থুচিয়া জাতি একটি অতি প্রাচীন সংখ্যালঘু জাতি। তাঁরা প্রধানতঃ মধ্য চীনের হুপেই প্রদেশ ও হুনান প্রদেশে থাকেন। পুরুষরা চাষাবাদ আর নারীরা বস্ত্রবয়নের কাজ করেন। ফুরুচেন হুনান প্রদেশের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। ২ হাজার বছর আগে ওয়াং নামে থুচিয়া জাতির সর্বোচ্চ প্রশাসক এই থানায় থাকতেন। তাই ফুরুনচেনও ওয়াংছং গ্রাম বলে পরিচিত। থানায় প্রবেশ করলে রাস্তার দু'পাশে একটির পর একটি কাঠের বাড়িঘর আমাদের চোখে পড়ে। দুই তিন তলার মতো উচ্চুঁ এই ধরনের বাড়িঘরের নীচে কয়েকটি কাঠের স্তম্ভ ব্যবহার করা হয়েছে, এগুলো বাড়িঘরের কাঠামো মজবুত রেখেছে। এই ধরনের বাড়িঘর পাহাড়ের উপরে বা নদীতে নির্মান করা হয়েছে ।
থুচিয়া জাতির মেয়ে ওয়েনচ্যুয়নের তিনকলার মতো বাড়ি এই থানার সবচেয়ে পুরানো বাড়ি বলা যায়। তিনি বলেছেন, থুচিয়া জাতির লোকেরা পাহাড় ও নদীর পাশে থাকতে পছন্দ করেন, সুতরাং তাদের বেশির ভাগ বাড়ি সাধারণতঃ পাহাড়ের মাঝখানের দিকে বা নদীতে নির্মান করা হয়েছে। বাড়ির নীচে অসমতল আর বন্যপ্রানীর আক্রমনের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য থুচিয়া জাতির লোকেরা এই ধরনের কাঠের স্তম্ভের ওপর বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
এমন বাড়িঘরের নীচ তলা সাধারণতঃ জ্বালানী কাঠ রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়, লোকদের থাকার জন্য নয়। দু'তলা তো লোকদের থাকার কক্ষ। ওয়েনচ্যুয়েনের বাবা থুচিয়া জাতির পুরাকীর্তি সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন। তার বাড়ি কৃষি সামগ্রি, চুল্লী আর নানা স্থানে ব্যবহারযোগ্য জামা-পোষাক সহ থুচিয়া জাতির রকমারি পণ্যদ্রব্যে পরিপূর্ণ। ওয়েনচ্যুয়েন বলেছেন, তিনি ও তাঁর পরিবার পরিজন এখন এখানে থাকেন না। ফুরুনচেন ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের থুচিয়া জাতি সম্পর্কিত ইতিহাস জানিয়ে দেবার জন্য তাদের পুরানোবাসায় এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এখন এই থানায় বেশির ভাগ পরিবারের দুই জায়গায় বাড়িঘর আছে। থুচিয়া জাতির কিছু কিছু পরিবার এই জাতির স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দু'তিন তলাবিশিষ্ট বাড়িঘর বা পাকা দালানও নির্মান করা হয়েছে।
ফুরুনচেন থানায় তৈরী হস্তশিল্পজাত দ্রব্য স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। রেশমী কাপড় বোনা থুচিয়া জাতির একটি সুদীর্ঘকালীন আর জনপ্রিয় হস্তশিল্প। এগারো-বারো বছর বয়স্ক মেয়েরা তাঁতে রঙিন মূতা দিয়ে সৌন্দর্যময় নানা রকমের ডিজাইনমূচক রেশমী কাপড় বোনার কাজ শুরু করে। বিয়ের সময়ে জানালা ও দরজার পর্দা, চাদর ইত্যাদি হিসেবে তাদের নিজেদের বোনা রেশমী কাপড় ব্যবহার করা দরকার।
সিয়ানহোন্ফা নামে এক বৃদ্ধ একটি রেশমী কাপড় বোনা কুটিরের মালিক। দশ-বারো জন থুচিয়া জাতির মহিলা তাঁর কুটিরে চাকরি করেন। তাঁর নতুন নির্মিত বাসায় থুচিয়া জাতির বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নানা রকমের রেশমী কাপড় টাঙ্গানো হয়। তিনি বলেছেন, রেশমী কাপড় থুচিয়া জাতির তাঁতে বোনা করা হয়েছে। রেশমী কাপড় বোনার জন্য আগে রেশমী মূতা ব্যবহার করা হতো এবং এখন পশমী মূতা ব্যবহার করা হয়। মূতার রঙের বৈচিত্র্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। চালের তৌফু থুচিয়া জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ধরনের খাবার। ম্যাদাম ইয়াংয়ের জলখাবার রেস্তারাঁ একটি ছায়াছবিতে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে তা খুব পরিচিত। এখন এই থানার স্থানীয় লোকজন হোন বা এই থানা ভ্রমণে আসা পর্যটক-রাই হোন না কেন, সবাই ইয়াং পরিবারের এই চালের তৌফু রেস্তোরাঁয় এসে খেতে চান।
ম্যাদাম ইয়াংয়ের তৈরী চালের তৌফু খেতে সুম্বাদ। তার রেস্তারাঁর ব্যবসা ভাল চলছে। তার দুই সন্তানবিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে এবং এখন শহরে চাকরি করে। ম্যাদাম ইয়াং বলেছেন, তিনি তাঁর জন্মস্থল এই থানা পছন্দ করেন এবং তাঁর চালের তৌফু তৈরী করতে ভাল লাগে।
|