থুচা জাতি চীনের অন্যতম সংখ্যালঘু জাতি,যার জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি ।এই জাতির ৫০ লক্ষেরও বেশি লোক প্রধানত: চীনের হুপেই প্রদেশের পশ্চিমাংশের থুচা জাতি ও মিয়াও জাতির স্বায়? শাসিত বিভাগ,হুনান প্রদেশের পশ্চিমাংশের মিয়াও জাতি ও থুচা জাতির স্বায়? শাসিত বিভাগ এবং ছংছিং কেন্দ্রশাসিত মহানগরীর দক্ষিণ পূর্বাংশ আর কুইচৌ প্রদেশের উ?র পূর্বাংশে ছড়িয়ে আছে ।বিশ্বখ্যাত ইয়াংশি নদীর তিনগিরি খাত-এর দুই পারের উসান পাহাড় ও দাপা পাহাড়,বিশ্বজোড়া প্রসিদূ দর্শনীয় স্থল উলিন পাহাড় এবং প্রানীস ও উদ্ভিদ রাজ্য বলে আখ্যায়িত উতান পাহাড় এই এলাকায় অবস্থিত ।সুতরাং থুচা জাতিও পাহাড়ী বংশধর বলে আখ্যায়িত করা হয় ।
থুচা জাতি একটি প্রাচীন সংখ্যালঘু জাতি ।চীনের দু হাজার বছরেরও বেশি সময়ের আগেকার ঐতিহাসিক গ্রন্থে থুচা জাতি সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায় । তিন শো বছরেরও বেশি সময় আগেকার চীনের ছিং রাজবংশ আমলেই থুচা জাতি এখনকার অধ্যুষিত কাঠামোতে পরিনত হয়েছে ।
চীনের অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির মতোই থুচা জাতির আন্তরিকতা আর আতিথেয়তা বেশি ।অতিথিদের স্বাগত জানাবার সময়ে তারা স্বজাতির ঐতিহ্যিক নাচ করেন আর চা খাওয়ান ।তাদের আতিথেয়তায় সুখ প্রার্থনা আর প্রাচুর্যময় ফসল পাওয়ার কামনা প্রতিফলিত হয় ।
অন্যান্য জাতির চেয়ে থুচা জাতির স্ববৈশুষ্ট্যসম্পন্ন বিয়ে ও শেষক্যৃ অনুষ্ঠান আছে ।থুচা জাতির প্রথা অনুযায়ী,বিয়ের দিনে বরের বাড়ি যাওয়ার সময়ে মা ও সংগিনীর সমভি ব্যাহারে বধু কাঁদতে কাঁদতে গান গায় ।গানে পরিবার পরিজনের প্রতি অর অনুভূতি ব্যক্ত করা হয় ।
থুচা জাতির শেষকুত্য অনুষ্ঠানও অসাধারন ।মিঃ চৌ লুং একজন থুচা জাতির লোক ।থুচা জাতির শেষকৃত্য অনুষ্ঠান প্রসংগে তিনি বলেছেন,
থুচা জাতি পাহাড়ি জাতি ।পরিশ্রম,সততা তাদের স্বভাব ।জীবন ও মরনের ব্যাপারে তারা এক ধরনের সক্রিয় ও বস্তনিষ্ঠ মনোভাব অবলম্বন করেন ।যেমন নিহতদের প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করার সময়ে তারা যে নাচ করেন,তাতে যমন শ্রদ্ধা,তেমনি বিদেহী আতমার শুভ কামনাও প্রতিফলিত হয় ।
থুচা জাতির স্থাপত্য শিল্পও অন্য রকমের ।তারা কাঠের বাড়িঘরে থাকতে পছন্দ করেন ।বাড়ির মাঝখানের কক্ষ ।পূর্বপুরুষ শ্রদ্ধা আর অতিথিদের স্বাগত জানাবার জন্য ব্যবহ্নত হয় ।পাশের দুটা কক্ষ থাকা আর খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় ।ধনাড়ঢো পরিবারগুলো পাহাড়ের পাদদেশে মেয়ের জন্য কাঠ দিয়ে দে তলা দালান নির্মান করে ।
থুচা জাতির স্থাপত্য শিল্প প্রসংগে চীনের কেন্দীয় সংখ্যালঘুজাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার হু শাও হুয়া বলেছেন,কাঠ দিয়ে নির্মিত এ ধরনের বাড়িঘর ছাড়া থুচা জাতির অন্যরকমের বাড়িঘরও আছে ।যেমন পশ্চিম চীনের ছুংছিং শহরে কিছু স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বাড়িঘর আছে ।তিনি বলেছেন ,
স্থাপত্য শিল্পের দিক থেকে থুচা জাতির আঞ্চলিক সাকারী কর্মকর্তাদের কার্যালয় অদ্বুতীয় ।যেমন সিচু জেলা প্রশাসকের অফিস ভবন,একটি গুহাতে নির্মান করা হয়েছে ।গুহাতে ব্যবস্থাদি যেমন উজ্জ্বল তেমনি ব্যবহারিক ।
চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ততা প্রবর্তিত হবার আগে থুচা জাতির অর্থনীতি কৃষি প্রধান ছিলো ।পাহাড়ে ভুট্রা ও মিষ্টি আলুর পষ করা হত।ইয়াংসি নদীর তিনগিরিখাত এলাকায় বসবাসকারী থুচা জাতির লোকেরা কমলা লেবুও রোপন করতেন ।
ইয়াংশি নদীর তিনগিরিখাত প্রকল্প গড়ে তোলার সংগে সংগে থুচা জাতির জীবনযাত্রার নতুন পরিবর্তন হয়েছে ।কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার ফাং স্যু ইউন এ সম্বন্ধে তদন্ত চালিয়েছেন।তিনি মনে করেন,
তিনগিরিখাত প্রকল্পের নির্মানকাজ থুচা জাতির জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ বয়ে এনেছে ।দেশের পূঁজিবিনিয়োগ বেড়ে গেছে ।থুচা জাতির লোকেরা সক্রিয় মনোভাব অবলম্বন করে তিনগিরিখাত প্রকল্পের নির্মানকাজে ঝাপিয়ে পড়েছেন ।এর সংগে সংগে থুচা জাতিন জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক আয়ও দ্রুতগতিতে বেড়েছে ।
তিনগিরিখাত প্রকল্পের নির্মানকাজ এগিয়ে যাবার সংগে সংগে অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ।এর মধ্যে পর্যটন শিল্প সবচাইতে প্রসারিত হয়েছে ।এখন তিনগিরিখাত ভ্রমন ব্যাপকভাবে দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণীয় বিষয় ।পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে থুচা জাতির জীবনযাত্রার মানও বিপুলমাত্রায় উন্নত হয়েছে।
|