v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-28 13:38:22    
মালভূমির হ্রদের আশেপাশে ইয়ুননান মঙ্গলীয় জাতির বসবাস

cri
    চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে রয়েছে মঙ্গলীয় জাতি। মঙ্গোলীয় জাতির অধিকাংশ উত্তর চীনের ইউন্নানের মঙ্গোলীয় তৃণভূমিতে বাস করেন। বিস্তীর্ণ তৃণসমাচ্ছন্ন প্রান্তর, তেজম্বী ঘোড়া ও সাদা সাদা মঙ্গোলীয় শিবির মঙ্গোলীয় জাতির জীবন-যাপনে সাধারণত দেখা যায়। কিন্তু আপনারা জানেন, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশেও কিছু মঙ্গোলীয় জাতির লোকজন বসবাস করেন। তাঁদের উত্পাদন ও জীবন-যাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উত্তর চীনের মঙ্গোলীয় জাতির অনেক পার্থক্য থাকে। তাঁরা মাছ ধরেন, জ্বালানি কাঠ কাটেন,জমি চাষ করেন এবং স্থাপত্যশিল্পের ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন।

    চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের মধ্য অঞ্চলে বিশাল মাইলে রয়েছে বিশালায়তনের হ্রদ। এর মধ্যে থোংহাই শহরের পাহাড়ের নিচে অবস্থিত চিলু হ্রদ সবচেয়ে সুন্দর। চিলু হ্রদের আশেপাশেই ইয়ুন নানের মঙ্গোলীয় জাতির বসবাস জায়গা। এ জাতির বর্তমান লোকসংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশী। তাঁরা সবাই ১৩তম শতাব্দীর সময়ে চীনের ইউয়ান রাজবংশের মঙ্গোলীয় অফিসের ও সৈন্যদের বংশধর। সাতশো বছর আগে ইউয়ান রাজবংশের রাজা কুবলা খানের তাঁর বাহিনী নিয়ে মঙ্গোলীয় তৃণভূমি থেকে ইউন্নান প্রদেশে এসে এখনকার নানা বসতি একীভূত করেছে। স্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য রাজা কুবলা খানের পরিচালিত একটি বাহিনীর কিছু সৈন্য ইয়ুন নান প্রদেশে মোতায়েন ছিল। এই সুন্দর হ্রদের তীরই তাঁদের বসবাস জায়গা।

    থোংহাই শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক লি শুসান ইয়ুন নানের মঙ্গোলীয় জাতির পরিবর্তনশীল ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। তিনি বলেছেন, ১৩তম শতাব্দীতে কুবলা খান ১ লক্ষ বাহিনী নিয়ে কানসু, সিছুয়ান পার হয়ে ইয়ুন নান এসেছিলন। ইয়ুন নানের একীকরণ হওয়ার পর তাঁরা আরও দক্ষিণ চীনে এগিয়ে থোংহাই শহরে এসেছেন। এ জায়গার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তাঁরা এখানে প্রশাসনিক সংস্থা স্থাপিত করেন। অতএব মঙ্গোলীয় জাতি এখানে বসতি গাঁড়ে এবং মাছ উত্পাদন শুরু করে। তাঁদের বংশধররা পর পর থোংহাই শহরে বাস করেন।

    সাতশো বছর তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে। স্থানীয় জীবন-যাত্রার খাপ খাওয়ানোর জন্যে মঙ্গোলীয় জাতির লোকজন আগেকার পশুপালক থেকে জেলে হয়ে গেছেন। তারপর আবার কৃষক ও স্থাপত্যশিল্পের শ্রমিক হয়ে গেছেন। বলা যায়, অনেক জাতি যে স্থানীয় পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য নিজের জীবন-যাত্রার পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে, ইয়ুন নানের মঙ্গোলীয় জাতি তাদের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত।

    থোংহাই শহর একটি বহু জাতিক বসবাস এলাকা। এখানে থাকে হান, হুই, ঈ, তাই ইত্যাদি জাতি। অন্যান্য জাতির সংগে আদান-প্রদানের ফলে, ইয়ুন-নানের মঙ্গোলীয় জাতি আগেকার জীবন-যাত্রা ও উত্পাদনের পদ্ধতি পরিবর্তন করে নানা জাতির সাংস্কৃতিক ধারণা নিয়ে নিজের সংস্কৃতির সংগে মিশিয়ে একটি জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও সংস্কৃতির বিশেষ স্বাতন্ত্র্য গড়ে তুলেছেন। যেমন তৃণভূমিয় মঙ্গোলীয় জাতি তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। পক্ষান্তরে ইয়ুন নানের মঙ্গোলীয় জাতি নানা দেবদেবী বিশ্বাস করেন এবং তাঁর মনে করেন সব জিনিসপত্রেরই আত্মা থাকে। প্রতিটি লোকের বাড়ির বৈঠকখানায় পুর্বপুরুষের ম্মৃতি ফলক টাঙিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়ে থাকে। পল্লীতে পুর্বপুরুষের স্মারক মন্দির এবং নানা দেবদেবীর মূর্তিকে শ্রদ্ধা করার মন্দির আছে। এ মন্দিরগুলো নানা ধরনের। তাদের মধ্যে কনফুসিয়াসের মতবাদ, বৌদ্ধ ধর্ম এবং তাও ধর্মের মন্দির আছে। আরও আছে প্রাচীন ধর্মের মন্দির। বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতি এখানে মিশে গেছে।

