v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-01-25 12:53:35    
বিখ্যাত চীনা ব্যক্তি প্রদর্শনী

cri
    গত ১১ই জুন থেকে ২২শে জুন পর্যন্ত পেইচিংয়ের ছয়টি স্মৃতিভবনের যৌথ উদ্যোগে শতাব্দীর বিখ্যাত চীনা ব্যক্তি নামে একটি প্রদর্শনী সিংগাপুর ও মালয়সিয়ায় প্রদর্শিত হয়েছে । পেইচিংয়ের এই ছয়টি স্মৃতি ভবন এই প্রথমবার মিলিতভাবে চীনের বিখ্যাত ব্যক্তিদের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে , তাদের উদ্দেশ্য হলো বিদেশী দর্শকদের প্রদর্শনীর মাধ্যমে গত শতাব্দীতে চীনের ছয়জন বিখ্যাত ব্যক্তির অসাধারণ কৃতিত্ব ও তাদের প্রতিনিধিত্বকারী চীনাজাতির মনোবল সম্বন্ধে কিছু জানানো। এই প্রদর্শনীতে পরিচয় দেয়া ছয়জন বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেনঃ চীনের প্রয়াত অবৈতনিক চেয়ারম্যান মাদাম সুন ছিন লিন , বিখ্যাত লেখক লু সুন , মাও তুন , কো মো রো , লাও সে আর বিখ্যাত পিকিং অপেরা শিল্পী মেই লাই ফান । এই ছয়জন বিখ্যাত ব্যক্তির জীবন বিংশ শতাব্দীতে চীনের পরিবর্তনশীল ঘটনাপ্রবাহের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত , তাদের জীবন থেকে বিংশ শতাব্দীতে চীনাজাতির দৃঢ় মনোবল প্রতিফলিত হয়েছে । কো মো রো স্মৃতি ভবনের প্রধান , বিখ্যাত সাহিত্যিক কো মো রোর মেয়ে কো পিন ইং বলেছেন , এই সব বিখ্যাত ব্যক্তি নিজের দিক থেকে বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস প্রতিফলনের চেষ্টা করেছিলেন । প্রকৃতপক্ষে তাদের প্রত্যেকজনের জীবন বিংশশতাব্দীর ইতিহাসের একটি সংক্ষিপ্তসার । তাদের জীবন যুগের স্পন্দনেরসংগে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত , তারা বিংশশতাব্দীর সংস্কৃতির দিকস্থিতির প্রতিনিধিত্ব করেন , তারা বিংশশতাব্দীর সাংস্কৃতিক সমাজের শীর্ষস্থানে দাঁড়িয়েছিলেন ।

    বিংশশতাব্দীতে চীন সামন্ততান্ত্রিক সমাজ শেষ করে জাপ-বিরোধী যুদ্ধ আর নয়াচীন প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি অসাধারণ ঐতিহাসিক সময়পর্বের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে । এই সময়পর্বে সুন ছিং লিন , লু সুন , লাও সে , কো মোরো , মাও তুন আর মেই লান ফান চীনের এই ছয়জন বিখ্যাত ব্যক্তি নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন এবং ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিলেন ।

    চীনা জনগনের রাষ্ট্রীয় মাতা বলে পরিচিত চীনের প্রয়াত অবৈতনিক চেয়ারম্যান সুন ছিন লিন চীনা জনগনের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জয় করেছিলেন । ১৯১৫ সালে তিনি চীনের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রবর্তক ডঃ সান ইয়াত সেনকে বিয়ে করেন । ডঃ সান ইয়াত সেনের মৃত্যুর পর তিনি গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ব্রতে অটল ছিলেন এবং চীনা জাতির জাপ-বিরোধী ঐক্য ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয় প্রয়াস চালিয়েছিলেন । তিনি বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী কমিটির অন্যতমা প্রধান নেত্রী ছিলেন । ১৯৪৯ সালে তিনি চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । তিনি তার সারা জীবনে বিশ্বশান্তি অক্ষুন্ন রাখা আর মানবজাতির অগ্রগতির জন্য নিরলস প্রয়ান চালিয়েছিলেন । জীবিতকালে তিনি দীর্ঘদিন নারী ও শিশু শিক্ষা , স্বাস্থ্যরক্ষা আর কল্যান ব্রতের প্রতি বিশেষ যত্ন দিয়েছিলেন এবং দেশবিদেশের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তির ব্যাপক প্রশংসা জয় করেছেন , তাঁকে বিংশশতাব্দীর মহত্ নারীর আখ্যাও দেয়া হয়েছে ।

    চীনা জাতির আত্মা বলে পরিচিত চীনের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ লুন সুন বিংশশতাব্দীর প্রথম দিকে চীনের সামন্তবাদী সংস্কৃতি- বিরোধী নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সাহসী পতাকাবাহীর ভুমিকা নিয়েছিলেন , তার প্রচুর সাহিত্য রচনার মধ্যে ছোট প্রবন্ধগুলোর খ্যাতি সবচেয়ে বেশী , তার প্রবন্ধের ভাষা তীক্ষ্ণ, পাঠকদের ধারনায় তার প্রবন্ধগুলো ছুরি ও বন্দুকের বুলেটের মতো শত্রুর গায়ে ঢুকে ।

