v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-21 17:20:46    
পশ্চিম-ভ্রমণের বৃত্তান্ত--যুবার গল্প

cri

    চীনের এক সূপ্রাচীন পৌরানিক উপন্যাসের নাম "পশ্চিম-ভ্রমণের বৃত্তান্ত"।এই উপন্যাসের একটি চরিত্র বিখ্যাত হয়ে আছে--যার প্রকৃতি ছিল একেবারে শুয়োরের প্রকৃতির মতো-যেমন লোভী তেমনি একগুঁয়ে,তার ওপর আবার নিতান্ত কর্মবিমুখ।পরবর্তীকালেও এই চরিত্রটি নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত হয়েছে।"পশ্চিম-ভ্রমণের বৃত্তান্ত" উপন্যাসটির লেখক উ ছেংত্রন কার আদলে এবং কীভাবে এই বাস্তব চরিত্রটি সৃষ্টি করেছিলেন,সেটাও একটা মজার গল্প।

    লেখক উ ছেংএন-এর এক ভাইপো থাকত পূর্ব চীনের হুয়াই আন শহরের উপকন্ঠে।তার বড় এক তরমুজের ক্ষেত ছিল।এই ক্ষেত্রে যে তরমুজ হোতো সেগুলো খুব বড় হোতো,আর খুবই মিষ্টি হোতো,ভেতরে বীচিও থাকতো খুব কম।বহু লোক তার ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যেত।তার তরমুজের এমনই নাম-ডাক ছিল যে লোক খাতির করে তার নাম দিয়েছিল "তরমুজের রাজা" ।এ-হেন যে "তরমুজের রাজা" ,সে একদিন বিপন্ন মুখে লেখক উ ছেংএন-এর কাছে এসে বলেলো "চাচা,আমি কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করবো।আপনি আমাকে একটা আর্জি লিখে দিন"।লেখক উ ছেংএন ভাইপোকে আশ্বস দিয়ে শান্ত করে পুরো ব্যাপারে জানতে চাইলেন।ব্যাপারটা গুরুতর ঠিকই।লেখকের ভাইপো যেখানে থাকতো সোই গ্রাম থাকতো যু-বা নামে একটি নিষ্কর্মা,খলপ্রকৃতির লোভী লোক।তার আবার বিশেষ লোভের বস্তু ছিল-তরমুজ।আর যে-তরমুজ রাত্রিবেলা ক্ষত থেকে অনায়াসে তুলে নিয়ে গিয়ে খাওয়া যায়,সে-তরমুজের জন্যে-আবার দাম দেওয়াকে সে নিছক বোকামী বলেই মনে করতো।ফলে তরমুজের রাজার ক্ষেত থেকে রোজ রাত্রে একটি-দূটি করে তরমুজ গায়ের হয়ে যেতে শুরু করেছিল।কিন্তু চোরের দশ দিন,সাধুর একটি।যথারীতী এক যু-বা এসে চুপিচুপি তরমুজ সরাচ্ছে এই সময়ে তরমুজের রাজা তাকে হাতেরাতে ধরে ফেললো।অনেক গালাগলি দিয়ে,আর-যাতে সে তরমুজ চুরী না করে সেজন্যে তাকে ভালোমতো শাসিয়ে তরমুজের রাজা তাকে রেহাই দিল,শুরু রেহাই দিলনা,দুটো বড় বড় তরমুজও তাকে এমুনি দিয়ে দিল।তরমুজ-দুটো তো যু-বা দুদিন ধরে তারিয়ে তারিয়ে খেলে।তাপর ভাবলো,সাধুর না-হয় একদিন,কিন্তু চোরের তো দশ দিন।অতএব আবার সে রাতের অন্ধকারে তরমুজের ক্ষেতে গিয়ে হানা দিতে শুরু করলো,---এবার একবারে বস্তা নিয়ে।কয়েক রাত সে নির্বিঘ্রেই কাজ হাসিল করলো।কিন্তু তারপরই আবার আধ-বস্তা তরমুজ-সমেত সে ধরা পড়ে গেল।এবার আর তরমুজের রাজা তাকে শুধু গালাগালি দিয়ে ফান্ত হোলো না,তার পশ্চাদ্দেশে মোক্ষম এক কষালো।লাথি খেয়ে যু-বা আক্রোশে জ্বলতে লাগলো,এর শোধ তোলার জন্যে সে অস্থির হয়ে পড়লো।পরদিন দেখা গেল,যু-বা অনেকগুলো শুয়োর তাড়িয়ে নিয়ে এসে সোজা সেগুলোকে তরমুজের রাজার ক্ষেতের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে।তাজা বড়-তরমুজ দেখে শুয়োরগুলো মহানন্দে দাপাদাপি করে সেগুলো গোগ্রাসে খেয়ে চলেছে।খবর পেয়ে তরমুজের রাজা ছুটে এসে দেখতে পেল তার এতো যত্নের ক্ষেত তচনচ হয়ে গেছে।একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে সে তখন ছুটে এসেছে তার চাচা,লেখক উ ছেংএন-এর কাছে,যু-বার বিরুদ্ধ একটি আর্জিরামা লিখিয়ে নিতে।সব কথা শুনে লেখক উ ছেংএন বললেন "দ্যাখো,আর্জিরামা লেখা বা মামলা করা সহজ,কিন্তু মামলা টেঁকানো সহজ নয় সেজন্যে সাক্ষ্য-প্রমাণ চাই।চলো,তোমার ক্ষেতে গিয়ে দেখা যাক যু-বাই-যে এই দুষ্কর্ম করেছে তার কী সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করা যায়।"

