v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-04 09:18:54    
চীনের সুপ্রসিদ্ধ আঙ্গুরের উত্পাদন ঘাঁটি

cri

গ্রীষ্মকালের এক চমত্কার ভোরে উষার আলো সবে মাত্র দেখা দিয়েছে। চীনের সুপ্রসিদ্ধ আঙ্গুরের উত্পাদন ঘাঁটি উত্তরপশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুরস্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তুরপান এলাকায় আমাদের আঙ্গুর উপত্যকা পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, তুরপান জায়গাটা চীনে অগ্নিভূমি নামে সুপরিচিত। কারণগ্রীষ্মকালে দিনের বেলায় এখানে আগুনের মতো গরম, তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০ ডিগ্রী সেলশিয়াসের ওপর থাকে। কিন্তু তুরগার শহর থেকে মাত্র বারো তেরোকিলোমিটার দূরে অবস্থিত আঙ্গুর উপত্যকাটিতে প্রচুর পানি আর সবুজ গাছগাছড়া আছে বলে এখানে স্নিগ্ধ বাতাসে কিঞ্চিত্ শীতল আমেজ মন জুড়িয়ে দিচ্ছে।দূরের বরফাচ্ছন্ন পর্বত থেকে নেমে আসা ঝরণার পানি কলকল করে বইছে। আঙ্গুরলতাগুলোর ওপর থেকে থোকা পাকা আঙ্গুর ঝুলে রয়েছে।

    এই আঙ্গর উপত্যকা প্রায় লম্বায় আট কিলোমিটার, এখানে দুশো বিশ হেস্টরেরও বেশী জমিতে আঙ্গুর চাষ হয়। উইগুর জাতির লাল রঙের এক একটি পাকা বাড়ী উপত্যকাটিতে শোভা পাচ্ছে। এখানে এক হাজারেরও বেশী উইগুর পরিবার বসবাস করে। রোষ্ট কাবাবেব সুগন্ধের ভেতর আমরা প্রবেশ করলাম একটি উইগুর বাড়িতে। বাড়িটির মালিকের নাম ইউসুফ আউলি, তার বয়স ৬০ বছর। তিনি তার কয়েকটি ছাগলকে খাবার দিচ্ছিলেন, আর তাঁর স্ত্রী ময়দা আর দুধ দিয়ে নান রুটি তৈরী করছিলেন। যার সুবাস উঠানের বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে।

    ইউসুফ আউলির বাড়িতে দুটো লম্বা ঘর। পূর্ব দিকের ঘরে চারটি কামরা, এখানে ইউসুফ দম্পতি আর ছোট মেয়ে থাকেন। বড় ছেলে, বউমা আর নাতিনাতনী থাকে পশ্চিম দিকের ঘরের তিনটা কামরায়। তাঁদের উঠানের আয়তন ৫০ বর্গমিটার। উঠানের এক কোণে রয়েছে বেশ ভাল মার্কার দুটো মটরসাইকেল। উঠানের দক্ষিণ দিকে সবজির বাগান, যেখানে শাকসবজি ছাড়াও অনেক ফুলগাছও চাষ করা হয়। ছাদের ওপরে আছে কিসমিস তৈরীর জন্যে আঙ্গর শুকানোর একটি বিশেষ হাওয়া ঘর। এখানকার প্রতিটি ঘরেই এই ব্যবস্থা আছে। এই বিশেষ হাওয়া ঘরের তাকে তাকে শুকানো রয়েছে থোকা থোকা আঙ্গুর। উষ্ণ বাতাসে এগুলো সুস্বাদু কিশমিশে পরিণত হচ্ছে। তুরপান এলাকার প্রচুর রোদ, দিনে খুব গরম, আর রাতে বেশ ঠাণ্ডা বলে এখানে উত্কৃষ্ট মানের আঙ্গুর উত্পন্ন হয়। এবং এই আঙ্গুরকে সহজেই উন্নত গুণমানের কিশমিশে পরিণত করা যায়। এক শো তিরিশ কোটি চীনা যত কিশমিশ খায়, তার ৮০শতাংশই তুরপান এলাকার কিশমিশ। আঙ্গুর চাষই যুগ যুগ ধরে এখানকার উইগুরদের পেশা।

