নভোচারীরা এম্বুলেন্স ডাকতে পারেন না এবং দাঁতে ব্যখা হলে চিকিত্সকের কাছে চিকিত্সা করাতে যেতে পারেন না। তবুও তারা কিভাবে মহাশূন্য স্টেশনে কয়েক মাস উডডয়নের পর সুষ্ঠুভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারেন?
রাশিয়ার বিজ্ঞান একাডেমীর একজন মহাশূন্যচিকিত্সাবিদ বলেছেন, "নভোচারীদের খুবই কড়াকড়িভাবে বাছাই করা হয়। দারুণ সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী লোকেরাই মহাশূন্যে যেতে পারেন। মহাশূন্যে আঘাত পাওয়া, সর্দি হওয়া, দন্তব্যসন হওয়া ইত্যাদি যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বিভিন্ন সম্ভাব্য অবস্থা মোকাবিলার বিভিন্ন উপায় থাকতে হয়।"
প্রায় সকল নভোচারীরই অন্ত্রের অসুখ হয় না। প্রথমতঃ তাদের খাদ্যতালিকা রোগীদের জন্য পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ নিবারণে চিকিত্সাবিদদের তৈরী খাদ্যতালিকা অনুসারে তৈরী হয়েছে। এই খাদ্যতালিকায় মানুষের দেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টির খাদ্যদ্রব্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারপর মহাশূন্য স্টেশনে পঁচা মাংস আর পঁচা পাউরুটি থুঁজে পাওয়া যায় না। কারন বৈজ্ঞানিকরা দীর্ঘকাল ধরে মহাশূন্যে গবেষণারত নভোচারীদের জন্য পঁচতে পারে না এবং দীর্ঘকাল ধরে সুস্বাদ বজায় রাখা যায় এমন এক ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরী করেছেন।
যদিও নভোচারীরা চিকিত্সা করাতে পারেন না, তবুও তারা সময় মত ভূপৃষ্ঠের মেডিক্যাল তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ পান। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে চিকিত্সাই নভোচারীদের জন্যে বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবন। যার সাহায্যে চিকিত্সকরা ভূপৃষ্ঠৈ থেকেই যা কিছু জানতে চান তার সমস্তই দেখতে পান। নভোচারীরা মহাশূন্য স্টেশনে বিভিন্ন ধরনের এনডোস্কোপির পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া মহাশূন্যে রয়েছে সবচেয়ে পূর্ণাংগ চিকিত্সা সাজসরঞ্জামবিশিষ্ট ক্ষুদ্রতম হাসপাতাল। আন্তর্জাতিক মহাশূন্য স্টেশনে এক্সরে যন্ত্র ছাড়া এমন কি ড্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন অবস্থা মোকাবিলার সব ধরনের চিকিত্সার সাজসরহ্জাম ও ওষুধপত্র আছে। নভোচারীদের এসব সাজসরঞ্জাম ব্যবহারের মান আনুষ্ঠানিক চিকিত্সকের মানে পৌঁছেছে। তাদের দগ্দগে ঘা সামলানো ও ইন্জেক্শন দেয়ার প্রযুক্তি কোনো চিকিত্সকের নির্দেশনায় মহাশূন্য স্টেশনেও অপারেশন চালানো যায়। সৌভাগ্যের ব্যাপার, এপর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটে নি।
রাশিয়ার বিজ্ঞান একেডামীর সেই মহাশূন্য চিকিত্সাবিদ বলেছেন, "মহাশূন্যে প্রধানতঃ ভূপৃষ্ঠের অনুরূপ ওষুধপত্র ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওষুধপত্র এমন হওয়া উচিত যেগুলো নভোচারীদের কাজের সামর্থ্যকে প্রভাবিত করে না। মহাশূন্য স্টেশনে নভোচারীর বিক্লপ কেউ নেই।"
"যেমন ধরা যাক, উডডয়নের প্রথমদিকে অনেক নভোচারীর সমুদ্রপীড়ার মতো মোশন সিক্নেস হয়। বসওতঃ এটা কোনো রোগ নয়, বরং নতুন পরিবেশে তিন চার দিনের অনভ্যস্ত্তা, অর্থাত রক্তের উল্টো প্রবাহ, দিকজ্ঞান হারানো সাংসপেশীগুলোর দিক সনাক্ত করার অক্ষমতা, মাথা ঘোরা ও বমি বমি হওয়া। নভোচারীদের এই ধরনের অনভ্যস্ত্তা দূর করার জন্য প্রথমে সাধারণ সমুদ্রপীড়ার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। বিন্তু কারো কারো বেলায় তা প্রযোজ্য নয়। তাই গুড়ো ওষুধ, বিশেষ ওষুধের বড়ি ও কানের পেছনে লাগানো ওষুধ মাখানো রবারবস্ঞ আবিষ্কৃত হয়েছে।"
উডডয়নের গোটা প্রক্রিয়ায় নভোচারীদের ওজনহীন তাজনিত রক্তের উল্টো প্রবাহ অতিক্রম করতে হয়। এজন্য পায়ে বিশেষ ব্যবস্থা বেঁধে রক্তকে মাথায় প্রবাহিত করাতে হয়। তাছাড়া ওজনহীনতা রক্তের মধ্যকার ইলেকট্রেলাইট উপাদানের পরিবর্তন, হাঁড়ের ক্যাল্সিয়াম হারানো, নড়ার অসুবিধা ও মাংসপেশীর সংকোচনও ডেকে আনতে পারে। নভোচারীদের রোজ অন্ততঃ বডি-বিল্ডিং উকুয়িপ্মেন্ট দুঘন্টা শরীরচর্চা করতে হয় এবং আট ঘন্টা বিশেষ ভারী পোশাক পরতে হয়। এই ধরনের পোশাকের ভেতরে নিয়ন্ত্রিত ড্যাম্পার সেলাই করা আছে। যাতে মাংসপেশীগুলো যথোপযুক্ত অবস্থায় থাকে এবং মাংসপেশীগুলোর প্রসারণশক্তি পুনরুদ্ধার হয়।
|