২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এশিয়ার কিছু কিছু দেশের বার্ড ফ্লুর বিস্তার হচ্ছে। এখন চীন, থাইল্যান্ড, কাম্পুচিয়া, ভিয়েত্নাম, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি দেশে বার্ড ফ্লুর ভাইরাস আবিষ্কারের বিপোর্ট পাওয়া গেছে। কোটি কোটি মুর্গী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বা মেরে ফেলা হয়েছে। ভিয়েত্নাম ও থাইল্যান্ডে মানুষের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
বার্ড ফ্লু হচ্ছে হাঁসমুর্গী, কপোত উত্যাদির ফ্লুর সংক্ষিপ্ত নাম। এ.শ্রোণীর ফ্লুর ভাইরাস থেকে জনিত এই সংক্রামক রোগ প্রধানতঃ হাঁসমুর্গী,কপোত ইত্যাদির দেহে হয়। রুগ্ন হাঁসমুর্গী ও কপোতের সারা দেশে বা শ্বাসযন্ত্রে রোগের উপসর্গ দেখা যায়। নিস্তেজতা, কাশি, হাঁচি, চোখের পানি ইত্যাদিই হচ্ছে এই রোগের উপসর্গ। বার্ড ফ্লুর প্রকোপ দেখা দেয়ার সময়ে হাঁসমুর্গী ও কপোতের রোগাক্রান্তহার ও মৃত্যুহার শতকরা একশোভাগ হতে পারে। তাই বিশ্ব পশুস্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগকে এ.শ্রেণীর পশুরু সংক্রামক রোগ হিসেবে ধরে নিয়েছে। চীনও এই রোগকে প্রথমশ্রেণীর পশুর সংক্রামক রোগ বলে ধরে নিয়েছে।
মানবজাতির প্রতি বার্ড ফ্লুর হুমকি সম্পর্কে আনুষংগিক গবেষণার ফলাফলে প্রমাণিত হয়েছে যে, মানুষের দেহ স্বাভাবিক অবস্থায় নিরাপদে বার্ড ফ্লুর ভাইরাস কেবল এই ভাইরাস মানুষের ক্ষতি করতে পাবে।প্রাথমিক জেনোম পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, বর্তমানে এই ভাইরাস শুধু হাঁসমুর্গী ও কপোত থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে, মানুষে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে না।
মানুষের দেহে বার্ড ফ্লুর বাইরাসর সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রথমতঃ দ্রুত বার্ড ফ্লুর ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁসমুর্গী উও কপোতকে আবিষ্কার করে সেগুলোকে মেরে ফেলতে হয়, যাতে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের উত্স নির্মূল হয়। দ্বিতীয়তঃ বার্ড ফ্লুর ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁসমুর্গী ও কপোতের সংগে মানুষের সংস্পর্শ যথাসম্ভব এড়াতে হয়, যাতে মানুষের দেহে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ কমানো যায়। বিষমুক্তকরণ ও হাঁসমুর্গী কপোত জবাইয়ের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের কাজ শুরু করার আগে রোগ প্রতিষেধক ওষুধ খেতে হয়, কাজের সময়ে মুখোশ, হাতমোজা ও ভাইরাস প্রতিরোধক পোশাক পরতে হয় এবং কাজ শেষে জায়গাটা বিষমুক্ত করতে হয়। তৃতীয়তঃ রুগ্ন হাঁসমুর্গী কপোতের সংস্পর্শ এসেছিলেন এমন লোকজনের উপর নিবিড় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়, বার্ড ফ্লুর ভাইরাসে আক্রান্তদের আবিষ্কৃত হলে সংগে সংগে তাদের হাঁসপাতালে পাঠিয়ে সংগে নিরোধ করতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জনসাধারণকে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় হাসঁমুর্গী ও ডিম সিদ্ধ করে খেতে হয়। কারণ বার্ড ফ্লুর ভাইরাস সাধারণতঃ সওর ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে বেঁচে থাকতে পারে না।
গতবছর এশিয়ায় আবিভূত সার্সের ভাইরাসের সংগে বার্ড ফ্লুর পার্থক্য হচ্ছে এই যে, বার্ড ফ্লুর ভাইরাস নতুন আবিষ্কৃত কোনো ভাইরাস নয়। চীনের কৃষি মুন্ত্রনালয়ের বিশেষজ্ঞ চিয়া ইউ লিং বলেছেন, বার্ড ফ্লু নিবারণ ও চিকিত্সার ক্ষেত্রে মানবজাতির একশো বছরের অভিজ্ঞতা আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, হাঁসমুর্গী কপোতের বার্ড ফ্লু পুরোপুরি নিবারণ করা যায়। বার্ড ফ্লু দেখা দিলে সময়সতো দৃঢ়ভাবে কড়া অবরোধ, রুগ্ন হাঁসমুর্গী কপোত সম্পূর্ণভাবে মেরে ফেলা ও জায়গাটা বিষমুক্তকরণ ইত্যাদি ব্যবস্থা নিলে তা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায়।
|