    সেদিন বিকেলেই উ ছেংএন তার ভাইপোর তরমুজের ক্ষেত দেখতে গেলেন।দেখলেন ক্ষেত আর ক্ষেত নেই,পড়ে আছে শুরু তরমুজের খোল আর টুকরো টুকরো শাস,আর পুরো জায়গাটা জুড়ে শুয়োরের দাপাদাপির চিহ্ন।উ ছেংএন ক্ষেতটা ঘুরে ঘুরে ভালো করে দেখতে লাগলেন।হঠাত্ তার চোখে পড়ল মাটিতে কী-যেন পড়ে আছে।কুড়িয়ে নিয়ে দেখলেন,সেটা "মোল ক্রিকেট"নামে এক ইষ্ঞির মতো বড় এক ধরনের পোকা,সেটার গা থেকে শক্ত একটা লস্বা সুতো বেরিয়ে রয়েছে।ভাইপোকে সেটা দেখিয়ে তিনি জানতে চাইলেন সেটার রহস্যটা কী!ভাইপোও পোকাটা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল।সে বললো সুরগী-চোরেরা সাধারণত এটাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে।মরা পোকার পেটে সূঁতো-বাঁধা কাঁটা-পেরেক বিঁধিয়ে তারা পোকাটাকে মুরগীর সামনে ছুঁড়ে দেয়।মুরগী মরা-পোকাটাকে গিলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই চোর সূতোতে টান দেয়,অমনি মুরগীর গলায় কাঁটা-পেরেক শক্তভাবে আটকে যায়।মুরগী আর ভাকতে পারে না,চোরও মূতো টেনে মুরগীটাকে কাছে এনে ধরে নিয়ে চলে যায়।একথা শুনে উ ছেংএন কয়েক বার মাথা ঝুঁকিয়ে আর-কাছু না বলে যু-বা যে পাড়ায় থাকতো সেই পাড়ায় গেলেন।যু বার বাড়ীর কাছে গিয়ে উ ছেংএন দেখতে পেলেন বাড়ির উঠোনে অনেক লোকের ভিড় জমে আছে।লোকে একজন শ্যামলা রংয়ের পুরুষকে ঘিরে ধরে বকাবকি করছে।কেউ মারমুখো হয়ে বলছে: "যু বা,সব কুকর্মের মুলেই তুমি।তুমি আমার শুয়োরগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তরমুজের ক্ষেতে ছেড়ে দিয়ে ক্ষেত একেবারে তচনচ করিয়েছ!" আর-একজন তেমুনি তেরীয়া হয়ে বলছে: "যু-বা তোমার মতো পাজিলোক আমি আর কখনও দেখি নি।বাড়ীতে আমার যে-ক'টা মুরগী পালতাম তার সব ক'টাই ডিম পাড়তো,আর তুমি কিনা আমাদের প্রত্যেকটা মুরগীই চুরি করেছে"।এইভাবে সবাই যু বাকে কোনো-না-কোনো দুষ্টর্মের জন্যে দায়ী করে সমানে গালাগালি দিয়ে চললো।কয়েকজন মহিলা সটান যু বার বাড়ির ভেতরে ঢুকে কয়েকটা মুরগী নিয়ে বেরিয়ে এলেন,দেখা গেলো প্রত্যেকটা মুরগীর মুখ থেকে বেরিয়ে রয়েছে লম্বা সূতো,ঠিক যেরকম সূতো উ ছেংএন কিছুক্ষণ আগে ভাইপোর তরমুজের ক্ষেতে কাঁটা-পেরেকের সঙ্গে জড়ানো অবস্থায় পেয়েছিলেন।

