"সুন্দরতম স্থান আমাদের সিনচিয়াং" নামে একটি উইগুর জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লোক সংগীত আছে। গানে বলা হয়েছে, সবচেয়ে সুন্দর জায়গা আমাদের সিনচিয়াং। তৃণভূমিতে ফুল ফোটে, মরু ও গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খেজুর গাছ পবর্ত শৃঙ্গ বরফে আবৃত আর মরু থেকে দূরে প্রস্রবণ গলে।
চীন গণ-প্রজাতন্ত্রের মানচিত্রের আকার এমন একটি মোরগের মতো, যে মোরগ ভোরবেলায় ডাকে। সিনচিয়াং স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলই এই মোরগেরই লেজের মতো।
উত্তর-পশ্চিম চীনে অবস্থিত সিনচিয়াংয়ের আয়তন ১৬ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি। আয়তনের দিক থেকে সিনচিয়াং চীনের সকল প্রদেশ ও স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের মধ্যে তা বৃহত্তম। উত্তর-পূর্বাংশ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত সিনচিয়াং যথাক্রমে মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কাজখ্স্তান, কির্গিজস্তান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান আর ভারতের সংগে সংলগ্ন। সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্যের দিক থেকেও চীনের সব প্রদেশ ও অঞ্চলের মধ্যে তার স্থান প্রথম। বর্তমানে সিনচিয়াংয়ে স্থল-বন্দরের সংখ্যা ষোলোতে দাঁড়িয়েছে। এটা চীনের উন্মুক্ততা, সীমান্ত বানিজ্য আর আন্তঃদেশীয় পর্যটন শিল্প উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক শর্ত সৃষ্টি করেছে। সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের চেয়ারম্যান সমাই তিলিওয়ালদি বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের সংগে সিনচিয়াংয়ের অর্থনৈতিক বানিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্রত দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, সংস্কার আর উন্মুক্ততা প্রবর্তিত হবার পর থেকে সিনচিয়াংয়ে অর্থনৈতিক শক্তিক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি প্রভৃতি সামাজিক ব্রতে লক্ষনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। জনগণের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে এবং বিভিন্ন জাতির জনগণ স্বাস্তি আর মুখে থাকে।
১ হাজার চার শো বছর আগে সিনচিয়াং প্রাচীন রেশম পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল। তার মাধ্যমে চীনের রেশম ও কাগজ তৈরীর প্রকৌশল বিদেশে প্রবর্তিত হয়েছে এবং পাশ্চাত্ত্যের ধর্ম, সংস্কৃতি ইত্যাদিও সিনচিয়াংয়ে প্রবেশ হয়েছে। বর্তমান সিনচিয়াংয়ে প্রধান জাতি হিসেবে উইগুর জাতি ছাড়াও কাজাখ জাতি,হুই জাতি প্রভৃতি চল্লিশাধিক জাতি মিলিতভাবে এই অঞ্চলে বাস করে।
সিনচিয়াংয়ে সংখ্যালঘু জাতির অদ্বিতীয় আচার ব্যবহার ছাড়া প্রাচুর্যময় প্রাকৃতিক সম্পদও আছে। এই বিস্তীর্ন অঞ্চলে তৃণভূমি, মরুভুমি, পাহাড় ও নদ-নদী আছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত তিনটি পর্বত হল আরথাই পর্বত, থিয়েনসান পর্বত আর খুংলং পবর্ত। দুটো বৃহত্ উপত্যকা হল চেনকার উপত্যকা আর তারিমো উপত্যকা।
এই তিনটি পর্বতের ভিতরে সোনা, তামা, সীসা, দস্তা ও বহু প্রকার খনিজ পদার্থ মজুদ রয়েছে। এই তিনটি পর্বত সারা বছর বরফে আবৃত, তাতে মনোরম আর রহস্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ-এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গ্রীষ্মকালে যখন পর্বতের বরফ গলে যায়, তখন বরফের পানি সিনচিয়াংয়ের নদ-নদীতে চলে যায়। এটা সিনচিয়াংয়ের জলসেচের একটি অপরিহার্য উত্সে পরিণত হয়েছে।
সিনচিয়াংয়ের উত্তরাংশেরচেনকার উপত্যকায় একটি বিরাট সমতলভূমি আছে। এটা সিনচিয়াংয়ের শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক পশুপালন এলাকা। দক্ষিণাংশের তারিমো উপত্যকা সিনচিয়াংয়ের উর্বর কৃষি এলাকা। উপত্যকার বিস্তীর্ণ মরভূমি প্রচুর তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি সম্পদ সমৃদ্ধ।
সিনচিয়াংয়ের আবহাওয়া শুষ্ক আর সূর্যের আলো প্রচুর বলে ওখানে বৈচিত্র্যময় ফলমূল আর তরমুজ উত্পাদন করা হয়।
বাইরের সংগে সিনচিয়াংয়ের আদান প্রদান ক্রমাগত বেড়ে যাবার সংগে সংগে এই অঞ্চলের ফলমূল আর তরমুজ চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে, এমন কি বিদেশেও রফতানি করা হয়।
বাইরের সংগে সিনচিয়াংয়ের আদান-প্রদান আর বানিজ্য প্রসংগে অঞ্চলের চেয়ারম্যান সমাই টিলিওয়ালদি বলেছেন, ফলমূল ছাড়া কৃষি উন্নয়ন, তেল ও রসায়ন শিল্প, নতুন শক্তি সম্পদের উন্নয়ন, ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈদেশিক পূর্জিবিনিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশের অভ্যন্তর ও বহিঃবিশ্বের দিকে উন্মুক্ততা আরো সম্প্রসারিত করতে হবে, যেমন চীনের অভ্যন্তরভাগের অন্যান্য প্রদেশ ও অঞ্চল তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংগে ব্যাপক আদানপ্রদান ও সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
|