v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-23 10:24:25    
ওয়াং চাওহুই

cri
    চীনের হুনান প্রদেশের সিয়াংথান শহরে এক শ্রম-বাজার আছে , বাইরে থেকে অন্যান্য শ্রম-বাজারের তুলনায় তার কোনো পাথক্য নেই , আসলে এটি সিয়াংথান শহরের প্রথম ব্যক্তি মালিকানাধীন শ্রম-বাজার । যারা কাজ চান বা যারা শ্রমিক চান তারা সবাই এখানে আসেন । এর মালিক হলেন ৩৬ বছর বয়সী মেয়ে ওয়াং চাওহুই। ওয়াং চাওহুই ও তার কমীরা ঘটকের মতো তাদের মধ্যে যোগাযোগের সেতু স্থাপন করেন ।কাজ প্রাথী বা কমচারী অনুসন্ধানী দুপক্ষেরই সন্তোষ দেখে ওয়াং চাইহুই বিশেষভাবে খুশি হন ।কারন কমসংস্থানের ব্যাপারে তিনি অনেক কষ্ট আর অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন ।শরীরের কারনে তিনি কয়লা ওজন করার মতো এমন কাজও পেতেন না ।

    ২৬ বছর আগে ওয়াং চাইহুইর উচ্চতা মাত্র ১.১৬ মিটার ছিল ।গায়ে ও পায়ে পরত সব চেয়ে ছোটো মাপের কাপড় ও জুতা । এই কারনে তিনি কোনো কাজ পেতেন না ।তার একমাত্র আশা ছিল যে, নিজেই নিজেকে প্রতিপালন করা ।আশাটি পূরণ হয়েছে বলে এখন

    আগের মতো জীবনযাপনের জন্যে তার আর চিন্তা নেই , কিন্তু এখন তার আর এক নতুন আশা আছে , ডা ওয়াং চাওহুই মনের কোণে লুকিয়ে রেখেছেন, কাউকেই বলেননি।     ওয়াং চাওহুই বাবামার কনিষ্ঠ সন্তান,তার দুভাই আছে,তাদের গড়ন স্বাভাবিক । তার জন্ম হওয়ার পর চিন্হিত হয় যে,তার জন্মগত বামুন রোগ হয়েছে ।তার হীনতাবোধের ভয়ে বাবামা তাকে সত্য কথা জানাননি । অন্যান্য ছেলেমেয়েরমতো ওয়াং চাওহুই ইস্কুলে যান, তিনি স্কুলে

    ছাত্রলীগের ক্যাডার,সহপাঠিদের সদার ছিলেন,তার উচ্চতা আশেপাশে লোকের দৃষ্টিতে আর রহস্যপূণ নয়,অন্যান্যদের সংগে তার কোনো পাথক্য আছে বলেও তিনি মনে করেন না,সবসময়ে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রচেষ্টাও করেন তিনি।শান্ত ও ভালবাসাপূণ পরিবেশে বড় হয়েছেন ওয়াং চাওহুই ।১৬-১৭ বছর বয়সের ওয়াং চাওহুই একই টেবিলের ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হন ।ওয়াং চাওহুই বলেছেন ,আমি সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে আমি সবসময় মনে করি । হঠাত আমার চাইতে মেধাবী আর জ্ঞানী এক যুবক আমাকে আকষণ করেছে, তিনি পড়ার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে পারেন, আমি মুগ্ধ হয়েছি ।

    দুজন পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন,দুজন একসংগে স্কুলে যান, একসংগে বাড়ির কাজ করেন।কিন্তু একদিন ওযাং চাওহুইর এই সুন্দর অনুভূতি চুণবিচুণ হল।

    ওয়াং চাওহুই বলেছেন ,এক বছরের বসন্ত উত্সবকালে আমরা তার বাসায় গল্প করছিলাম,কথা বলতে বলতে তিনি আমাকে বললেন,তোমার চোখ সুন্দর, চেহারা দেখতেও সুন্দর , কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসতে পারি না । আমি বুঝেছি , আসলে তিনি আমাকে ভালবাসেন ,কিন্তু আমার উচ্চতার কারনে আমাকে ভালবাসতে পারেন না । আমি তার বাসা থেকে দৌড়ে বের হলাম , আমি কাঁদলাম , নিজের উচ্চতার জন্যে কাঁদলাম,এসময়ে আমি বুঝলাম অন্যের তুলনায় আমি ভিন্ন । এসময়ে আমি ভাগ্যের দোষ অনুভব করলাম ।

    এই আঘাতের ফলে চাইহুইর লেখাপড়ার ফলাফল অনেক পিছিয়ে পড়ে, ফলে সেই বছরে ইউনিভাসিটিতে ভতি হওয়ার পরীক্ষায় তিনি পাশ করেননি।এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা তার সামনে আর খোলা হয়নি ।নিজের উচ্চতার কারনে কোনো সংস্থা বা কেউই তাকে গ্রহন করল না বলে শ্রমের অধিকারও হারান চাওহুই । অপারেশনের মাধ্যমে নিজের উচ্চতা নিজের ভাগ্য পরিবতন করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি ।বিদেশে দুবছরের সুদীঘ আর কষ্টকর চিকিত্সার পর চাওহুইর উচ্চতা ২৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে ।তিনি বলেছেন ,আমি খুশি আমি আনন্দিত , কারন আমি লম্বা হয়েছি ।