    উ ছেংএন বেশি কিছু বলেলেন না,শুধু কয়েকজন সাক্ষী ঠিক করে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ভাইপোকে বাড়াতাড়ি আর্জি লিখে দিলেন।

    পরদিন ভোরবেলা উ ছেংএন-এর ভাইপো এই আর্জি নিয়ে জেলা-প্রশাসকের দফতরের ছুটলো।এদিকে সকালবেলাই লেখক উ ছেংএন-এর বাড়ীতে যুবা এসে হাজির হলো,এসেই ধমকের বললো: "উ ছেংএন সাহেব,আপনি না-কি আমার বারুদ্ধে অন্যদের হয়ে আর্জি লিখে দিয়েছেন?"লেখক উ ছেংএন বলেলেন: "হ্যাঁ,লিখে দিয়েছি"।এ কথা শুনেই রুদ্রমুর্তি ধরে যুবা বললো: "আপনার সাহস তো কম নয়,--আমার ব্যাপারে আপনি নাক গলিয়েছেন!যদি ভালো চান তো আর্জিমাটা ছিঁড়ে ফেলুন,নইলে আপনার রক্ষে নেই"।লেখক উ ছেংএন বলেলেন "নইলে তুমি কী করবে?"আরো উত্তেজিত হয়ে যুবা বললো "নইলে ছোরা বসাবো আপনার বুকে।এখনও বলুন আপনি আর্জিমাটা ছিঁড়ে ফেলতে রাজী আছেন কিনা!"লেখক উ ছেংএন বললেন:সেটা কোনোমতেই সম্ভব নয়।বরং তুমি নিজে জেলা-প্রশাসকের দফতরে হাজির হয়ে নিজের দোষ কবুল করো,আর তার পর থেকে কখনও কোনো কুকর্ম কোরো না।যুবা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ফস করে এক ধারালো ছোরা বের করে চীত্কার করে বললো: "আর্জিনামাটা কোথায় রেখেছেন---এই মুহূর্তে বের না করলে আপনাকে মেরে ফেলবো"।উ ছেংএন বললেন: "তোমার কথায় কোনো কাজ হবেনা,তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো"।এ কথার সঙ্গে যুবা ঝাঁপিয়ে পড়ে উ ছেংএনের বুকে ছোরা বসাতে যাবে---এই মুহূর্তে তার ছোরা-সমেত হাতটা ধরে ফেললো জেলা-সরকারের এক পেয়াদা।তারা তখন যুবাকে ধরে নিয়ে যেতেই এসেছিল।দেখতে দেখতে যুবার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হোলো।যুবা পালাবার চেষ্টায় ঝটাপটি বাঁধিয়ে দিলো,কিস্তু জেলা-সরকারের পেয়াদারা হাতকড়ার সঙ্গে লাগানো শিকল ধরে টানতে টানতে যুবাকে জেলা-প্রশাসকের দফতরে নিয়ে গেলো।এ সব ঘটনা ঘটে যাবার পর অনেক দিন ধরে যুবার স্বভাবে আর প্রবৃত্তির কথা লেখক উ ছেংএনের মনে ঘুরপাক খেয়ে বেড়াতে লাগলো।যুবা আলসে আর লোভী,নিজের লোভ মেটাতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করতে তার কিছু মাত্র বাধে না।স্বভাবে শুধরে ভালো হতে হলে এই ধরনের লোকদের খুবই চেষ্টা করতে হবে,এবং সেজন্যে তাদের মনে তাগিবোধের সৃষ্টি করতে হলে যুবার নেতিবাচক দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে সর্বসাধারণের মধ্যেই সেই শিক্ষা জনপ্রিয় করে তুলতে হবে।ক্রমাগত এই নিয়ে তার চিন্তা করতে থাকার ফলে শেষ পর্যন্ত তার লেখা "পশ্চিম-ভ্রমণের বৃত্তান্ত"নামে পৌরানিক উপন্যাসটিতে যুবার চরিত্রটি দেখা দিল জীবন্তভাবে,কিন্তু এক অভিনব মূর্তিতে তার শরীরটা মানুষের হলেও মাথাটা শুয়োরের।