    কিন্তু ইউসুফের ছেলের প্রজন্মে এই অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখানকার তরুণতরুণীরা চাকরি বা ব্যবসার জন্যে শহরে চলে যায়। বারো তেরো বছর আগে ইউসুফের ছেলে আর্কান সিনচিয়াং অঞ্চলের রাজধানী উরমচি শিক্ষকপ্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং পরে সেখান থেকে স্নাতক হয়ে জন্মভুমি তুরপানে ফিরে আসেন, তিনি এখন তুরপান তা মধুর স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় জন্মভূমি, কিন্তু তিনি আর তাঁর বাবার মতো শুধু শুধু আঙ্গুর চাষ করতে পারেন না। তার পরিবারের কত জমিতে আঙ্গুর চাষ হয়েছে, তাও তিনি ঠিক মতো বলতে পারছেন না। আমরা তার পরিবারের আঙ্গুর বিক্রী থেকে কত আয় হয় জানতে চাইলে আর্কান তাঁর বাবাকে জিজ্ঞেস করার পরই বেবল জানালেন, তিনি বলেছেন, তাদের পরিবারের আয় বছরে বছরে বাড়ছে। দশ বছর আগে আঙ্গুর থেকে তাদের আয় ছিলো তিন হাজার ইউয়ান। এখন তা বেড়ে দশ হাজার ইউয়ানেররও বেশী হয়েছে। তাছাড়া আর্কান দম্পতির প্রত্যেকেরই মাসিক মূলবেতন এক হাজার ইউয়ানের বেশী। ইউসুফ আউলি বলেছেন, এই দশ বারো বছরে আঙ্গুর উপত্যকার উইগুর পরিবারেরগুলোর জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাঁরা উন্নত আঙ্গুর চাষের কলাকৌশল ও উত্কৃষ্ট জাতের আঙ্গুর আমদানি করে জনপ্রিয় করেছেন। বিশেষ করে পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন করেছেন বলে আয় ক্রমেই বাড়ছে। তাদের পরিবারের আয় এই এলাকায় মাঝারী মানের পর্যায়ভুক্ত। কয়েক বছর আগে তাঁরা পুরনো কাঁচা ঘর ভেঙ্গে দিয়ে এই নতুন পাকা বাড়ি তৈরী করেছেন এবং টেলিভিশন, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন আর সাইকেলগুলো কিনেছেন।

    পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনের সংস্কার ও উন্মুক্ত নীতি প্রবর্তনের ১৯৭৮ সাল থেকে সিনচিয়াং অঞ্চলের অর্থনীতি বার্ষিক দশ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে। জীবনযাত্রা উন্নতির সংগে সংগে তুরপানের আঙ্গুর উপত্যকার গ্রামবাসীদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাগত মানেরও উন্নতি হয়েছে। আর্কান বলেছেন, গ্রামের অনেক তরুণতরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি নিজে আগেকার বি এ ডিগ্রী ছাড়াও অবসর সময়ে আইনবিদ্যা পড়েছেন এবং গত বছর এল এল বি ডিগ্রী লাভ করেছেন।

    আর্কানের স্ত্রী পাতিউরী আমাদেরকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে তাদের বাড়ির প্রতিটি অংশ দেখালেন। চমত্কার বৈদ্যুতিক সামগ্রি ছাড়া উইগুর জাতির ঐতিহ্যিক দেয়ালগালিচা এক বিশেষ সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম এমন কি টেলিভিশনসেটের কাভারও হলো রেশম দিয়ে তৈরী এক সুন্দর সূচিকর্ম। তাঁর কয়েকটি উইগুর স্কার্টও দেখতে খুবই সুন্দর।

    বৃদ্ধ ইউসুফ আউলি একটি বড় ঝুড়ি নিয়ে তাঁর আঙ্গুরক্ষেতে গেলেন, সংগে অবশ্য আমাদেরকেও নিয়ে গেলেন। তার আঙ্গুর ক্ষেতের আয়তন প্রায় দুই একর। একসাথে এতোগুলো আঙ্গুর দেখে আমাদের যে কী আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল।

    আমরা উচ্ছাসভরে আঙ্গুর তুলছিলাম, এমন সময়ে হঠাত্ দশ বছরের একটি ছেলে ছুটে এলো। তার নাম মৌলাদ. খুব বাচাল ছেলে, ক্লাস থ্রীতে পড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবল সম্পর্কে ছেলেটি গদগদ করে বলতে লাগলো, টেলিভিশনে আমি দু হাজার সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা দেখেছি, রোনাল্ডোর খেলা দেখেছি, তিনি দারুণ খেলছিলেন, আমিও ফুটবল খেলতে চাই।

    আঙ্গুর উপত্যকার নয়নাভিরাম দৃশ্য আর উইগুরদের আতিথেয়তা আমাদের এতই বিমোহিত করেছিলো যে, বিদায় নেয়ার সময়ও আমাদের মন কিন্তু বিদায় নিতে চাইছিল না।