নামঃ মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র (The Republic of Maldives)
স্বাধীনতা দিবসঃ ২৬শে জুলাই (১৯৬৫ খৃষ্টাব্দে)
জাতীয় দিবসঃ ২৬শে জুলাই (১৯৬৫ খৃষ্টাব্দে)
জাতীয় পতাকাঃ আয়ত আকার, তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ৩/২। পতাকায় লাল, সবুজ ও সাদা তিনটি রং আছে। লাল মানে দেশের সার্বভৌম অধিকার আর স্বাধীনতার জন্য শহীদ হওয়া জাতীয় বীরদের রক্ত; সবুজ মানে জীবন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধি; সাদা অর্ধচন্দ্রাকার মানে শান্তি আর মালদ্বীপীদের ইসলাম ধর্মের উপর বিশ্বাস।
জাতীয় প্রতীকঃ তা একটি অর্ধচন্দ্রাকার,একটি তারা, দু'টি জাতীয় পতাকা, একটি নারিকেল গাছ আর ফিতা নিয়ে গঠিত হয়। অর্ধচন্দ্রাকার আর তারা মানে ইসলাম মালদ্বীপের জাতীয় ধর্ম। পতাকা রাষ্ট্রের ক্ষমতা আর মার্যাদার প্রতীক।নারিকেল গাছ জনগণের জীবনযাত্রার প্রতীক। নিচের ফিতায় মালদ্বীপের ঐতিহ্যিক নাম লিপিবদ্ধ আছে।
প্রাকৃতিক ভূবিজ্ঞানঃ তার মোট আয়তন ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার (দেশের সামুদ্রিক জলসীমার আয়তন সহ), ভূখন্ডের আয়তন ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার। মালদ্বীপ ভারত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ দেশ, তা দক্ষিণ ভারত থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং শ্রীলংকা থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। তা ২৬টি প্রাকৃতিক এটল(atoll), ১১৯০টি প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত। এই সব দ্বীপ ১৯টি প্রশাসনিক এলাকায় বিভক্ত। দ্বীপের গড়পড়তা আয়তন ১ বা ২ বর্গকিলোমিটার। দেশের গড়পড়তা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা নিম্ন, প্রায় ১.২ মিটার। মালদ্বীপ বিষুবরেখার নিকটে অবস্থিত বলে তার গ্রীষ্মমন্ডলীয় আহ্বাওয়ার বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়, চারটি ঋতুর পার্থক্য নেই। বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ২১৪৩ মিলিমিটার, তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রি।
জনসংখ্যাঃ ২৮৭ হাজার (২০০২ সাল), দেশের সকল অধিবাসীই মালদ্বীপী জাতি। মাতৃ ভাষা আর রাষ্ট্রীয় ভাষা ধিভেহী(Dhivehi), শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানে ব্যাপকভাবে ইংরেজী ব্যবহৃত হয়। মালদ্বীপদেশীরা প্রধানত সুন্নী মুসলমান। তাদের জাতীয় ধর্ম হলো ইসলাম।
রাজধানী মালে দ্বীপ
রাজধানীঃ মালে(Male), জনসংখ্যা ৭৫ হাজার (২০০২ সাল)
প্রশাসনিক ব্যবস্থাঃ উত্তর আর দক্ষিণ প্রশাসনিক জেলা, প্রতি জেলায় এক জন প্রশাসক, তিনি কয়েকটি এটল (atoll)প্রশাসন করেন।
মুদ্রাঃ রুফিয়া (Rufiyaa)
সংক্ষিপত ইতিহাসঃ খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে মালদ্বীপে আর্যদের আগমন। ১১১৬ খৃষ্টাব্দে সুলতান-রাষ্ট্র স্থাপিত হয়। তারপর প্রায় ৪০০ বছর ধরে পর্তুগাল আর হোল্যান্ডের উপনিবেশ-দেশে পরিণত হয়ে তাদের আগ্রাসন ও শাসনের শিকার হয়। ১৮৮৭ সালে ব্রিটেনের আশ্রিত রাজ্য হয়।১৯৩২ সালে মালদ্বীপে শাসনতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়। ১৯৫২ সালে ব্রিটিশ কমন ওয়েলথের একটি সদস্য দেশ হয়।১৯৫৪ সালে আবার সুলতানি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৫ সালের জুলাই মাসের ২৬ তারিখে মালদ্বীপের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। ১৯৬৮ সালের ১১ই নভেম্বর মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
