v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-07 10:00:57    
কুবুম মন্দির

cri
    কুবুম মন্দির তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের গেলুগ্পা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা সুং খা পার জন্মস্থল । এটাই চীনের অন্যতম প্রসিদ্ধ তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের মন্দির । ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তার বিরাট প্রভাবশালী শক্তি আছে । সুতরাং ছিনহাই প্রদেশে ভ্রমনে গেলে কুবুম মন্দিরে যেতে হয় ।

    ১৫৬০ সালে কুবুম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় । ঐখন থেকে তা ৪ শো বছরেরও বেশী পুরানো । এই মন্দিরের মেন গেটের সামনে পরিপাটিভাবে ৮টি সাদা প্যাগোডা দাঁড়িয়ে আছে । এটাও এই মন্দিরের এক ধরনের চিহ্ন । মন্দিরের সামনের চত্বরে ফেরিওয়ালারা নানা রকমের তিব্বতী হস্তশিল্প দ্রব্য বিক্রি করে , দলের পর দল দেশী বিদেশী পর্যটকরা আসেন , এই মন্দিরের বাইরে জোরালো বানিজ্যিক পরিবেশ বিরাজ করে । প্রথমে সংবাদদাতার চিন্তা এই যে , এই মন্দিরে ভ্রমনে পর্যটকদের সংখ্যা অতিরিক্ত বেশি বলে ধর্মের রহস্যময় পরিবেশ নষ্ট হতো। তবুও ধীরে ধীরে সংবাদদাতার চিন্তা চলে গেল ।

    মন্দিরের পেছন দিকের একটি ছোট প্রাঙ্গনে সংবাদদাতা সৌভাগ্যবশতঃভাবে মন্দিরের প্রধান , জীবিত বুদ্ধ সিনার সংগে সাক্ষাত করলেন । এই প্রাঙ্গন হান আর তিব্বতী জাতির মিশ্র স্থাপত্যশিল্পে নির্মিত । সবুজ টালী ও ছাদ হান জাতির স্থাপত্যের রীতিনীতি আর সিড়ির মতো লাল অবলম্বন , দেয়াল ও জানালাই তিব্বতী জাতির রেওয়াজ । বৈঠকখানায় সংবাদদাতা দেখলেন , সিনা জীবিত বুদ্ধ বেঞ্চির উপরে বসলেন । তার পরনে লাল রঙের কাষায় । তিনি দয়ালু আর তার গড়ন উপযুক্ত । সিনা জীবিত বুদ্ধ হান ভাষা বলতে না পারার জন্য তার সহকারী সিয়াক্রিট জীবিত বুদ্ধ কুমবুম মন্দির সম্বন্ধে বর্ননা করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    কুমবুম মন্দিরের চারটি ইনস্টিটিউট আছে । তারা হচ্ছেঃ এক্স্টেরিক ট্রাডিসিন অফ সুট্রাস্ স্কুল , তানট্রিক স্কুল , মেডিক্যাল কলেজ আর ক্যালেন্ডার বিষয়ক টাইম হুইল। দেয়াল চিত্র, সূচীকর্ম আর মাখন ফুল কুমবুম মন্দিরের তিন ধরনের প্রসিদ্ধ হস্তশিল্প দ্রব্য বলে মনে করা হয় । আরমাদের মন্দির কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি আর তা ভাল অবস্থায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে । গত দশাধিক বছরে মেরামত আর আরো মজবুত আরার কাজ চালাবার মাধ্যমে কুমবুম মন্দির আরো ঝকঝকে হয়ে উঠেছে । মন্দিরের পথ ও পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে ।

    সিনা জীবিত বুদ্ধের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর সংবাদদাতা কুবুম মন্দিরে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন । চার শো বছরেরও বেশী পুরানো মন্দিরে পর্যটক ভিড় ছিল । পুরানো দেয়াল আর রঙ্গিন চিত্রাংকন থেকে তার অতীত বোধ করা যায় । জানা গেছে , মন্দিরটি নির্মিত হবার আগে একটি বুদ্ধি গাছ ছিল । তার পর গাছটির বাইরে একটি সাদা প্যাগোডা নির্মিত হয় । পরে প্যাগোডার বাইরে মন্দিরটি গড়ে উঠেছে ।

