v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-01-17 18:09:24    
মানুষের কল্পনায় স্বর্গ --হাংযৌ

cri
    মানুষের কল্পনায় স্বর্গ একটি খুবই সুন্দর জায়গা । তবে মানুষ কোনো দিন স্বর্গ দেখেনি। কিন্তু চীনের একটি শহরকে তুনিয়ার স্বর্ণ বলে ডাকা হয়।এই শহর হলো দক্ষিণ চীনের হাংযৌ। হাংযৌ চীনের যেজিয়াং প্রদেশের রাজধানী। চীনের কয়েকটি প্রাচীন শহরের মধ্যে হাংযৌ একটি।বিখ্যাত পশ্চিম হ্রদ বা ওয়েস্ট লেক এই শহরে অবস্থিত।এই শহরের চার দিকে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্য ও শিল্পনগরী সাংহাই সহ কয়েকটি শহর ঘিরে আছে। সত্বেও হাংযৌ যেন অন্যান্য শহরের মতো তেমন কোলাহলপূর্ণ শহর নয়।হাংযৌ একটি অবসর কাটানোর মতো শহর।সেখানে আপনি নিজের সুযোগসুবিধা মত ছুটি কাটাতে পারেন।

    আমি বেশ কয়েক বার হাংযৌ ভ্রমন করেছি।কিন্তু প্রত্যেক বারই আমার অনুভুতি ভিন্ন। প্রত্যেক বার হাংযৌ আমার কাছে নতুন লাগে।হাংযৌ চীনের পুর্বাংশের একটি উপকুলীয় শহর।যারা এই শহরে বসবাস করেন তারা এই শহরের অধিবাসী বলে খুব সন্তোষ আর গর্ব প্রকাশ করেছেন। মিস্টার হওয়াং গুও পিন এসব অধিবাসীদের মধ্যে একজন।

    হাংযৌ চীনের সাতটি প্রাচীন রাজধানীর অন্যতম।তার ইতিহাস সুদীর্ঘকালের এবং সংস্কৃতি অত্যন্ত সম্মৃদ্ধ।হাংযৌ বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন শহর। কেবল শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত পশ্চিম লেইকের চারপাশেই শতাধিক বিখ্যাত দশর্নীয়স্থান আছে।তা ছাড়া হাংযৌ হলো এমন কয়েকটি শহরের মধ্যে একটি যেখানে মানুষের পক্ষে বসবাস করা সবচেয়ে আরামদায়ক।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাংযৌ শহর জাতি সংঘের শ্রেষ্ঠ বসতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে এবং বিশ্বের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকর্তৃক আন্তর্জাতিক উদ্যান শহর নিবার্চিত হয়েছে। এই শহরের সুনাগরিক হিসেবে মিষ্টার হওয়াং ইতিহাস আর সংস্কৃতির দিক থেকে আমাকে হাংযৌর বৈশিষ্ট্য বলতে চেয়েছেন , কিন্তু একজন পর্যটক হিসেবে আমি বরং নিসেই হাংযৌর স্ববৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করতে চাই । আমার নিজের মাপকাঠি দিয়ে আমি হাংযৌর সৌন্দর্য মাপতে চেয়েছি।

    আপনি অজান্তে লক্ষ্য করতে পারবেন যে , এই হাংযৌ শহর সবসময় পশ্চিম লেইকের সংগে সংযুক্ত হয়। পশ্চিম লেইক হাংযৌ শহরের কেন্দ্রীস্থালেঅবস্থিত। এই লেইক এই শহরের আত্মা। এই লেইকের জলসীমা প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার।এই জলসীমাকে কেন্দ্র করে ৬০ বর্গ কিলোমিটারের পশ্চিম লেইকের সুদৃশ্য এলাকা রুপায়িত হয়েছে।এখানে হ্রদের স্বচ্ছ পানি ও ছবির মতো পাহাড় সম্মৃদ্ধ পুরার্কীতির সংগে মিশে গেছে।আমরা যেমন প্রাকৃতিক আকর্ষন অনুভব করতে পরি , তেমনি এর সংস্কৃতি আর ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হয়েছি।আমার সংগী গাইড জেন বারংবার পর্যটকদের পশ্চিম লেইক সম্বন্ধে বর্নণা করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিম লেইক সম্পর্কে বণর্না শেষ করা যায় না।

