প্রসবোওর বিশ্রামের মাসে প্রসূতিদের খাওয়াদাওয়া আর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সাধারন মানুষের চেয়ে পৃথক বটে, তবে কি পার্থক্য, এ সম্পর্কে সংশ্লিস্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন: প্রসবোওর বিশ্রামের মাসে প্রসূতিদের খাওয়াদাওয়া আর পুষ্টি দেয়ার ব্যাপারে কয়েকটি নিয়ম অনুসরন করতে হবে ।কারন সন্তানের জন্ম দেয়ার পর প্রসূতিদের শরিরের অবয়বের পরিবর্তন হয়, অর্থাত্ প্রসূতিদের পরিপাক তন্ত্রের ক্ষমতা দুর্বল এবং পাকস্থলী ও অন্ত্রের চলাফেরা মন্থর হওয়ায় পুষ্টি আহরনের গতিও মন্থর হয় । এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পাকস্থলী ও অন্ত্রের বোঝা কমানোর চেষ্টা করতে হয় । এই নিয়ম অনুযায়ী প্রসূতিদের জন্যে খাওয়াদাওয়ার তালিকা তৈরী করতে হয় অর্থাত্ দুধ,সোপ, জাওভাত প্রভূতি তরল খাবার আর রুটি, ভাত প্রভৃতি কঠিন খাবারের সমন্বয় করতে হবে । মাংস শাকসবজির সমন্বয় করতে হবে।
লঘুপাক ও গুরুপাকের সমন্বয় করতে হবে ।আর দিনে তিনবার খাওয়ার পরিবর্তে ছ'বার করতে হবে । দিনে ক'বার খেলে প্রসূতিদের উপকার হবে, এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সন্তান জন্ম দেয়ার পর প্রসূতিদের খাবার গ্রহণ দিনে তিনবার থেকে পাঁচ ছয় বারে বাড়াতে হবে । কিন্তু প্রত্যেকবারে কম খেতে হবে । কম খাওয়ার অর্থ হল পাকস্থলী ও অন্ত্রের বোঝা বাড়িয়ে না দেয়া । বহুবার খাওয়ার অর্থ হল প্রসূতিদের ক্ষুধা না লাগানোর নিশ্চয়তাবিধান করা ।
দিনে কোন কোন সময়ে খাবার খেলে প্রসূতিদের উপকার হবে? প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন, দিনে ছয় বার অর্থাত্ পেইচিং সময় সকাল আটটায়, সকাল সাড়ে ন'টায়, দুপুর সাড়ে এগারোটায়, বিকেল সাড়ে তিন টায়, সন্ধ্যা ছ'টায় আর রাত সাড়ে নটায় ।
এখানে প্রসবোওর বিশ্রামের মাসের পরিসেবা কেন্দ্রে প্রসূতিদের জন্যে তৈরী এক দিনের খাবারের তালিকা বলে দিচ্ছি:
সকাল আটটায় জাওভাত, ডিম আর কিছু তরকারী
সাড়ে ন'টায় দুধ বা সোয়াবিন-দুধ আর ফল
দুপুর সাড়ে এগারোটায় মাংস, শাকসবজি আর সোপ, ভাত বা রুটি
বিকেল সাড়ে তিনটায় সোপ
রাত ছ'টায় মাংস আর শাকসবজির তরকারি আর সোপ,ভাত বা রুটি
রাত সাড়ে ন'টায় প্রধানত জাওভাত
প্রসবের পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ার কারনে অর্থাত্ অপারেশন আর স্বাভাবিক পদ্ধতিতে প্রসব করা প্রসূতিদের খাওয়াদাওয়ার পার্থক্যও বেশি । যে প্রসূতির অপারেশন হয়েছে তার পেটের গ্যাস বের হওয়ার পরই কেবল কিছু তরল খাবার খেতে পারেন, কয়েক দিন পর যখন তার পাকস্থলী ও অন্ত্র স্বাভাবিক হয় তখন স্বাভাবিক প্রসবকারী প্রসূতিদের মতো খাওয়াদাওয়া ও পুষ্টি আহরন করতে পারেন ।
চীনদেশে প্রসব করার পর প্রায় প্রত্যেক প্রসূতির পরিবারজন তাকে গুড় মিশানো পানি খাওয়ান ।
