রাজা উ'র মৃত্যুর পর শাংবাসীরা বিদ্রোহ ষোষণা করলে তার ভ্রাতা চৌ কোং পূর্বদিকে এক বিরাট অভিযান পরিচালনা করেন। এই অভিযানের সময়ে তিনি পঞ্চাশটিরও অধিক রাজ্যকে পরাভূত করেন এবং পূর্বদিকে বিদ্যমান শাং ক্ষমতার সব চিহ্ন বিলুপ্ত করে পীতনদী উপত্যকার নিম্ন অববাহিকা পর্যন্ত চৌ গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তার করেন।
চৌ গোষ্ঠীর ক্ষমতা সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে চৌ কোং নব-অধিকৃত স্থানসমূহ এবং সেখানকার লোকেদের তার নিজ গোষ্ঠীভুক্ত জ্ঞাতি অথবা অন্য গোষ্ঠীভূক্ত অভিজাত ব্যক্তিদের হাতে সমর্পণ করেন। রাজা ওয়েন, রাজা উ ও চৌ কোং-এর পুত্রেরা এবং চৌ পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিদের রাজকুমার অথবা রাজন্য উপাধি দেওয়া হয় এবং তাদের বর্তমান শানসী, হোনান, শানতোং, শা'সী, হোপেই,হুপেই প্রদেশসমূহের নানা স্থানে জায়গীর দেওয়া হয়। তবে, জায়গীরগুলির অধিকাংশ ছিল বর্তমান হোনান প্রদেশভুক্ত। কথিত আছে চৌ কোং একাত্তরটি জায়গীর স্থাপিত করেন। চৌ রাজা বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য জয় করেন।অধীনস্থ সামন্ত হিসেবে তারা চৌ রাজাদের আদেশ পালন করত এবং চৌ শাসকদের কর প্রদান করত।
পশ্চিম চৌ সময়কালের সমাজ ব্যবস্থা সম্বন্ধে চীনা ঐতিহাসিকেরা বিভিন্ন মত পোষণ করেন। কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন যে, সামন্ততান্ত্রিক সমাজের শুরু হয় পশ্চিম চৌ-এর সময়কালে। আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে চৌ সমাজ তখনও ছিল দাসব্যবস্থাভিত্তিক সমাজ। আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং অদ্যাপি বিদ্যমান লিখিত বিবরণ থেকে পশ্চিম চৌ'র নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো জানা যায়:
১)শাং-এর তুলনায় পশ্চিম চৌ-এর সামাজিক উত্পাদন-শক্তি আরও উন্নত ছিল। প্রধানতঃ কৃষির উত্পাদনের অগ্রগতির ক্ষেত্রেই তা প্রকাশ পায়। তাম্রপট্টে খোদিত লিপিতে এবং "সঙ্গীত কাব্য গ্রন্থ" ও " ঐতিহাসিক গ্রন্থ" তে উল্লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায়, পশ্চিম চৌ একটি কৃষিপ্রধান সমাজে পরিণত হয়েছিল। ভূমি কর্ষণে উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার,কৃষিক্ষেত্রে নানাবিধ ফসল উত্পাদন দ্রব্যের এবং চাষবাসের ব্যাপক বিস্তৃতি থেকে দেখা যায় যে, পশ্চিম চৌ-এর সামাজিক উত্পাদন শক্তির মান শাং-এর তুলনায় আরও উন্নত ছিল। এ কথা বলা যেতে পারে যে, পশ্চিম চৌ-এর শাসনাধীন সব স্থানে উন্নত কৃষিব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এবং পীতনদী উপত্যকার অগ্রগতিতে চৌ রাজাদের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল।
|