    লামাদের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করার কন্ঠস্বর অনুসরণ করে' সংবাদদাতা সোনালী টালী দিয়ে বসানো বড় সোনালী টালী ভবনের সামনে এসে বুদ্ধি গাছ আর প্যাগোডা পরিদর্শন করলেন । সকল তিব্বতী বৌদ্ধ মন্দিরের বড় সোনালী টালী ভবনের মতোই এখানকার ভবনের সামনের বারান্দায়ও প্রচুর ধর্মাবলম্বীরা অত্যন্ত অনুগতভাবে উপাসনা করছিলেন । উপাসনার সময়ে তাদের মাথা যে মাটিতে স্পর্শ করতো , তাতে মেঝ মাজতে মাজতে চকচকে হয়েছে । গাইড মিস ছিচেন বলেছেন , এখানে উপাসনা করতে হলে এক লক্ষ বারের মতো এই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় । তিনি বলেছেন ,

    উপাসনার যে এত বেশী এই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় , তার কারণ এই যে , সুং খা পা ভানতের জন্মস্থলে একটি বুদ্ধি গাছ উঠেছে , গাছের উপরে এক লক্ষ পাতা আছে । প্রতি পাতার উপরে একটি বৌদ্ধ মূর্তি থাকে । সুতরাং এই এক লক্ষটি বুদ্ধ মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধাতর্পন করতে হয় । এই উপাসনার কাজ সম্পন্ন করলে অল্পবয়সীদের জন্য তিন মাস সময় লাগে আর বয়স্কদের জন্য অর্ধেক বছরেরও বেশী সময় প্রয়োজন ।

    ধর্মাবলম্বীরা যে এত অনুগতভাবে উপাসনা করেন , তাতে তাদের আনুগত্য বোধ করা যায় । তাদের মনে বুদ্ধি গাছের প্রতিটি পাতার উপরে একটি বৌদ্ধ মূর্তি আছে । এই সব বৌদ্ধ মূর্তি তাদের নির্ভরযোগ্য বিশ্বাস আর জীবনযাপনের লক্ষ্য । এই লক্ষ্য হাসিল করার জন্য তারা অসাধারণ অধ্যবসায় দেখা দিয়েছেন । বড় ভবনে প্রবেশ করে চোখে পড়ে একটি উঁচু বৌদ্ধ প্যাগোডা । রুপ কথা অনুযায়ী এই প্যাগোডার ভিতরে ঐ বুদ্ধি গাছও আছে । মন্দিরের একজন লামা বলেছেন , গাছটি এখনো জীবিত আছে । লামা ভবনের বাইরের একটি গাছের দিকে দেখিয়ে বললেন , এই নতুন গাছ আসলে ঐ বুদ্ধি গাছের শাখা , যা প্যাগোডার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে । তার এই মন্তব্য সত্যি আর বৈজ্ঞানিক কি না , তবুও আমি বিশ্বাস করি , এই বুদ্ধি গাছ দেখার সংগে সংগে আমি প্রানের মহত্ব আর মূল্য বোধ করেছি । এই ক্ষেত্রে দিন রাত উপাসনা করা এই সব অনুগত তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংগে আমার মিল আছে । উপাসনার জন্য তারা যে আনুগত্য দেখিয়েছেন , ভবনের বাইরের এই বুদ্ধি গাছই এই সব কিছুর প্রমান । আমি মাটি থেকে বুদ্ধি গাছের একটি পাতা কুড়িয়ে নিলাম , পাতার উপরে বুদ্ধের কোনো ডিজাইন দেখা যায় না । পাতাটি তুলে ধরে আমি নিজের মনের শান্তি অনুভব করেছি ।

    মন্দিরে পরিদর্শনের জন্য লাবাপিনছুও সংবাদদাতার সংগে ছিলেন । তিনি তিব্বতী ভাষায় জানালেন , মন্দিরে তারা ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করেন এবং মাঝে মাঝে অতিথিদের গাইডের কাজও করেন ।

    মন্দিরে আমরা ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করি আর ধর্ম ক্রিয়া করি । তা ছাড়া যখন পর্যটকরা মন্দির পরিদর্শন করতে আসেন , তখন আমরা তাদের ভ্রমণের কাজও সাহায্য করি । যখন তারা মন্দিরে ঘুরে ঘুরে দেখেন , তখন আমরা তাদের পথনির্দেশনা করি এবং তাদের মন্দিরের বিস্তারিত অবস্থা বর্ননা করি । কিন্ত্ত আমাদের প্রধান কাজই ধর্মীয় গ্রন্থ অধ্যয়ন করা । মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার পর পর্যটকরা অধিক থেকে অধিকতর হয়ে উঠলেন । তবুও সংবাদদাতা কোনো হৈচৈ বোধ করেন নি । কুমবুম মন্দির সাক্ষাত্কারে সংবাদদাতা তিব্বতী বৌধ ধর্মের একটি প্রধান মতবাদ জানতে পেরেছেন , অর্থাত মানুষের উচিত সাধারণ ও শান্ত মন বজায় রাখা এবং মনের বুদ্ধি গাছ সংরক্ষণ করা ।