v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-24 13:23:17    
বিশ্বের সবোর্চ্চ সেতু

cri
    ৩৬ হাজার টন রোল্ড ইস্পাত মেঘের উপরে ভাস্যমান ,প্রায় দুই দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ অবয়ব প্রবল বাতাস ঠেকাতে পারে ,দুই শো সত্তর মিটার উঁচু সেতুর উপরিভাগ পবর্তের মতো স্থিতিশীল । গত ১৬ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া ফ্রান্সের মিইয়ো সেতুর নিমার্নের কাঠিন্য তার উচ্চতার মতো নতুন বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ।

    সেতুটি নিমার্নের জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার মিশেল উইরোরা সেতুটি চালু হওয়ার দিন একটি সাংবাদিক সাক্ষাত্কারে বলেছেন ,সেতুটি নিমার্নের প্রক্রিয়া সম্ভবত: তার বিভিন্ন সংখ্যার চেয়ে আরো রহস্যজনক । প্রথম কঠিন সমস্যা হলো বাতাস । দুই শো সত্তর মিটার উঁচু স্থাপত্যকর্ম যে পরিমাণ বাতাসের শক্তির ঠেলা পায় তা ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক ডজন মিটার উঁচু পদার্থের চেয়ে অনেক বেশী । দু'দিক থেকে সেতুর দু অংশ একত্রিত হওয়ার আগে এবং সেতু টানার তারগুলোর ভিত্তি গড়ে ওঠার আগে এত উঁচু সেতুর অবয়ব প্রায়ই বাতাসে প্রচন্ডভাবে কাঁপতে থাকে । বাতাসের বেগ ঘন্টায় সত্তর কিলোমিটার হলে যাবতীয় কর্মীকে কমর্ক্ষেত্র থেকে সরে যেতে হয় । তাই লোকেরা অতিকায় ইস্পাতের নল দিয়ে দু শো মিটারেরও বেশী উঁচু কয়েকটি অস্থায়ী ইস্পাতের ফ্রেম গড়ে তুলে সেতুর অবয়বকে দাঁড় করান ,ফলে অধিকাংশ সময়ে প্রকল্প নিমার্নের কাজ সুষ্ঠুভাবে চলে । আর আশি মিটারেরও বেশী উঁচু কংক্রিটের সেতুর টাওয়ার প্রকান্ড ও ভারী বলে সেতুর উপরে সরাসরি নিমার্ন করা অসম্ভব । তাই লোকেরা এটি নিমার্নের পর সেতুর উপর ট্রাক স্থাপন করে এটিকে ধীরে ধীরে সেতুর মঞ্চের উপরে স্থানান্তরিত করেন । এটা দু'শো সত্তর মিটার উঁচু শূন্যে ত্রিশ তলা ভবন স্থানান্তরণের শামিল । মোট কথা ,গোটা সেতুর উত্তোলন ও নিমার্নের জটিলতা তার নকশার চেয়ে কোনো অংশে কম নয় ।