    চীনের বিখ্যাত লেখক ও নাট্যকার লাও সে জীবীতকালে প্রচুর উপন্যাস ও নাটক লিখেছিলেন । তার রচিত নাটক " চা দোকান " চীনে কয়েক শোবার মঞ্চস্থ হবার পরও দর্শকদের ভীড় জমে , এটা সত্যিই প্রাচ্যের অভিনয়মঞ্চের একটি বিস্ময়কর ব্যাপার । লাও সে জীবিতকালে মোট আশি লক্ষ অক্ষরসম্পন্ন সাহিত্য রচনা করেছিলেন , তার রচনাগুলোর বেশীর ভাগের বিষয়বস্তু শহরাঞ্চলের নাগরিকের জীবন । লাও সের মেয়ে সু চি বলেছেন , আমার বাবা তার সারা জীবন সাহিত্যরচনায় নিয়োজিত ছিলেন , জীবীতকালে তিনি জনগনের জন্য অনেক কাজ করেছিলেন , তবে সাহিত্য রচনা তার প্রধান কাজ । লাও সের রচনাবলীর ভাষা সহজসরল , তার রচনার স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কৌতুকপুর্ণ শৈলী আর প্রবল জাতিগত স্টাইলের জন্য তাকে বাক্য-নবাব আখ্যা দেয়া হয়েছিল । তার রচনা বিভিন্ন দেশের বিশাধিক ভাষায় অনুদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে ।

    বিখ্যাত সাহিত্যিক লাও সের মতো কো মো রো ও মাও তুনও চীনের আধুনিক ইতিহাসের দুজন প্রধান সাহিত্যিক , তারা দুজনই সামন্তবাদী সংস্কৃতি-বিরোধী নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রনী ছিলেন । বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কো মো রোর উদ্যোগে চীনের সাহিত্য মহলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী সাহিত্যিক সংগঠন--সৃষ্টি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় , সাহিত্যিক মাও তুনের উদ্যোগে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা গল্প চীনের আধুনিক সাহিত্যিক ইতিহাসের প্রথম সাহিত্যিক পত্রিকা , কো মো রো শুধু কবি ও লেখক নন , তিনি চীনের একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ , প্রত্নতত্ববিদ ও কর্মনায়ক । শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের লেখককে উত্সাহ দেয়ার জন্য তিনি নিজের জমা টাকা দিয়ে মাও তুন সাহিত্য পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন , বর্তমানে চীনের লেখকদের মধ্যে যারা মাও তুন সাহিত্য পুরস্কার পান , তারা নিজেদের ধন্য মনে করেন ।

    পিকিং অপেরা শিল্পী মেই লান ফানকে চীনের অভিনয় শিল্পের প্রতীক বলা যায় । তিনি বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রের চিন্তাভাবনা পিকিং অপেরা শিল্পে মিশিয়ে মেই স্টাইলের অভিনয় শৈলী সৃষ্টি করেছেন , পিকিং অপেরায় তার সৃষ্ট যুবতী মেয়ের চরিত্র দর্শকদের সবচেয়ে বেশী সমাদর পেয়েছে । শিল্পী মেই লান ফানের চমত্কার অভিনয়ের কল্যানে চীনের পিকিং অপেরা শিল্পপৃথিবীর অন্যান্য দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । ফলে আন্তর্জাতিক শিল্পমঞ্চে চীনের পিকিং অপেরার অবস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । মেই লান ফান জাপান , যুক্ত রাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেছিলেন এবং সফরকালে গোর্ক , , টলস্টয় , জর্জ বারনার্ড শ', বেরটোল্ট ব্রেখ্টও ছাপ্লিনসহ পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত লেখক ও শিল্পীর সংগে পরিচিত হন , তারা মেই লান ফানের অভিনয়ের ভুয়সী প্রশংসা করেন এবং মেই লান ফানের পিকিং অপেরা শিল্পকে পৃথিবীর তিনটে অপেরা অভিনয়ের অন্যতম বলে অভিহিত করেছেন ।

    বিখ্যাত ব্যক্তিঘনিভুত ইতিহাস বলা যায় , একটি দেশের বিখ্যাত ব্যক্তির ইতিহাস অবহিত করা , একটি দেশ ও একটি জাতি সম্পর্কে জানার সবচেয়ে দ্রুত উপায় । এই প্রদর্শনীর উপদেষ্টা , সুন ছিন লিন তহবিল সংস্থার উপপ্রধান মাদাম ছি লি ছুন বলেছেন , এই প্রদর্শনীর ছয়জন চীনা বিখ্যাত ব্যক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন , আশা করি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সিংগারপুর ও মালয়েসিয়ার বন্ধুরা আরো সার্বিক ও স্পষ্টভাবে চীনের ইতিহাস উপলব্ধি করতে পারেন এবং এ দুটি দেশের সংগে চীনের সাংস্কৃতিক আদান প্রদান বাড়তে পারে ।

    সিংগাপুরের চীন সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ব্যুরোর প্রধান মিঃ সুই পু লিন মনে করেন , এই প্রদর্শনী স্থানীয় নাগরিকদের পক্ষে চীনের আধুনিক যুগের ইতিহাস জানা আর চীন সম্পর্কে অবহিত হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ । তিনি বলেছেন , চীনের এই প্রদর্শনী সিংগাপুর ও মালয়েসিয়ার প্রবাসী চীনা ও অন্যান্য মহলের ব্যক্তিদের জন্য এক মূল্যবান উপহার নিয়ে এসেছে । প্রদর্শনী সিংগাপুরে প্রদর্শিত হওয়ার পর ১৮ই জুন থেকে ২২শে জুন পর্যন্ত মালয়েসিয়ায় প্রদর্শিত হয়েছে ।