ত নিলেন । কারণ হাঁস-মুর্গী মাছ খরগোশ আর বিয়ারের প্রচলন আগেই হয়ে গেছে । স্নেলের প্রচলন তখনো হয় নি ।

    ইয়েন ছি সচরাচর ব্যবহৃত স্থানীয় স্নেল ব্যবহার করলেন । কিন্তু অতিথিরা খাওয়ার পর মনে করলেন , এর মাছের গন্ধ উগ্র এবং বালি মিশে আছে , স্বাদ ভালো নয় । তাই ব্যবসার উন্নতি হলো না ।

    উনিশশো চুরানব্বই সালের শেষদিকের একদিন তিনি আকস্মিকভাবে খবরের কাগজের একটি খবর দেখলেন । খবরে বলা হয়েছে , দক্ষিণপশ্চিম চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ফুসৌলু নামে একধরণের নতুন জাতের স্নেল আমদানি করেছেন ।

    ইয়েন ছি খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে সেই বিশ্ববিদ্যালয়টির নিকটবর্তী একটি গ্রামে গিয়ে দেখলেন , সেই গ্রামে এই ধরণের স্নেলের ব্যাপক চাষ হচ্ছে । সেই সব কৃষকরাও অনুভব করলেন , এটি ধনী হওয়ার একটি পথ । তাই তারা ইয়েন ছি'কে তা সরবরাহ করতে শুরু করলেন ।

    উন্নত জাতের স্নেল তো জুটলো , এখন এই স্নেল দিয়ে নিজের বৈশিষ্ট সম্পন্ন তরকারী রাঁধা চাই । পুংখানুপুংখ পরীক্ষার পর ইয়েন ছি ও পাচকরা ঝাল স্বাদের রিভার স্নেল ভাজার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    নতুন উদ্ভাবিত এই তরকারী জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ইয়েন ছি তা বিনামূল্যে এক্সপ্রেসওয়েতে আসা-যাওয়া অতিথিদের খাওয়ালেন । স্বাদ খুবই ভালো বলে খবরটা দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো । ইয়েন ছি'র রেঁস্তোরেন্টের টেবিলের সংখ্যা পাঁচটা থেকে দ্রুত বেড়ে ত্রিশাধিকটি , তারপর একশোটি হল ।

    ইয়েন ছি বললেন ,শুরুতে আমরা শুধু একটি রেঁস্তোরেন্ট ভাড়া করেছিলাম ,পরে গোটা রাস্তাটিই ভাড়া করেছি ।

    উনিশশো সাতানব্বই সালে ছোংছিং শহরের আশেপাশে তিনি কয়েকটি যৌথ মালিকানার রেঁস্তোরেন্ট খোলেন । কিন্তু তারা শুধু পাচক পাঠিয়েছেন আর পাচকরা ব্যবস্থাপনা জানেন না বলে সেগুলো একের পর এক বন্ধ হল । এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দুই হাজার সালে তিনি ছোংছিং শহরে তাদের সরাসরি ব্যবস্থাপনাধীন একটি উন্নত ধরণের রেঁস্তোরেন্ট খুললেন । আগের পুরোনো রেঁস্তোরেন্টের খ্যাতির জন্য খোলার শুরুতেই এতে খেতে আসা অতিথিদের লম্বা লাইন দেখা দেয় ।

    ইয়েন ছি উপলব্ধি করলেন , ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বিপুলসংখ্যক দক্ষ ব্যক্তির দরকার । তাই একই সালে তিনি পুরোনো রেঁস্তোরেন্টের নিকটে একটি প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় খুললেন । আদর্শ মালমসলার জন্য একই সালে তিনি ছোংছিং শহরে মালমসলা ঘাঁটিও স্থাপন করলেন । ফুসৌলো স্নেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একই সালে তিনি কুয়েচৌ প্রদেশের হংফং হ্রদে আর পেইহাই হ্রদে এই স্নেল লালনের ঘাঁটিও স্থাপন করলেন ।

    দুই হাজার এক সাল থেকে দুই হাজার দুই সাল পযর্ন্ত সময়ে ইয়েন ছি ছোংছিং শহরে পরপর চারটি উন্নতমানের রেঁস্তোরেন্ট খোলেন এবং শুধু ঝাল স্বাদের রিভার স্নেল ভাজা নয়, অন্যান্য স্ববৈশিষ্টসম্পন্ন তরকারীও বের করেন । দুই হাজার দুই সালে তিনি সুযোগ পরিপক্ক হয়েছে মনে করে ছোংছিংকে ঘাঁটি হিসেবে আর উন্নতমানের রেঁস্তোরেন্টকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে তার ব্যবসা দ্রুত সারাদেশের বিভিন্ন প্রদেশ ও মহানগরে সম্প্রসারিত করেন ।দুই হাজার তিন সালে পেইচিংয়ের বাজার পযবেক্ষণের জন্য তিনি পাঁচ লক্ষ ইউয়ান খরচ করে বিশবার পেইচিংয়ে আসেন । পেইচিংয়ের ছাও ইয়াং রেঁস্তোরেন্ট সেই সালের অক্টোবর মাসে খোলা হয় । প্রথম দু'মাসে লোকসান হলেও তৃতীয় মাস থেকে রেঁস্তোরেন্টের একশো আটাত্তরটি টেবিলে অতিথিদের ভীষণ ভিড় দেখা যায় । দুই হাজার চার সালে পেইচিংয়ে তার দ্বিতীয় রেঁস্তোরেন্টও খোলা হয় ।

    পাঁচটা টেবিল ও একজন পাচক থেকে শুরু করে এখন তার বাষির্ক বিক্রয়মূল্য আটচল্লিশ কোটি ইউয়ান । দুই হাজার চার সালের চব্বিশে আগষ্ট তিনি চীনের কমিউনিষ্ট যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দেয়া চীনের যুব উদ্ভাবন পুরস্কার পান ।