প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কিছু সোনা যোগাড় করে আফেন্দি তার গাধার চড়ে এক বালিভরা মাঠে গিয়ে হাজির হোলো।সেখানে আপন মনে সে চালুনী দিয়ে বালি ছাঁকতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর সেই পথেই রাজা তার সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে শিকারে যেতে যেতে আফেন্দির চালুনী দেখে অবাক হলেন,জিজ্ঞেস করলেন "তুমি এখানে বসে বসে কী করছো?"
আফেন্দি বললো, "হুজুর,আমি সোনা ফলাচ্ছি"।
রাজা আরো অবাক হয়ে বললো, "বেশ,বেশ,বুদ্ধিমান লোক।কিন্তু বলো দোখি আফেন্দি,এই মাঠের মধ্যে তুমি সোনা ফলাচ্ছ কী করে?"
আফেন্দি ধীরস্থিরভাবে বললো, "হুজুর,প্রজাদের শোষণ করে সোনা যোগাড় করার চেয়ে এভাবেই সোনা যোগাড় করাটা অনেক সহজ।প্রতি বৃহস্পতিবার এখনে আমি সোনা বুনে দিই,আবার পরের বৃহস্পতিবারই আমি সোনা তুলতে আমি"।
একথা শুনে রাজার মনে বেজায় লোভ হোলো।ভাবলেন, "এ সব তো আমারই নাগলের মধ্যে সব সোনাই আমার হতে আর দেরী কী!"আফেন্দিকে তিনি বললেন, বেশ আফেন্দি,সোনা ফলাবার সময়ে বীজের অভাব হলে আমার প্রাসাদে এসো,আমরা দুজনে দুজনের শরীক হয়ে সোনা ফলাবো।যে সোনা ফলবে তার আমি পাবো,অর্ধেক তুমি পাবে।
আফেন্দি কয়েকদিন পর রাজপ্রাসাদ থেকে কতোখানি সোনা নিয়ে এলো,আবার এক সপ্তাহ পর রাজার কাছে তার দিগুণ পরিমাণ সোনা পাঠালো।উজ্জ্বল চকচকে সোনা দেখে রাজা মহা খুশী হলেন।তিনি সঙ্গে সঙ্গেই আদেশ দিলেন।সোনার ঢলাবার বীজ হিসেবে রাজকোষের সমস্ত সোনা আফেন্দিকে দিয়ে দেয়া হোক।আফেন্দি সমস্ত সোনা নিয়ে গ্রামে ফিরে এসে গরীবদের মধ্যে সবটাই বিলিয়ে দিল।কয়েকদিন পর নিজে একা বিষন্ন মুখে আবার রাজপ্রাসাদে গেলো।
তাকে দেখে রাজা জিজ্ঞেস করলেন, "কী হে,আফেন্দি,সোনার ফলন এবার কি রকম হচ্ছে?"
আফেন্দি কেঁদে বললো, "হুজুর,ক'দিন-যে আর বৃষ্টি হলো না,আমাদের সব সোনাই শুকিয়ে মরে গেছে"।
রাজা রেগে আগুন হয়ে সিংহাসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হুংকার ছেড়ে বললেন, "এ তোমার মিথ্যে কথা!আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না।সোনা কি মরে যেতে পারে?"
আফেন্দি বললো,হুজুর,আপনি তো দেখছি আমার চেয়েও বোকা।আপনি এটা মেনে নিয়েছেন যে সোনাও ফলনো যায়।তাহলে তো একথাও আপনাকে মেনে নিতে হবে যে,পানি না মেলে সোনা মরেও যেতে পারে।
রাজা আর উত্তর দিতে পারলেন না,আফেন্দিকে যেতে দিতে বাধ্য হলেন।
|