    সেতুটির মোট ওজন দুই লক্ষ নব্বই হাজার টন । এর মধ্যে শুধু ইস্পাতের কাঠামোর সেতুর রাস্তার ওজনই ছত্রিশ হাজার টন । পবর্তমালার মধ্যে দন্ডায়মান এত প্রকান্ড স্থাপত্যকর্মের স্থিতিশীলতাকে কিভাবে নিশ্চিত করা যায় ? বাতাসে সেতুটির বাদ্যযন্ত্রের তারের মতো কম্পন , এমন কি বিধ্বস্ত হওয়াকে এড়ানো যায় ?সেতুটি নিমার্ন প্রকল্পের প্রধান পরিচালক গেরনেই বলেছেন, সেতুটির নকশার প্রস্তাব প্রায় দশ বছরের সূক্ষাতিসূক্ষ বন্দোবস্তুর মধ্য দিয়ে প্রণীত হয়েছে । প্রথমত: বৃটেনের জেনারেল ডিজাইনার নরম্যান ফোসট প্রাপ্ত বাতাসের ঠেলার শক্তি কমানোর জন্য সেতুর অবয়বের ত্রিকোণার কাঠামোর নক্শা করেছেন । কম্পিউটারে অনুকরণের পরীক্ষা ছাড়া খোলা মাঠে বায়ুশক্তি অনুকরণের পরীক্ষা ১৯৯৭ সালেই শুরু হয় । ফ্রান্সের আবহাওয়ার পূবার্ভাষ ব্যুরোর বিশেষজ্ঞরা এমন কি থুরুজ অঞ্চলে একটি কৃত্রিম উপত্যকাও নিমার্ন করেছেন । তারপর এই উপত্যকায় পানি ঢেলা হয় , পানিতে বহু কণা মিশে রয়েছে । বিশেষজ্ঞরা পানিপ্রবাহের কণাগুলোর পরিবতর্নের মাধ্যমে থায়ান নদীর উপত্যকার সম্ভাব্য বিভিন্ন জটিল বায়ুর অনুকরণ করতে পেরেছেন এবং তারপর সেতুটির বিভিন্ন স্থাপত্য-কাঠামোর অনুপাত বার বার সংশোধন করেছেন । চূড়ান্ত নকশা অনুসারে সেতুটি ঘন্টায় আড়াইশো কিলোমিটার বেগের প্রবল বাতাশ প্রতিরোধ করতে পারে । তাছাড়া সেতুটির উপকরণগুলোর ওজনও সাধারণ সেতুর চেয়ে হাল্কা এবং সেগুলোর যেমন আছে ইস্পাতের গুণ , তেমনি আছে স্থিতিস্থাপকের গুণ । প্রচন্ড বাতাস , ভূমিকম্প ও গরমে স্ফীতি শীতে সংকোচনের কমর্ফল দেখা দেয়ার সময়ে সেতুটি আরো নমনীয় ও টাফ হয়ে ওঠে ।

    সেতুটির নিমার্নস্থলের ইঞ্জিনিয়ার আবেল বলেছেন , "নিমার্নের যথাথর্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত উপগ্রহের সাহায্যে জরীপের ব্যবস্থা ব্যবহার করেছি । সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা তিনশোটিরও বেশী ক্ষুদ্র সূক্ষ্ম রিমোট সেন্সিন সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন । সেগুলোর কোনোটা সেতুর থামগুলোর মধ্যে কংক্রিটের সংগে মিশে আছে , কোনোটা আশেপাশের পাথরের উপর স্থিরীকৃত আছে । নিমার্নের প্রক্রিয়ায় প্রতিটিবার সেতুর থামগুলোর উচ্চতা চার মিটার বাড়লে বিশেষজ্ঞরা উপগ্রহের সাহায্যে জরীপ ব্যবস্থা দিয়ে রিমোট সেনসিন সরঞ্জামের তথ্যগুলো গ্রহণ করেন এবং সম্ভাব্য ত্রুটি শুধরে নেন । বলা যায় , তাপ ও বায়ুশক্তি-জনিত সেতুর অবয়বের যে কোনো ক্ষুদ্র পরিবতর্ন ধরা পড়ে । সেতুটি নিমার্ন করতে তিন বছর সময় লেগেছে । নিমির্ত হওয়ার পর সেতুটির সরাসরি উচ্চতার ত্রুটি পাঁচ মিলিমিটারেরও কম ।"

    মিইয়ো সেতুটির মাত্র সাতটি থাম আছে বলে সেতুটির অবয়ব শূন্যে একটি প্রজাপতির মতো হালকা সাবলীল বলেই মনে হয় । এই সেতুটির কল্যাণে ফ্রান্সের দক্ষিণাংমের থায়ান নদীর উপত্যকার উপরকার চলাচলের প্রাকৃতিক বাধা দূর হয়েছে । মিইয়োর অধিকাংশ অধিবাসী অনেক আগেই এই কৃত্রিম পথকে স্থানীয় দশর্নীয় প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলির একাংশ বলেই গণ্য করেছেন ।