v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-02-01 10:05:36    
চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক উ থিয়েন মিন

cri
    চীনের চলচ্চিত্র জগতের উ থিয়েন মিন নামক একজন পরিচালক আপামর কৃষক ভাইদের সমাদর পেয়েছেন , কেননা তিনি চীনের বিস্তীর্ণ পল্লী অঞ্চলের জীবনকে ছায়াছবির উপজীব্য হিসেবে গ্রহন করে অনেক ছবি তৈলী করেছেন ।

    গত শতাব্দীর আশির দশকে চলচ্চিত্র পরিচারক উ থিয়েন মিন পল্লী অঞ্চলের কৃষকের জীবনকে উপজীব্য করে নাব্যতার চিহবিহীন নদী জীবন ও পুরনো কুয়ো নামে তিনটে ছায়াছবি তৈরী করেছেন । এই তিনটে ছবিতে তিনি চীনের কৃষকদের জীবন , তাদের আনন্দ , তাদের দুঃখ বর্ণনা করার প্রচেষ্টা করেছেন । এই তিনটে ছবি চলচ্চিত্র সমালোচক ও দর্শক , বিশেষ করে ব্যাপক কৃষকের সমাদর পেয়েছে , প্রেক্ষাগৃহে এই তিনটা ছবি দেখার জন্য দর্শকদের ভিড় জমেছিল , এই তিনটে ছবি চীনের নানা চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় একধিকবার পুরস্কার জয় করেছে এবং যুক্ত রাষ্ট্রের হাওয়াই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে ও জাপানের টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে পুরস্কার পেয়েছে । চীনের দর্শকরা এই তিনটে ছবিইর পরিচালক উ থিয়েন মিনকে হলুদ মাটির সংস্কৃতির পরিচালক আখ্যা দিয়েছেন । উ থিয়েন মিন কেন কৃষকদের জীবনের ছায়াছবি পছন্দ করেন ? এ সম্বন্ধে উ থিয়েন মিন বলেছেন , তিনি কৃষকদের জীবন ও তাদের ভাগ্য নিয়ে সব সময় চিন্তা করেন । উ থিয়েন মিন ছোট বেলায় গ্রামে থাকতেন , ছোট বেলায় তার জন্মস্থানের গ্রামের কথা তার মনে গভীর ছাপ ফেরেছে । ১৯৩৯ সালে উত্তর পশ্চিম চীনের শান সি প্রদেশের এক কৃষক পরিবারে উ থিয়েন মিনের জন্ম । তার বাবা আশা করেন ছেলে গ্রামে চাষের কাজ করবে , তাই তার নাম রেখেছেন উ কেন , কেনের অর্থ চাষ । কিন্তু উ থিয়েন মিন ক্ষেতের কাজ পছন্দ করেন নি । তিনি ছোট বেলা থেকেই ছন্দময় কবিতা আবৃত্তি খুয়াই পান , শানসি অপেরা ও রসাত্নক সংলাপ সিয়ান শে ইত্যাদি লোক-শিল্পকলা পছন্দ করেন । তিনি মহকুমার অপেশাদার আপেরা দলে যোগ দিয়েছেন । তিনি যখন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশুনা করেন , তখন নিজে নাটক লিখেন এবং অভিনয় করেন । এই সময় তিনি একটি ছায়াছবি দেখার সুযোগ পেলেন । সমুদ্রের গান নামক এই ছায়াছবি তার খুব ভালো লেগেছে । তখন তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব সচ্ছল ছিল না , ছায়াছবি দেখার জন্য তিনি তার মার স্বহস্তের তৈরী একজোড়া তুলোর জুতা বিক্রি করে খালি পায়ে প্রেক্ষাগৃহ একটি ছায়াছবি তিনবার দেখেছেন । তখনকার কথা স্নরণ করে উ থিয়েন মিন বলেছেন , ছোট বেলার একটি ঘটনা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে , সমুদ্রের গান নামক ছায়াছবি আমি ১৪ বার দেখেছি , ছবিটির চরিত্রের কথা , নেপথ্যের কথাগুলো আমি প্রায় সব সুখস্থ করেছি , তখন থেকে আমি ছায়াছবি তৈরীকে আমার পেশা হিসেবে নিতে বদ্ধপরিকর হয়েছি । উ থিয়েন মিন আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালযে চলচ্চিত্র পরিচালনা শিখেন নি । তিনি হাতেকলমে ছায়াছবি তৈরীর সব কাজ শিখেছেন । তিনি ছায়াছবির অভিনেতা , লগ কীপার ম সহকারী পরিচালকের কাজ করেছেন , ১৯৮২ কালে তার বয়স যখন ৪৩ বছর , তিনি নাব্যতার চিহবিহীন নদী নামে একটি ছায়াছবিতে প্রথম বারের মতো পরিচালকের কাজ করেছেন । এই ছবির কাহিনী হলো গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে চীনে যখন তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলছিল , তখন চীনের একজন ভেলা-ভাসানো শ্রমিক ফান লাও উ মিথ্যা অভিযোগে অমানুষিক অত্যাচারে জর্জরিত মহকুমা প্রধানকে বাঁচানোর জন্য নিজের প্রান হারিয়েছেন । তিনি এই ছবিতে তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব--এই বিশেষ ঐতিহাসিক সময়পর্বে সাধারণ অধিবাসীর জীবন ও তাদের সততা ও দয়া প্রকাশের প্রচেষ্টা করেছেন । এই ছবি চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের শ্রেষ্ঠ ছায়াছবি পুরস্কার ও যুক্ত রাষ্ট্রাএর