রাষ্ট্রী প্রধানঃ মাউমূন আব্দুল গায়ূম, ১৯৭৮ সালে ১১ই নভেম্বরে শপথগ্রহণ করেন। তারপর তিনি ১৯৮৩,১৯৮৮,১৯৯৩ আর ১৯৯৮ সালে চারবার পুনর্নির্বাচিত হন।
রাজনীতিঃ নতুন শাসনতন্ত্র ১৯৯৮ সালে পয়লা জানুওয়ারি থেকে প্রবর্তিত হয়। শাসনতন্ত্র অনুযায়ী, মালদ্বীপ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। পুরনো শাসনতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী শুধু একজনের নিয়ম পরিবর্তন করে নতুন শাসনতন্ত্র অনুযায়ী সংসদের যে কোনো সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহন করার অধিকার ভোগ করেন। গণ মজলিস (জাতীয় সংসদ) প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের নামের তালিকা মনোনয়ন করে, পদপ্রার্থী দেশের ভোটারদের অর্ধেক ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাঁর কার্যমেয়াদ ৫ বছর। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হলো, আইন অনুমোদন করা, মজলিসের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত করা, অস্থায়ী আইন ও সাধারণ ক্ষমা জারি করা আর মন্ত্রী নিযুক্ত করা। মালদ্বীপের গণ মজলিস হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন সংস্থা, তার কার্যমেয়াদ ৫ বছর। মজলিসে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোর্টেই প্রস্তাব গৃহিত হয়। সরকারে প্রেসিডেন্টে মন্ত্রীসভা-ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়। দেশের কোনো রাজনৈতিক দল বা পার্টি নেই, সারা দেশে ইসলামী আইন প্রবর্তিত হয়।
অর্থনীতিঃ পর্যটনশিল্প, জাহাজ-পরিবহনশিল্প আর মত্স্যশিল্প মালদ্বীপ অর্থনীতির তিনটি প্রধান অংশ। মালদ্বীপে প্রচুর সমুদ্রিক সম্পদ আছে, যেমন বিভিন্ন রকমের গ্রীষ্মমন্ডলীয় মাছ, সামুদ্রিক কচ্ছপ, প্রবাল শেল ইত্যাদি। গোটাদেশের চাষের জমি মোট ৬৯০০ হেকটোর, জমি অনুর্বর, কৃষি অনুন্নত। সারা দেশে প্রায় ১০ লক্ষ নারিকেল গাছ আছে, নারিকেল উত্পাদন কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে।অন্যান্য শস্য হলো বজরা, ভূট্টা, কলা আর কাস্সাভা। পর্যটনশিল্প সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে শাক-সব্জী ও পশু পালন বেড়েছে। মত্স্যশিল্প দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মালদ্বীপের প্রচুর মাছ আছে, টুনা মাছ, বনীটো মাছ, শার্ক মাছ, লবস্টার , স্লাগ, গ্রুপার, সামুদ্রিক কচ্ছপ ইত্যাদি। সাম্প্রতিক বছরে পর্যটনশিল্পের দ্রুত অগ্রগতি অর্জিত হয়, তা মত্স্যশিল্প ছাড়িয়ে মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রধান অংশ হয়েছে।
তথ্য প্রকাশঃ সারা দেশে দুই রকম ডেইলি পত্রিকা আর কিছু সাপ্তাহিক পত্রিকা ধিভেহী (Dhivehi) ভাষায় ছাপানো হয়, প্রধানত রাজধানী মালে প্রকাশিত হয়। একটি ইংরেজী ডাবল ওয়েইক পত্রিকা।
পররাষ্ট্রনীতিঃ মালদ্বীপ শান্তি, স্বাধীনতা ও জোটনিরপেক্ষতার পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, যে কোনো দেশ মালদ্বীপের স্বাধীনতা আর সার্বভৌত্ব মার্যাদা করে, তাদের সংগেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে। মালদ্বীপ ভারত, জাপান, শ্রীলংকা আর আরব দেশগুলোর সংগে সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দেয়।
চীনের সংগে সম্পর্কঃ ১৯৭২ সালে ১৪ই অক্টোবর চীনের সংগে মালদ্বীপের কূনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
|