না ইউন নামে তাই জাতির প্রাচীন শহর দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউন্ নান্ প্রদেশের মংলিয়ান জেলায় অবস্থিত। এই প্রাচীন জেলাশহর তাই জাতির সর্বশেষ প্রাচীন জেলা শহর, যা চীনে এখনো ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত আছে।
চীনের পঞ্চাশাধিক সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে তাই জাতির বয়েস হাজার বছরেরও বেশি। চীনের ইউন্ নান্ প্রদেশে ৮ লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট এই জাতি বাস করে। দীর্ঘকাল ধরে উন্নয়নের সংগে সংগে তাই জাতির নিজের লিপি এবং সুবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতিও তৈরী হয়েছে।
না ইউন প্রাচীন জেলাশহর প্রতিষ্ঠিত হয় এয়োদশ শতাব্দির শেষ দিকে অর্থাত্ তা ৭ শো বছরেরও বেশি সময় পুরানো। তাই ভাষায় " না ইউন" শব্দটার অর্থ " শহর"। এই জেলাশহরের নির্মানকাজ শুরু হওয়ার পর তা এমন একটা স্থানে পরিণত হয়েছে, সেখানে তাই জাতির শীর্ষ প্রশাসন চালাতেন আর জীবনযাপন করতেন। যেহেতু এই প্রাচীন জেলাশহরে পূর্ণাংগ তাই জাতির বাড়িঘর ও প্রচুর স্বজাতির আচার ব্যবহার সংরক্ষিত আছে, সেহেতু তাকে চীনে ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত তাই জাতির শেষ প্রাচীন জেলাশহর বলে গন্য করা হয়।
না ইউন্ প্রাচীন জেলাশহর পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত। তাকে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন এই তিনটি নগর আর মানফাংকান ও মানফাংমাও এই দুটো থানায় বিভক্ত করা হয়। উচ্চ নগর তাই জাতির প্রশাসক ও তাদের চাকর বাকর থাকেন, মধ্য নগরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার পরিজন থাকেন এবং নিম্ন নগর নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাদের বাসস্থান। মানফাংকান ও মানফাংমাও এই দুটো থানায় তাই জাতির সাধারণ মানুষ থাকেন।ৱ
আমরা প্রাচীন জেলাশহরের সর্বোচ্চস্থলে অবস্থিত সর্বোচ্চ প্রশাসকের কার্যালয় ও তাঁর বাসভবনে যান। মনোরম স্থাপত্য নিদর্শন আর প্রচুর সাংস্কৃতিক দ্রব্যের জন্য তার কার্যলয়কে "সোনার প্রসাদ" বলে অখ্যাযিত করা হয়। এই বিরাট প্রাসাদে বহুসুখী ডিজাইনের নানা রকম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটির পর একটি তাই জাতির বাদ্য যন্ত্র দর্শকদের দৃষ্টি খুব আকৃষ্ট করে। যদিও এই সব বাদ্য যন্ত্র খুব পুরানো, কিন্তু এ সব বাদ্যযন্ত্রে যে সুর বাজে, তা খুব মধুর লাগে।
প্রধান ইউয়ানলু বলেছেন, পুরানো প্রশাসক আমলে তাই জাতির সমাজে যে শ্রেণী ব্যবস্থা চালু হয়, তা খুব কড়া ছিলো। ভিন্ন শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের মধ্য বিয়ে নিষিদ্ধ। প্রশাসকের কার্যালয়ের ৫ শো মিটার দূরে অবস্থিত দুটো বৌদ্ধ মন্দির বা মঠ। ওখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় তত্পরতার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছরের চান্দ্রবর্ষের বসন্ত উত্সব হওয়ার পর বংশের প্রবীনরা দ্বারা সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য উপযোগী অল্পবয়সী ছেলেদের বেছে নেন। তারা মঠে প্রবেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাসী হয়।
সন্ন্যাসী হওয়ার অনুষ্ঠানে তাই জাতির নানা রকম সুন্দর পোষাক পরা লোকেরা সমাবেশিত হন। তারা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ছেলের মঠ-গমন উদযাপন করেন। নির্বাচিত ছেলেদের বাবা মা আরো আনন্দিত। তারা কাগজে তৈরী ১০ মিটার উচ্চ একটি বৌদ্ধ প্যাগোডা, কাপড় চোপড় প্রভৃতি নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী মঠকে উপহার দেন। তাই জাতির একজন মেয়ে আমাদেরকে বলেছেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান বছরে একবার করে আয়োজন করা হয়। যারা যে সন্ন্যাস গ্রহণের বয়েস সাধারণত ছ' থেকে সাত বছর।
জানা গেছে, মঠে এ সব ক্ষুদে সন্ন্যসী একদিকে তাই ভাষা শেখে, অন্য দিকে বৌদ্ধধর্মের শাস্ত্রীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। এ সব শর্ত পালনের পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাসী হতে পারে।
এ সব তত্পরতার মাধম্যে তাই জাতির বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও আচার ব্যবহার তাই সমাজের জীবনযাপনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেছে।
|