চীন একটি প্রধান কৃষি অর্থনীতির দেশ, চীনের কৃষকদের সংখ্যা আশি কোটি। চীন সরকার বরাবরই কৃষকদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের উপরে মনোযোগ দিয়ে আসছে।উনিশ'শো আটাত্তর সালে চীনে সংস্কার অভিযান শুরু হওয়ার পর চীনের গ্রামীন অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ হয়েছে। গত বছরে অনুষ্ঠিত চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির ষোড়শ জাতীয় কংগ্রেসে নতুন শতাব্দীতে সর্বমুখী সচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠার মজান লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে চীনের জনসাধারণের সচ্ছল হওয়ার গতি দ্রুততর হবে। সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা চীনের হুনান প্রদেশ সফর করার সময় এর সুফল দেখে একটি প্রতিবতন লিখেছেন।
হুনান প্রদেশ চীনের দীর্ঘতম ইয়াংসি নদীর দক্ষিন দিকে অবস্থিত। ২০০১ সালে শেষ দিকে এই প্রদেশের কৃষকদের সচ্ছলতার লক্ষ্য মোটামুটি অর্জিত হয়েছে। হুনান প্রদেশের গণ-সরকারের কর্মকর্তা জেং জিয়া মিং এই প্রসংগে বলেছেনঃ
"২০০১ সালে হুনান প্রদেশের কৃষকদের মাথা পিছু আয় ছিল ২২০০ ইউয়ান। শতকরা পঁচানববই ভাগ কৃষক পরিবার এখন অন্নবস্ত্র নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছেন না। এক তৃতীয়াংশ কৃষকের জীবন সচ্ছল হয়েছে। কৃষকদের বাড়ির মেঝের আয়তন ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে।
হুনান প্রদেশের নানা জায়গার কৃষকদের সংগে সাক্ষাত করে আমাদের সংবাদদাতা জানতে পেয়েছেন যে, সকলস্তরের সরকারের সমর্থন এবং কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমই কৃষিজাত দ্রব্যের মানোন্নয়ন, আর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে কৃষি কাঠামোর সময়োচিত পরিবর্তন হলো সচ্ছলতা অর্জনের চাবিকাঠী।
হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাংসার অধীনস্থ নিং সিয়াং জেলার হুয়া মিং লৌ মহকুমায় দুষনমুক্ত ধান উত্পাদন ঘাটি, গাছের চারা তৈরীর কেন্দ্র, এবং মত্স্য চাষ খামার প্রতিষ্ঠার ফলে কৃষকদের তথ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
ষাট বছরেরও বেশী বয়সী কৃষক চৌ জাও চিয়ান চার বছর আগে থেকে মাছের চাল করেছেন। এখন তাঁর পুকুরগুলোর আয়তন প্রায় নব্বই হেকটর। প্রতি বছরে মাছ চাষে তিনি পঁচাশ হাজার ইউয়ান ব্যয় করেন। বার্ষিক উত্পাদন মুল্য প্রায় তিন লক্ষ ইউয়ান। তাঁর অনুপ্রেরনায় আরো ষাটটি কৃষক পরিবার মাছ চাষ করতে শুরু করেছে।
হুনান প্রদেশে খাদ্যশস্য উত্পাদন, পশুপালন এবং মত্স্য চাষের বিজ্ঞানসম্মত সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের সদ ব্যবহার করা হয়েছে, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে এবং অর্থনৈতিক ফলপ্রসুতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রদেশের হেং তং জেলার কর্মকর্তা জেং সিন পিং আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেনঃ
"এখন আমাদের জেলার শতকরা তেপ্পান্ন ভাগ ভুমি সবুজ গাছে আবৃত। পাঁচ ভাগ কমেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধ ব্যবহারের যথাক্রমে শতকরা আশি ভাগ ও ষাট ভাগ কমেছে।
হুনান প্রদেশের পর্যটন শিল্পও কৃষকদের আয় বৃদ্ধির অন্যতম কারন।
সাওসান শহর চীনের মহান নেতা মাও সে তংয়ের জন্মস্থান। সাওসান গ্রামের ছত্রিশ বছর কয়স্ক মাও জেপিং উনিশ'শো সাতাশি সালে যখন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেন তখন তার পরিবারের বার্ষিক আয় মাত্র দু'শো ইউয়ান। এরপর তিনি একটি ছোটো রেস্তোরাং খোলেন। উনিশ'শো নিরানব্বই সালে তিনি সাওসানের একাধিক রেস্তোরাংর ম্যানেজার নিযুক্তি হয়েছেন। এখন তার বার্ষিক আয় পনেরো হাজার ইউয়ান। তাঁর দুতলা বাড়ির মেঝের আয়তন একশো চল্লিশ বর্গমিটার।
বৃদ্ধা তাং রুই রেনের বয়স এখন চুয়াত্তর বছর। তিনি সাও সানের মাওজিয়া হোটেলের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান। উনিশশো সাতাশি সালে মাওজিয়া হোটেল প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পর্যন্তি এই হোটেলে দেশবিদেশের পাঁচ লক্ষ পর্যটক অবস্থান করেছেন। তার বার্ষিক আয় একলক্ষ ইউয়ানের বেশী।
জাং জিয়াজিয়ে জাতীয় বন পার্কের ভেতরের জাংজিয়াজিয়ে গ্রাম পর্যটন শিল্পের সুবাদে এই শহরের প্রথম সচ্ছল গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখন এই গ্রামের তিনশোরও বেশী কৃষক অর্থাত এই গ্রামের শতকরা চল্লিশজন কর্মজীবী পর্যটনশিল্পে নিয়োজিত হয়েছেন। এই গ্রামের পাটি কমিটির সম্পাদক চৌ জিং সান বলেছেনঃ
"চীনে সংস্কার অভিযান শুরু হওয়ার পর আমাদের কৃষকদের সবচেয়ে বেশী উপকার হয়েছে এবং জীবনযাত্রার মানের সবচেয়ে বেশী উন্নতি হয়েছে।
হুনান প্রাদেশিক সরকারের পল্লিগ্রাম বিষয়ক অফিসের কর্মমর্তা তু ইউয়ান মিং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, বর্তমানে হুনান প্রদেশের সচ্ছলতা অসম্পূর্ণ ও নিম্ন মানের, এবং সারা প্রদেশের সচ্ছলতা সমপর্যায়ের নয়। কাজেই আগামী বিশ বছরে আয় বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করার নানা উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
|