গুড় মিশানো পানির কি ভূমিকা আছে? রক্ত পূরন করার ভূমিকা পালন করে? প্রশ্নটির উত্তরে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন, হ্যাঁ, এমন ভূমিকা তার আছে, গর্ভকোষ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে এবং সহকারী ভূমিকা পালন কাতে পারে । গর্ভকোষ আগের অবস্থায় ফেরার পর অব্যাহতভাবে গুড় মিশানো পানি খেলে ক্ষতি নেই বটে কিন্তু যে জিনিস অতি বেশি খেলে উপকার হবে তা মনে করা হয় না ।
প্রসব করার পর কোনো কোনো মায়েরা অনেক মোটা হন, পুষ্টি আহরনের জন্যে তারা মাছ,মাংস এমন পুষ্টিকর জিনিস খান । সমস্যাটি কিভাবে সমাধান করা যায়, কিভাবে খাবারের মোট পরিমান নিয়ন্ত্রনে আনা যায়? এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন, মাছ মাংস এমন পুষ্টিকর জিনিস খেতে পারেন, কিন্তু মাছ-মাংস খাওয়ার সংগে সংগে শাকসবজিও খেতে হবে । কারন শুধু মাছ মাংস প্রভৃতি তরকারি খাওয়া হজমের পক্ষে উপকার হবে না ।
চীনদেশে দাদাদাদী বা নানানানীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ফল খাওয়া যাবে না, কারন তাদের মতে ফল ঠান্ডা জিনিস, ঠান্ডা জিনিস প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের জন্যে উপকার হবে না । ফল খাওয়া যাবে কি না এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ফল খেতে পারেন । কিন্তু শীতকালে বাইর থেকে কেনা ফল বা মাত্র ফ্রিজার থেকে বের ফর অত্যন্ত ঠান্ডা । তাই কিছু ক্ষন রাখার পর যখন ফলের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয় তখন খেতে পারবেন ।
প্রসবোওর বিশ্রামের মাসে প্রসূতিদের জন্যে কি কি খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ? এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সাধারনভাবে বলতে গেলে অতি ঝাল আর অতি ঠান্ডা জিনিস খাওয়া নিষিদ্ধ । কারন প্রসবোওর মায়েদের প্রায় অর্শ হয় । ঝাড়ের জিনিস খাওয়ায়সহজে অর্শ হয় । আর অতি ঠান্ডা জিনিস মায়ের দুধের উপর প্রভাব বিস্তার করে । চীনারা বলে থাকেন যে, সোপ খেলে মায়ের দুধ বেশি হবে । কথাটির কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে কি? এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রসব করার সময় প্রসূতিদের শরীর অনেক শক্তি আর পুষ্টি হারায় । প্রসূতিদের স্বাস্থ্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্যে পুষ্টি পূরন করা দরকার । মায়ের দুধের শতকরা আশি ভাগ হল পানি, প্রয়োজনীয় পানি সোপ থেকে আসে । তাই প্রসূতিদেরকে সোপ খাওয়ানো প্রয়োজন ।
নারীবন্ধুরা বিশেষ করে নতুন মায়েরা, চীনের ঐতিহ্যিক রীতিনীতি অনুযায়ী প্রসবোওর বিশ্রামের মাসে ভালভাবে খাওয়াদাওয়া করবেন, ভালভাবে বিশ্রাম নেবেন । প্রসূতিরা বেশিক্ষন ধরে দাড়াবেন না ও বসবেন না, বই পড়বেন না, লেখালেখি করবেন না, সেলাই করবেন না যাতে কোমর, পা, হাত আর চোখের ব্যথা আর ক্ষতি না হয় । এখানে আমরা সকল নতুন মায়েদের আর শিশুদের সুস্বাস্থ্য কামনা করি ।
|