v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-11 22:07:03    
তুলো-চাষ-রাজ সুং চিয়া ছি

cri
    গত ৬ই নভেম্বর "২০০৪ সালের চীনের জনকল্যাণব্রত উন্নয়ন ফোরাম অথার্ত্ জনকল্যাণব্রতে নিবেদিতপ্রাণদের বক্তৃতা সভা" পেইচিংয়ের মহা গণভবনে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে । সভাপতি মঞ্চে একজন সুস্থ সবল কৃষকের চমত্কার বক্তৃতা সভায় অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ ও সারাদেশের বিভিন্ন স্থানের পাঁচশোরও বেশী প্রতিনিধির মুহুমূর্হু করতালি কুড়িয়েছে । এই বক্তার নাম সুং চিয়া ছি । তিনি হলেন চীনের হোনান প্রদেশের হুয়াই ইয়াং জেলার পাই লাউ মহকুমার দা সুং গ্রামের একজন কৃষক । দুই হাজার দুই সালের পর তিনি এই তৃতীয়বার পেইচিংয়ে এসে পুরস্কৃত হয়েছেন ।

    চীনের গৃহযুদ্ধের আমলে সুং চিয়া ছি'র জন্ম । ছোটবেলা থেকেই তার কষ্ট ও পরিশ্রমের প্রতি নিভর্য় ইস্পাত-কঠিন মনোবল গড়ে উঠে ।

    বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের প্রথমদিকে পেটের খাবার জুটাবার জন্যে কিশোর সুং চিয়া ছি একাই সিংচিয়াংয়ে যান এবং চীনের প্রথম কিস্তির সিংচিয়াংয়ের সাহায্যদাতা নিমার্তায় পরিণত হন । সেখানকার খামারে তিনি অদম্য মনোবল নিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে একজন উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিবিদ হন এবং অনেকবার খামারের পুরস্কার পান । বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে তিনি জন্মভূমি হুয়াই ইয়াং জেলায় ফিরে এসে সড়ক ব্যুরোতে চাকরি নেন । সড়ক রক্ষণাবেক্ষনে তিনি স্বণোর্জ্জ্বল "উদ্ভাবন কাপ"অজর্ন করেন এবং প্রদেশের শ্রমবীরের খেতাবে ভূষিত হন ।

    সুং চিয়া ছি প্রত্যেকবার জন্মভূমিতে ফিরে এসে গ্রামবাসীদের চাষাবাদের পরিশ্রমের দৃশ্য দেখেছেন । তারা সারা বছর পরিশ্রম করে শুধু অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধান করতে পারছেন দেখে তার মনটা খুব ভারাক্রান্ত হয় । উনিশশো ছিয়ানব্বই সালে তিনি নিদির্ষ্ট সময়ের আগে অবসর নিয়ে জন্মভূমিতে ফিরে এসে কৃষিকাজে নিয়োজিত হন এবং তার দুটি পরিশ্রমী হাত ও মেধা দিয়ে গ্রামবাসীদের জন্য সমৃদ্ধি আনয়নের একটি ভালো উপায় অন্বেষণের সিদ্ধান্ত নেন । তিনি তার নিজ বাড়ীর দুই একরের বেশী জমি দৃষ্টান্তমূলক জমি হিসেবে ব্যবহার করেন এবং নিজের ব্যয়ে চারটি প্রদেশের কৃষিবিজ্ঞান আকাডেমী ও কিছু উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংগে যোগাযোগ করে সবোর্ত্কৃষ্ট বীজ ও উন্নত প্রযুক্তি আমদানী করেন । একটানা চার বছর ধরে তার চাষ করা উন্নত ধরণের ভুট্টার একর-প্রতি উত্পাদন পরিমাণ ছয় হাজার কিলোগ্রামের সবোর্চ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে । তার চাষ করা জি.কে.-বারো গো খাং পঁচানব্বই-এক উন্নত জাতের তুলো বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং একরপ্রতি স-বীজ তুলোর গড়পড়তা উত্পাদন পরিমাণ তিন হাজার বিশ কিলোগ্রামের জাতীয় সবোর্চ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে । সুং চিয়া ছি'র তুলো ক্ষেতে একটি তুলোগাছের বাহাত্তরটি তুলোকোষ ধারণের শাখায় দু'শো চুয়াত্তরটি তুলোকোষ ধরেছে । দুই হাজার দুই সালে জাতীয় তুলো প্রদশর্নীতে তিনি আনন্দের সংগে দশ হাজার ইউয়ান পুরস্কার গ্রহণ করেন ।

    সুং চিয়া ছি অনুভব করেন যে ,তার কাঁধের উপর ভার আরো বেড়েছে । তিনি প্রথমে তার জন্মভূমির সেই সব মজুরি খাটতে ,ব্যবসা করতে আর ফসলের উচ্চফলন ফলাতে অক্ষম দুবর্ল কৃষকগোষ্ঠীর কথা ভাবেন । তাই তিনি এই দশ হাজার ইউয়ান পুরস্কারের একাংশ দিয়ে একটা অটো-রিকশা ও কিছু প্রযুক্তি তথ্য কিনলেন এবং বাকী অংশ ও তার প্রতিমাসের অবসরভাতা ব্যয় করলেন কৃষকদের কৃষিপ্রযুক্তি শেখানোর খাতে । এই কয়েক বছরে তিনি বসন্তকাল হোক,গ্রীষ্মকাল হোক, শরত্কাল হোক, শীতকাল হোক আর ছুটির দিনগুলো হোক সবার্ন্ত:করণে সবক্ষণ কৃষিপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে চলেছেন । স্থানীয় চারটি জেলার বিশটিরও বেশী মহকুমায় তার পদচিহ্ণ রয়ে গেছে । তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই জনসাধারণের প্রাণঢালা অভ্যথর্না পেয়েছেন ।

    চাষাবাদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আর বিনামূল্যে কৃষকদের কৃষিপ্রযুক্তি শেখানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য দুই হাজার দুই সালে তিনি আমন্ত্রণক্রমে চীনের কৃষিপ্রযুক্তি সমিতির তুলো কমিটির প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং এই কমিটির সদস্য নিবার্চিত হন । এরপর তিনি নিজের ব্রতকে জন্মভূমি ও জনসাধারণকে সমৃদ্ধিশালি করে তোলার মহাব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন এবং নিজের ভাগ্যকে জন্মভূমির ভাগ্যের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করে ফেলেন । তিনি পেইচিং , প্রাদেশিক রাজধানী ও দক্ষিণচীনে যান , ঘনঘন বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে যাওয়া-আসা করেন এবং উন্নত প্রযুক্তি আহরণ করে কৃষকদের শেখান । কয়েক বছরে তার সাহায্যে প্রায় দশ হাজার কৃষক-পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে । দু' হাজার চার সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনাধীন চীনের দেশপ্রেমিক প্রকল্প ফেডারেশন তাকে চীনের দেশপ্রেমিক-তারকার খেতাবে ভূষিত করে । পেইচিংয়ের তিয়াও ইউ থাই রাষ্ট্রীয় অতিথি-ভবনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাকে সাক্ষাত দান করেন । একই সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের কৃষিপ্রযুক্তি সমিতির তুলো কমিটি তাকে শ্রেষ্ঠ সদস্যের আখ্যা দেয় এবং নভেম্বর মাসে তিনি জণকল্যাণব্রতে নিবেদিতপ্রাণের সাম্মানিক পদক অজর্ন করেন ।