    তৃণভূমি থেকে অনেক দূরে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের গান গাওয়া ও নৃত্য করার সামর্থ্য কমে নি। কিন্তু তাঁদের নৃত্যের বড় অংশ জুড়ে স্থানীয় ঈ জাতির নৃত্য মিশে গেছে। "সাংগীতিক নৃত্যের" নাচ ইয়ুন নানের মঙ্গোলীয় জাতির যুবক-যুবকীদের প্রিয় নৃত্য। শুরুতে সকল এক গোল বেঁধে থাকে। চারতারা বাহালা দিয়ে বাজানো সংগীতের সংগে সংগে নৃত্য করেন। নৃত্যটি খুব সুন্দর , আনন্দময় এবং প্রাণবন্ত।

    ইয়ুন নানের মঙ্গোলীয় জাতির বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বলতে গেলে অনেক কিছু বলা যায়। নারীদের জামা-কাপড়ই একটা বৈশিষ্টসম্পন্ন জিনিস। নারীদের পোষাক তিনটি। প্রথমটি ভেতরকার ব্লাউজ, মঙ্গোলীয় জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উচ্চ গলবন্ধ ওয়ালা লম্বা আস্তিন । দ্বিতীয়টি গলবন্ধ নেই , সাত রঙের কাপড় দিয়ে তৈরী হাফ-আস্তিন। বাইরের অংশ একটি মঙ্গোলীয় জ্যাকেট। জ্যাকেটের দু'পাশে লাইন বেঁধে নানা আকারের রূপা কারুকার্য। তিনটি কাপড় গায়ে দিলে দেখতে খুব সুন্দর। এই জামা-কাপড়ের ছবি ও কারুকার্য থেকে বোঝা যায়, উত্তর চীনের মঙ্গলীয় জাতির জামা-কাপড়ের কিছুটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই জামা-কাপড়ে।

    ইয়ুন নানের মঙ্গলীয় জাতির উত্সবও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এ তাঁদের জীবন-যাপনের অভিজ্ঞতার সংগে জড়িত। আগে তাঁরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। হান জাতির ভাইবোনের কাছ থেকে ওঁরা শিখেছেন ঘরবাড়ির নির্মাণ এবং এই শিল্পের উন্নতি সাধন করেছেন। বলা হয়, লু ব্যান নামে একজনের উদ্যাগে চীনের স্থাপত্য শিল্প শুরু হয়। এই জন্যে এখানকার লোকেরা লু ব্যানকে সম্মান ও পছন্দ করেন। প্রতি বছর লু ব্যান উত্সব হয় এখানে।

    ইয়ুন নানের মঙ্গোলীয় জাতি তাদের পুর্বপুরুষ থেকে শেখা স্থাপত্যরীতিতে অনেক বড় ভবন গড়ে তুলেছে। এ ভবনগুলোকে উত্তরপুরুষরা বার বার প্রশংসা করে। যেমন তাদের নির্মিত থোংহাইয়ের সিউ সান গু বাই ভবন ও চুই খুয়েই চিলে কোঠা ইত্যাদি স্থাপত্য চীনের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যের নিদর্শন বলা যায়। বিশেষত সিও সান গু বাই ভব্ন। থোংহাই শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক লি সুসান প্রশংসা করে বলেছেন, "সিউ সান গু বাই ভবনের মতো স্থাপত্য চীনে এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমরা এটাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ইউনিটগুলো তালিকাভুক্ত করার আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।

    বর্তমানে, স্থাপত্য শিল্প থোংহাইয়ের মঙ্গোলীয় জাতির প্রধান শিল্প। তারা নিরন্তর প্রয়াসে নিজের কৌশল ও প্রযুক্তির মান উন্নত করেছে। নানা ধরনের স্থাপত্য প্রকল্প তাদের পরিচালক নির্মিত হচ্ছে। ইয়ুন নান প্রদেশ, অন্যান্য প্রদেশ এবং এমনকি বিদেশেও এ জাতির স্থপতিরা কাজ করেছেন। এ কয়েক বছর ধরে, স্থাপত্য শিল্প ছাড়া, অন্য কৃষি ও পার্শ্বজাত শিল্প,পরিসেবা শিল্প অনেক উন্নত হয়েছে বলে এ জাতির লোকজনের জীবন-যাপনের মান অনেক উন্নত হয়েছে।

    লিনচিং থোংহাই শহরের একজন মঙ্গোলীয়। জাতির লোক তিনি তাঁর শহরের জীবন সম্বন্ধে বলেছেন, "বর্তমানে মঙ্গোলীয় জাতি তামাক ও মিষ্টি বাংগী চাষ করে এবং খাবারের দোকান চালায়। জীবন-যাত্রার মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। অনেক বাড়িতে মটর সাইকেল ও গাড়ি আছে"। এ থেকে বোঝা যায়, ইয়ুন নানের মঙ্গোলীয় জাতি পুরনোকে পেছনে ফেলে, নতুনকে স্বাগত জানায় বলে তারা আধুনিক জীবন উপভোগ করছে। আশা করি তাদের জীবন আরো সুন্দর, স্বচ্ছল ও সুখের হবে।