হাওয়াই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে পুরস্কার পেয়েছে । তখন থেকে উ থিয়েন মিন চীনের নামকরা চলচ্চিত্র পরিচালক হয়েছেন । ১৯৮৩ সালে তৈরী জীবন নামক একটি ছবি হচ্ছে উ থিয়েন মিনের প্রতিনিধিত্বকারী একটি ছবি । এই ছবিতে সংস্কার অভিযানের প্রাক্কালে উত্তর পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলের যাবক কাও চিয়া লিনের সুখ ও দুঃখ জীবনের বর্ণনা করা হয়েছে । এই ছবির কাহিনীর নায়ক কাও চিয়া লিন হলেন গ্রামাঞ্চলের একজন চেতনাশীল যুব-কৃষক , তিনি পল্লী অঞ্চলের অনেক পশ্চাদপদ ও অযৌক্তিক রীতিনীতি দেখে অত্যন্ত দুঃখ বোধ করেন । বাবা মার দেয়া বিয়ে এড়ানোর জন্য তিনি গ্রামাঞ্চল ত্যাগ করে শহরে গিয়েছেন , শহরে তিনি যদিও অনেক কষ্ট পেয়েছেন , তবে নিজের পছন্দমতো একটি মেয়ে পেয়েছেন । কিন্তু তাকে অবশেষে গ্রামাঞ্চলে ফিরতে হয়েছে । এই ছবিতে উত্তর পশ্চিম চীনের মালভুমির বৈশিষ্ট্যময় দৃশ্য , বাস্তব সততার শৈলী আর নায়কের মনের অনুভুতির বর্ণনা চীনের চলচ্চিত্র মহল ও দর্শকবৃন্দকে অবাক করেছে , এই ছবি সেই বছর সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং দর্শকদের মধ্যে এই ছবি দেয়ার হিড়িক পড়েছিল । ১৯৮৬ সালে উ থিয়েন মিন গ্রামাঞ্চলের জীবনকে ছায়াছবির উপজীব্র হিসেবে গ্রহন করে পুরনো কুয়ো নামে আরেকটি ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন । এই ছবিতে উত্তর চীনের এক গরীব গ্রামের যুবকৃষক মুং সি উয়অনের গ্রামবাসীদের নিয়ে কষ্ট করে কুয়ো খননের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । এই ছবি নির্মানের সময় উ থিয়েন মিন সাহসের সংগে তখনকার ফোটোগ্রাফার চান ই মোওকে এই ছবির প্রধান চরিত্র সুং নি ওয়ানের ভূমিকায় বেছে নিয়েছেন । অনেকে তার এই সিদ্ধান্তে রাজী নন , কিন্তু উ থিয়েন মিন নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে চান না । তিনি বলেছেন , চান ই মোও পল্লী অঞ্চলে পাঁচ ছয় বছর ছিলেন বলে তিনি অঞ্চলের অবস্থা জানেন , যদিও চান ই মোও বিদ্যালয়ে অভিনয় শিখেন নি , তবু তিনি শিল্পকলা জানেন , চরিত্রের অভিজ্ঞতার সংগে তার মিল আছে , তার দায়িত্ববোধ ও নিরলসভাবে কাজ করার আগ্রহ আমি পছন্দ করি , তাই আমি মনে করি চান ই মোও যুবকৃষক সুং সি ওয়ানের ভুমিকায় অভিনয় করতে পারবেন । চান ই মোও তার বাস্তব জীবনের সুগভীর উপলব্ধি কাজে লাগিয়ে , সাফল্যের সংগে এই ছবিতে যুবকৃষক সুন সি ওয়ান এই চরিত্রের প্রাণবন্ত রূপায়ন করেছেন । ছায়াছবি পুরনো কুয়োতে কুয়ো খনন চীনা জাতির দৃঢ় মনোবল ও প্রানশক্তির প্রতীক । এই ছবি জাপানের টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ ছবি , শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার , আন্তর্জাতিক ছায়াছবি সমালোচক লীগের বিশেষ পুরস্কার আর ইতালির সালসো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের পুরস্কার জয় করেছে । গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে উ থিয়েন মিন মুখ বদল ও অসাধারণ প্রেম নামে দুটি ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন । এই দুটি ছবিতে মানুষে মানুষে সম্পকৃএ অকৃত্রিম মমতা প্রকাশিত হয়েছে এবং সততা , দয়া ও সৌন্দর্য্যের প্রতি পরিচালকের প্রত্যাশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এই দুটি ছায়াছবিও চীনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে , মুখ বদল নামক ছবিটি দেশবিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উত্সবে মোট ৩৭ টি পুরস্কার পেয়েছে ।

    ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত উ থিয়েন মিন সি আন ফিল্ম স্টুডিওর পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন , এই সময়পর্বে তিনি যুব অভিনেতাদের সাহায্য করা আর তাদের জন্য ভালো পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অনেক ব্যবস্থা নিয়েছেন । এই সব ব্যবস্থার কল্যানে চীনের চলচ্চিত্র মহলের পনচম প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী চান ই মোও , ছেন খাই কো ও কু ছিয়ান উয়ে প্রমুখ শ্রেষ্ঠ শিল্পীর আবির্ভাব ঘটেছে ।