আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি চীনের ছিনহাই প্রদেশের কৃষি ও পশুপালন এলাকার নতুন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক জায়গায় গিয়ে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । কৃষক ও পশুপালকরা তাদের চিকিত্সাজনিত বোঝা লাঘবের জন্য সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় সংবাদদাতা অনুভব করেছেন যে ,ছিনহাই প্রদেশের সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থার তিনটি প্রধান উজ্জ্বল দিক জনগণের গভীর সমথর্ন পেয়েছে ।
প্রথম দিক প্রসূতিদের বিনামূল্যে ক্লিনিকে প্রসবের ব্যবস্থা । আথির্ক অসচ্ছলতার কারণে অতীতে ছিনহাই প্রদেশের কৃষক ও পশুপালকদের অনেক প্রসূতি বাড়ীতেই সন্তান প্রসব করতেন । যোগাযোগ ও চিকিত্সার শর্তের সীমাবদ্ধতায় সন্তান প্রসব করাটাকে নারীদের জীবনের ভীষণ বিপজ্জনক ব্যাপার বলেই মনে করা হতো । বতর্মানে দরিদ্র প্রসূতিদের নিরাপদ প্রসবে সাহায্য করার জন্য ছিনহাই প্রদেশ সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক জায়গায় প্রথমে বিনামূল্যে স্বাভাবিক প্রসব করানো ব্যবস্থা প্রবতর্ন করেছে ।
গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে পশুপালক চুও মা ছিনহাই প্রদেশের হাইনান তিব্বত জাতির স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের কুয়েনান জেলার সেন তো মহকুমার কেন্দ্রীয় ক্নিনিকে সুষ্ঠুভাবে একটি ছেলে প্রসব করেছে । তিনি হলেন গোটা পরিবারের কয়েক প্রজন্মের লোকদের মধ্যে প্রথম প্রসূতি যিনি ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করেছেন । চুও মা'র পাঁচ সদস্যের পরিবারের বাষির্ক আয় দুই হাজার ইউয়ানের মতো । দুই হাজার তিন সালে তার পরিবার পঞ্চাশ ইউয়ান দিয়ে সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থায় যোগ দিয়েছে । এখন তার ক্লিনিকে প্রসব করানো , ওষুধপত্র , প্রতিষেধক টিকা ও শয্যা সহ প্রায় দু'শো ইউয়ানের ফি দিতে হয় না ।
এই ক্লিনিকের ডাক্তার হো মিন লু বলেছেন , নতুন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা প্রবতর্নের আগে কৃষক ও পশুপালকদের অধিকাংশ প্রসূতি বাড়ীতেই প্রসব করতেন । সাধারণত: দশটি শিশুর মধ্যে দুটি শিশুর মৃত্যু হতো । এখন এই ব্যবস্থা প্রবতর্নের পর মহকুমার কৃষক ও পশুপালকদের সব প্রসূতি ক্লিনিকে প্রসব করাতে এসেছেন । প্রসূতি ও শিশুদের মৃত্যুহার বিরাটমাত্রায় কমেছে ।
ছিনহাই প্রদেশের সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থার দ্বিতীয় উজ্জ্বল দিক হচ্ছে মহকুমার ক্লিনিকের একদিনের মধ্যেই হিসাব চুকানোর ব্যবস্থা ।
হাই পেই তিব্বত জাতির স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের গাং ছা জেলার হার্গে মহকুমার ক্লিনিকে হিসাব চুকিয়ে বেরুনোর জন্য প্রস্তুত পশুপালক ছাই সানের সংগে আমাদের সংবাদদাতার সাক্ষাত্ হয় । তিনি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন নিয়েছেন । ব্যয় হয়েছে আটশো ইউয়ান । কিন্তু খরচ মিটানোর সময়ে তিনি মাত্র চারশো ইউয়নের কিছু বেশী অর্থ দিয়ে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে এসেছেন । সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা থেকে চিকিত্সার ব্যয়ের যে অংশ তিনি পেতে পারেন সে অংশ ক্লিনিক তার হয়ে চুকিয়ে দিয়েছে এবং পরে সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থা থেকে পাবে । ফলে আই。ডি。কার্ড ,সমবায় চিকিত্সা কার্ড ,ক্লিনিকে থাকাকালের ব্যয়ের হিসাবের তালিকা ,মেডিকেল রেকর্ডের অটোটাইপ ও রোগ নিণর্য়পত্র নিয়ে মহকুমার সমবায় চিকিত্সার কায্যালয়ে গিয়ে আবেদন জানানো ,ফরম লেখা ,অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা ইত্যাদির আনুষ্ঠানিকতার ঝামেলা থেকে তিনি রেহাই পেয়েছেন । তিনি আনন্দের সংগে বলেছেন ,এতে শুধু যে আমার একটুও কষ্ট হয় নি তাই নয় ,বরং কত ব্যয় হয়েছে কত উপকার হয়েছে তা-ও স্পষ্ট জানতে পারি ।
তৃতীয় উজ্জ্বল দিক হলো খুবই দরিদ্রদের বিনামূল্যে সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থায় যোগ দিতে ও বিশেষ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে দেয়ার ব্যবস্থা ।
দুই হাজার তিন সালে হুয়াংনান তিব্বত জাতির স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের থংরেন জেলার বাও আন টাউনের তুং ছেন ওয়াই গ্রামের অধিবাসী আন হোন ইউ'র স্ত্রীর পায়ের হাড় ভেঙেছে । ক্লিনিকে চিকিত্সা ও অপারেশন নিতে প্রায় ত্রিশ হাজার ইউয়ান অর্থ খরচ হয়েছে । চিকিত্সা-জনিত গুরুতর বোঝার জন্য গোটা পরিবারের অথর্নীতি প্রায় অচল হয়ে পড়ে । আন হোন ইউ নিজের পরিবহনে ব্যবহৃত কৃষি গাড়ী বিক্রি করতে বাধ্য হন । নতুন সমবায় চিকিত্সা ব্যবস্থায় যোগ দেয়ার ফলে তার পরিবারের অবস্থা অনুসারে তিনি নিয়ম অনুসারে শুধু চিকিত্সা ব্যয়ের দুই হাজার সাতশো উনিশ ইউয়ানই ফেরত্ পান নি , বরং জেলার নতুন সমবায় চিকিত্সা তহবিলের এক লক্ষ চল্লিশ হাজার ইউয়ানের বিপদ মোকাবেলা তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ইউয়ানের বড় ব্যাধির চিকিত্সার সবোর্চ্চ ত্রাণ অর্থও পেয়েছেন । আন হোন ইউ'র কৃতজ্ঞতার অন্তই রইলো না ।
|