v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-01-12 15:46:55    
ফুমি জাতি

cri
    দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের উত্তরাংশের পাহাড়ী অঞ্চলে চীনের অন্যতম লোকসংখ্যা ৩০ হাজার । তারা প্রধানত: লানপিং পাই জাতি ফুমি জাতি স্বায়ত্ত শাসিত জেলায় থাকেন । ফুনি জাতির পূর্বপুরুষরা উতর -পশ্চিম চীনের তৃণভূমিতে থাকতেন এবং পশু পালকদের জীবন কাটাতেন । ত্রয়োদশ শতাব্দিতে তারা এখনকার আবাসস্থলে স্থানান্তরিত হন । ৭ শো বছরাধিককাল চলে গেছে । ফুমি জাতি প্রজন্মান্তরে বংশ বিস্তার করে আসছে । সংখ্যালঘুজাতির সংগীত , ভাষা , রীতিনীতি আর সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সর্বত্রই স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আচার ব্যবহার বিরাজ করে ।

    ফুমি জাতির স্ব-জাতডয় বাদ্যযন্ত্র বাঁশি দিয়ে বাজানো হয়েছে । এই সুরটা ফুমি জাতির যুবক ইয়েন লিয়েন  বাজিয়েছেন । তিনি ইউননান প্রদেশের ফুমি জাতির অধ্যুষিত অঞ্চলে জন্ম গ্রহণ করেন । যদিও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর পেইচিংয়ে চাকরি করছেন ,কিন্তু তিনি গভীরভাবে নিজের জন্মস্থল আর জাতির সংস্কৃতির স্মৃতিচারণ করেন । ফুমি জাতির অন্যান্য যুবকের মতো তিনি নিজের জাতির সংগীত খুব ভালবাসেন । তিনি সংবাদদাতাকে নিজের বানানো বাঁশি দেখালেন । বাঁশির সুরটা সংবাদদাতাকে ফুমি জাতির পাহাড়ী গ্রামে টেনে এনেছে ।

    তিনি বলেছেন , ফুমি জাতি এমন একটি জাতি ,যে জাতি অতীত-স্মৃতি খুব রোমন্হন করে । তাদের বহু রীতিনীতিতে এখনো ঐতিহাসিক- চিহ্ন বজায় রয়েছে। বিশেষ করে অল্পবয়সীরা গ্রামের বয়স্কদের কাছে ঐতিহাসিক কাহিনী শুনতে খুব পছন্দ করে । নি: শব্দ রাতে গ্রামবাসীরা আগুনের পাশে বসে থাকেন এবং পূর্বপুরুষদের উতর দিক থেকে স্থানান্তর সংক্রান্ত বয়স্কদের বর্নিত গল্প শুনেন । তারা গল্পটা বহুবার শুনেছেন, এতে তারা পূর্বপুরুষদের পরিশ্রম ও অধ্যবসায় উপলব্ধি করেছেন । পূর্বপুরুষদের দূর পাল্লার স্থানান্তরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য ফুমি জাতির মহিলাদের স্কার্টের মাঝখানের দিকে সূচীকর্মের মাধ্যমে একটি লাল সূতা রয়েছে । সূতাটি আঁকাবাঁকা । এতে বোঝা যায় , ফুমি জাতির পূর্বপুরুষদের স্থানান্তরের লাইন । জানা গেছে,ফুমি জাতির লোকেরা মৃত্যু হওয়ার পর এই পথ বেয়ে নিজের স্বর্গীয়রাজ্য খুঁজে বের করেন ।

    যেহেতু ফুমি জাতির লোকেরা নিজের মৃত্যুবরণকে জন্মস্থলে প্রত্যাবর্তন বলে মনে করেন , সেহেতু তাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানও পূর্বপুরুষদের স্মৃতিতে ভরপুর । ফুমি জাতির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে নিহতদের পূর্বপুরুষদের জানানো হয় এবং উতরাংশে ফিরে যাওয়ার পথনির্দেশক হিসেবে একটি ভেড়া নিয়ে আসা হয় ।

