v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-08 17:10:17    
পশ্চিম চৌ-এর ইতিকথা

cri
    "বসন্ত ও শরত্" এবং "যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়পর্বে" সামাজিক অবস্থা পশ্চিম চৌ-এর তুলনায় লক্ষণীয় উন্নতি লাভ করে । এই উন্নতির বৈশিষ্ট্য হল : এক , লৌহ আবিস্কার এবং তার ব্যবহার যা সামাজিক উত্পাদন-শক্তিকে উন্নত করে তোলে । নির্ভরযোগ্য লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায় যে , খৃঃ পূঃ ৫১৩ সালে চিন রাজ্যের আইন একটি লৌহনির্মিত ত্রিপদপাত্রে ঢালাই করে লিখিত হয়েছিল । এ থেকে বুঝা যায় , সুদূর খৃঃ পূঃ ষষ্ট শতাব্দীতেই চীন লৌহ ঢালাইয়ের কৌশল আয়ত্ত করেছিল । এই বিবরণ যে খুবই নির্ভরযোগ্য সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে প্রমাণিত হয় যে , "বসন্ত ও শরত্" সময়পর্বের শোষার্ধে এবং "যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়পর্বে লৌহের ব্যবহার খুব ব্যাপক ছিল । হোপেই প্রদেশের সিংলোং জেলায় বহু পরিমাণে লৌহনির্মিত ঢালাই কাজে ব্যবহৃত ছাঁচ ভূগর্ভ থেকে পাওয়া গিয়েছে । যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়পর্বে  লৌহনির্মিত যন্ত্রপাতি এবং অস্ত্রশস্ত্র হোনান প্রদেশের হুইসিয়ান জেলায় বহু কবরের মধ্যে আবিস্কৃত হয়েছে ।

    লৌহ আবিস্কারের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি এবং ভাল কৃষি ও হস্তশিল্প উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি হতে থাকে । তার ফলে কৃষি এবং হস্তশিল্প অগ্রগতি লাভ করে এবং তা ক্রয়-বিক্রয় ক্রিয়াকলাপকে প্রাণবন্ত করে তোলে । সেই সঙ্গে রাজকুমারদের দুর্গগুলি শহর ও নগরে পরিণত হতে থাকে । যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়পর্বে দশ হাজার পরিবার বসবাসকারী শহরের সংখ্যা খুব কম ছিল না । যেমন , ছি রাজ্যের (বর্তমানকালের শানতোং প্রদেশ) রাজধানী লিনজিতে সত্তর হাজার পরিবার বাস করত । ওয়েই রাজ্যের (বর্তমানকালের হোনান প্রদেশ ) রাজপথে দিবারাত্রি যানবাহন চলাচল করত । এ সব থেকে জানা যায় আলোচ্য যুগের শ্রীবৃদ্ধি ও সঙ্গতির কথা ।

    ক্রয়-বিক্রয় প্রথা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পণ্যবিনিময়ের উপায় হিসেবে মুদ্রা ব্যবহার প্রচলিত হয় । চীন দেশে মুদ্রা ব্যবহারের ইতিহাস সুদীর্ঘ । কিন্তু , যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়পর্বের আগে ব্যাপকহারে ধাতুমুদ্রার ব্যবহার প্রচলিত ছিল না । ঐ কালের বহু বাণিজ্য কেন্দ্র নিজ নিজ ধাতুমুদ্রা তৈরি করত । এই ধরণের দুই শতটির অধিক কেন্দ্রের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে ।

    দুই , উত্পাদন-শক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভূমিস্বত্বের প্রথারও পরিবর্তন হতে থাকে । পশ্চিম চৌ কাল থেকে অভিজাত সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরাই সব জমির মালিকানাস্বত্ব ভোগ করছিল । জমি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিল । বসন্ত ও শরত্ সময়পর্বের মধ্যভাগ থেকে কিছু কিছু জমি অভিজাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে নবোদিত জমিদারশ্রেণী এবং কৃষকদের নিকট হস্তান্তরিত হতে থাকে । পরবর্তী যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়পর্বে জমি ক্রয়-বিক্রয় একটি সাধারণ ঘটনারূপে পরিণত হয় । নবোদিত জমিদাশ্রেণী রাজকুমার অথবা মনত্রীদের কাছ থেকে বিরাট জমি নিয়ে তা ভূমিকর্ষকদের নিকট ইজারা দিতেন এবং তার পরিবর্তে খাজনা হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণে কৃষি-উত্পাদিত দ্রব্য গ্রহণ করতেন । এই ভাবে ক্রমশঃ জমির খাজনা হিসেবে বাধ্যতামূলক বেগার প্রথার পরিবর্তে দ্রব্যদান প্রথা প্রচলিত হয় । জমির খাজনা প্রথার এই পরিবর্তনের ফলে ভূমিকর্ষকদের উপর ভূস্বামীদের কর্তৃত্ব বহুলাংশে দুর্বল হয়ে পড়ে ।

    তিন , উত্পাদন-শক্তির মানোন্নতি কেবলমাত্র ভূমিস্বত্বাধিকারীদের ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনে নি , তার সঙ্গে স্থানীয় অর্থনীতিক ক্ষেত্রেও সাধারণভাবে অগ্রগতি এনে দেয় । পশ্চিম চৌ -এর অধীনে সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতিক অঞ্চল ছিল ওয়েইনদী উপত্যকা । বসন্ত ও শরত্ সময়পর্বে সমগ্র পীতনদী উপত্যকা খুব সমৃদ্ধিশালী অঞ্চলে পরিণত হয় । তত্কালীন ছি (বর্তমানে শানতোং), চিন (বর্তমানে শানসী), চেং (বর্তমানে হোনান প্রদেশের মধ্যভাগ), সোং (বর্তমানে হোনান প্রদেশের পূর্বভাগ), ছিং (বর্তমান সেনসী প্রদেশ), ছু ( বর্তমান হুপেই প্রদেশ) ইত্যাদি সামন্তরাজ্যের অর্থনীতিক অবস্থা সমৃদ্ধিলাভ করে । বসন্ত ও শরত্ সময়পর্বের শেষার্ধে উ (বর্তমানকালের চিয়াংসু) , ইয়ুয়ে ( বর্তমানকালের চেচিয়াং ) রাজ্যগুলি যখন ক্ষমতা বিস্তারের জন্য পারস্পরিক যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত ছিল । তখন ইয়াংসি নদীর নিম্ন অববাহিকা চৌ রাজবংশের অর্থনীতিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে । প্রাচীন যুগের সংরক্ষিত বস্তু এবং পুরানিদর্শন অধ্যয়ন করে স্থানীয় অর্থনীতিক অগ্রগতি জানা যেতে পারে ।      পশ্চিম চৌ কালে যে সকল তাম্র-নির্মিত দ্রব্য ভূগর্ত থেকে আবিস্কৃত হয়েছে তাদের অধিকাংশই চৌ-রাজপ্রাসাদের অথবা চৌ-রাজকর্মচারীদের ব্যবহৃত জিনিস ছিল । প্রকৃতপক্ষে সামন্ত রাজাদের ব্যবহৃত ঐ জাতীয় জিনিস এখনও আবিস্কৃত হয়নি । অথচ পূর্ব চৌ সময়পর্বের প্রাপ্ত তাম্র-নির্মিতত দ্রব্যসমূহের অধিকারী ছিলেন সামন্তরাজারা । এ থেকে বসন্ত ও শরত্ সময়পর্বের সংস্কৃতি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্রমবিকাশের কথা জানা যায় ।