    হাংযৌর পশ্চিম লেইকের ইতিহাস দু হাজার বছরের চেয়ে দীর্ঘ।বতর্মানে পশ্চিম লেইকে মোট তিনটি দ্বিপ আর তিনটি বাঁধ আছে। সু বাঁধ, বাই বাঁধ এর ইয়াংগং বাঁধ। সাধারণত সু বাঁধকে প্রেমিক বাঁধ বলে ডাকা হয়।এ তিনটি বাঁধের মধ্যে সু বাঁধের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশী।সু বাঁধে ছ'টি সেতু আছে।এই বাঁধের দুই পাশে বিভিন্ন ফল আর ঘাস লাগানো হয়েছে বলে শহরের প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে হাতে হাত রেখে হাঁটতে পছন্দ করে।অনেকেই পশ্চিম লেইকে নৌবিহার করতে পছন্দ করেন।তবে মনে রাখতে হবে যে, চার দিকের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি সানঠান ইনয়ু নামে একটি দ্বীপনা দেখলে চলবে না।এই দ্বীপ পশ্চিম লেইকের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত।তিনটি পাথরের প্যাগোডা স্বচ্ছ পানিতে দেখা যায়। এ তিনটি প্যাগোড ৪ শো বছরের পুরনো ।প্যাগোডার উচ্চতা দুই মিটার, প্যাগোডার চেহারা দেখতে বলের মতো।এর গায়ে সমানভাবে ৫টি ছোট ছিদ্র করা হয়। রাতের বেলায় আকাশে চাঁদ থাকা বিশেষ করে পূর্ণিমার সময় যখন লোকেরা প্যাগোডার ভিতরে মোমবাতি জ্বালায়এবং ছিদ্রের মুখে পাতলা পাতলা কাগজ জড়ায়, তখন মোমবাতির আলো পাতলা কাগজ ভেদ করে পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক সেই মুহুর্তে পানিতে প্যাগোডার ছায়া, মেঘের ছায়া আর চাঁদের ছায়ার সংগে মোমবাতির আলো, লেকের আলো এবং চাঁদের আলো এক সংগে মিশে যায়। সানঠানইনয়ু নামটির এখান থেকে উত্পত্তি।হ্রদে নৌবিহার করলে পশ্চিম হ্রদের দৃশ্য উপভোগ করা হয়, কিন্তু পশ্চিম হ্রদের বাঁধে উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো আমার অভ্যস।কারণ হ্রদের বাঁধে হাঁটলে চার দিকের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এই দীর্ঘ বাঁধের দু পাশে নানা ধরনের গাছপালার সারি। নানা রংয়ের ফুলগুলো পশ্চিম হ্রদের অবিকৃত রং।যদি দিনের বেলায় পশ্চিম হ্রদে ভ্রমণ করে আপনি আনন্দ পান , তাহলে হাংযৌর রাতের জীবন আপনাকে অজানতে আরেকটি জগতে নিয়ে যাবে।নানসেন সড়কে হাংযৌর রাতের জীবন অত্যন্ত বৈচিত্রময়, সেখানকার ব্যবসা অত্যন্ত জমজমাট। গাইড ম্যাডাম জেন আমাকে বললেন,

    এখানে অনেক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সড়ক আছে।নানসেন সড়ক প্রধানত একটি অবসর কাটানোর সড়ক।এই সড়কে অনেক বা, চা আর কফি ভবন আছে।এটি এমন একটি সড়ক যেখানে চীন আর পাশ্চাত্য দেশগুলোর সংস্কৃতির মিলন ঘটেছে ।এই সড়কের বিপরিত দিকেই পশ্চিম হ্রদ।বার ছাড়াও নানসেন সড়কের চিত্রাংকন করিডোও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। রাতবেলার নানসেন সড়ক হচ্ছে এই শহরের অতিথিপরায়ন মালিক। এই মালিক আপনাকে সহ্য করতে পারে, আপনাকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে এবং আপনাকে এখানে আমোদপ্রমোদে উপভোগ করার ব্যবস্থা দিতে পারে।হাংযৌ সত্যি একটি আরামদায়ক বাড়ি।সুতরাং এখানকার আরামদায়ক জীবন ছেড়ে হাংযৌ বাসীরা বাইরে যেতে পছন্দ করেন না।

    জানা গেছে, এই শহরকে "প্রাচ্যের অবকাশ নগর" হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বতর্মানে হাংযৌ যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাছে।পর্যটনের অবকাঠামো থেকে পর্যটনের পরিসেবা পর্যন্ত সবকিছুই আরো উন্নত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।