    ফুমি জাতির লোকেরা এই বিশেষ ধরনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জন্মস্থলের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন । এতে স্বজাতির বহু ঐতিহ্য উতরাধিকার-সূত্রে গ্রহণ করার চরিত্রও প্রতিফলিত হয়েছে । পশুপালক জাতির বংশধর ফুমি জাতির বাচ্চাদের বয়স যখন ১৩ বছর ,তখন তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এই অনুষ্ঠান প্রসংগে ইয়েন লিয়েন চ্যুন বলেছেন : এই উত্সব ফুমি জাতির বাচ্চাদের পক্ষে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উত্সব। এই অনুষ্ঠানে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় । যখন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় ,তখন পরিবারের সদস্যরা আগুণের পাশে বসে থাকেন । প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বাচ্চা সম্পতি-চিহ্নিত খাদ্যের বস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকে । এ থেকে প্রতিপন্ন হয় যে , তার জীবন সুখী হবে । বয়:প্রাপ্তি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ফুমি জাতির যুবক যুবতীরা যৌথ উত্পাদন ও শ্রম আর নানা রকমের সামাজিক তত্পরতায় যোগ দিতে পারবে এবং প্রেম করার যোগ্যতা তাদেরও আছে । ফুমি জাতির যুবক যুবতীরা সাধারণত : স্বেচ্ছায় প্রেম করে । কিন্তু বিয়ের সময়ে বহু জায়গায় তথাকথিত বধুকে বলপূর্বক অপহরণের ঘটনা ঘটে । আসলে প্রেমিক-প্রেমিকার উভয় পক্ষের পিবার -পরিজন যদি তাদের বিয়েতে রাজী না হয় , তাহলে প্রেমিক ও প্রেমিকা তথাকথিত নববধুকে বলপূর্বক অপহরণের ঘটনার অভিনয় করে । উভয় পক্ষের পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারে নববধু নিশ্চিন্তে শ্রম করারভান করার জন্য বাইরে যায়,বর পক্ষ তাকে গোপনে অনুসরণ করে । সুযোগ বুঝে তারা বধুকে অপহরণ করে । বধুকে অপহরণের পরিকল্পনা সফল হওয়ার পর গ্রামবাসীরা তাদেরকে দম্পতি বলে স্বীকৃতি দেয় । তখন উভয় পক্ষের পরিবার পরিজনও বাধ্য হয়ে তাদের স্বীকৃতি দেয় । বহু ফুমি জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে বধু অপহরনের আচার ব্যবহার এখনো বজায় রয়েছে ।

    যদিও নিত্য জীবনযাপনে ফুমি জাতির লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন , কিন্তু যুগের উন্নয়ন আর অগ্রগতির সংগে সংগে কতকগুলো পুরানো রীতিনীতি ক্রমেই জনসাধারণের জীবনযাপন থেকে চলে গেছে । জনাব ইয়েন বলেছেন ,আগে ফুমি জাতির লোকেরা খাওয়ার আগে বাটি মাথার সামনে তুলে ধরে দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন । এখন শুধু তার নানীর মতো বয়স্করাই এই রীতি নীতি অনুসরণ করেন । সমাজের অগ্রগতির সংগে সংগে দেবতার প্রতিলোকদের অন্ধবিশ্বাস চলে গেছে । কিন্তু অনুষ্ঠান হিসেবে ফুমি জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস এখনো অব্যাহত রয়েছে ।

    ফুমি জাতি তি পা ধর্মে বিশ্বাস করে । এটা এক ধরনের প্রাচীন ধর্ম । তিং পা ধর্ম ফুমি জাতির জীবনযাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । কিংবদন্তী অনুযায়ী, তিংপা একজন সুন্দরী ও দক্ষ দেবী । তিনি সাদা পোষাক ও স্কার্ট পরেন, সাদা গাধায় চড়েন আর শুধু ঝরনার পানি ও গরু ছাগলের দুধ খান । তিনি এমন একজন দেবী, যার সাহায্যে মানুষ বিপদ ও দুর্যোগের কবল থেকে রেহাই পায় । কেন্দ্রীয় জাতিত্তব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাদাম ইয়াং জু হুই বলেছেন,

    তিং পা ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার নাম তিং পা । এই ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, পৃথিবীতে সকল রকমের প্রানী ও পদার্থের আত্মা আছে । এই বিশ্বাসের দিক থেকে বিবেচনা করে ব্যাধি ও দির্যোগ প্রতিরোধ করার জন্য কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ,যাতে আত্মার রক্ষা পাওয়া যায় ।

    ফুসি জাতির লোকদের আন্তরিকতা আর আতিথেয়তা বেশী । যখন অতিথিরা আসেন,তখন স্বাগতিকরা তাদের মাখন চা ও ফল খেতে দেন । অতিথিরা বিদায় নেয়ার সময়ে স্বাগতিকরা কিছু উপহারও দেন ।