    দেশে ফেরার পর চাওহুই কয়েক মাস ধরে বাসায় বিশ্রাম করলেন । তিনি লক্ষ্যও করেছেন যে, অপারেশনের মাধ্যমে তার উচ্চতা যে ২৬সেন্টিমিটার বেড়েছে তাতে তার সত্যিকারের পরিবতন হয়নি ।একমাত্র পরিবতন হল তার অপারেশনের জন্যে নেয়া ঋন পরিশোধের জন্যে তার বাবামাকে আগের চাইতে আরও বেশি খাটতে হত ।নিজের জন্যে বাবামার ব্যস্ততা দেখে ওয়াং চাওহুই নিজেই নিজেকে পালন করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।তিনি লক্ষ্য করেছেন ,আশেপাশে অনেক কারখানা দেউলিয়া হবার পর অনেক শ্রমিক কাজ হারায় আবার অন্য বেশ কয়েকটি ইউনিটে শ্রমিক দরকার ।কেন আমি তাদের মধ্যে যোগাযোগ করার সেতু হিসেবে এক পারিবারিক পরিসেবা-কেন্দ্র স্থাপন করব না ?প্রস্তুতি আর চেষ্টা চালানোর পর অবশেষে ওয়াং চাইহুইর পারিবারিক পরিসেবা-কেন্দ্র খোলা হল ।কেন্দ্রটির ব্যবসা অত্যন্ত ভাল । তার পর তিনি কেন্দ্রটিকে সম্প্রসারিত করে বতমান শ্রম-বাজারে পরিনত করলেন ।যারা কাজ চান এবং যারা শ্রমিক চান তাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করা তাদের শ্রম-বাজারের কাজ । শ্রম-বাজারের সাহায্যে যারা কাজ পান তাদেরকে শ্রম-বাজারের কাছে কমিশন দিতে হয় ।কিন্তু অনেক লোক কাজ পেলে পয়সা দিতে চান না।এক তরুন লোক নিজের কাজ নোঙরা এবং ভারি বলে আর করতে চান না,তিনি নিজের টাকা ফিরিয়ে আনার জন্যে শ্রম-বাজারে আসেন।তিনি অফিসের টেবিল ভেংগে দিয়েছেন এবং চাওহুইর গালে চড় মেরেছেন ।বাজারের লোকেরা এসে তরুনটিকে ঘিরে ফেলেন । চাওহুইরও খুব রাগ হল, কিন্তু তিনি বাজারের ম্যানেজার,এইকথা ভেবে তিনি বাজারের মযাদার জন্যে তিনি সবাইকে শান্ত করেছেন এবং তাকে টাকা ফেরত নিতে বলেছেন ।এ সম্পকে তিনি বলেছেন ,গ্রাহকদের পরিসেবা দেয়া আমাদের কতব্য , যদি তিনি টাকা দিয়ে অখুশী হন তাহলে বাজারের মযাদার জন্যে তার টাকা তাকে ফেরত দিই ।

    চাওহুইর অনুপস্থিতিতে তরুনটি আবার শ্রম-বাজারে কাজ খুঁজতে এলেন ।চাওহুই ব্যাপারটা জেনে নিজেই তার জন্যে এক নতুন কাজের ব্যবস্থা করেন এবং তাকে কারখানায় পাঠাতে লোক পাঠান । তরুনটি এখনো এই কারখানায় কাজ করছেন ।ধৈয্য আর আন্তরিকতার কারনে অল্প দুমাসের মধ্যে শ্রম-বাজারটির সাহায্যে প্রায় ৬০০০লোক আবার কমসংস্থান পেয়েছেন ।চমত্কার বিশ্বাসের দরুন বহু ইউনিট সরাসরি তাদের সংগে চুক্তি স্বাক্ষর করে ।এখন ওয়াং চাওহুই সিয়াংথান শহর থেকে অন্য শহরে তাদের শ্রম-বাজার সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন,এখন পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হচ্ছে ।

    চাওহুইর মা তার পরা,খাওয়া,থাকা আর যাতায়াতের জন্যে আর চিন্তা করছেন না , তার ব্যক্তিগত সমস্যার জন্যে চিন্তা করছেন । কারন চাওহুইর বয়স এখন ৩৬ বছর হয়েছে ।এব্যাপারে চাওহুইর নিজের পরিকল্পনা আছে ।তিনি বলেছেন ,বিয়ের জন্যে বিয়ে , এমন বিয়ে আমি চাই না ,যে লোকটিকে তুমি বিয়ে করবে সেই লোকের সংগে তোমাকে পরবতী কয়েক ডজন বছর কাটাতে হবে , যদি দুজনের মধ্যে কোনো আতি্মক সম্পক না হয় , তাহলে তুমি কিভাবে জীবনের সম্মুখীন হতে পারবে? আমি পারি না ।

    আসলে ওযাং চাওহুইর মনে এক গোপন কথা আছে ,যা তিনি কাউকেও বলেননি ।এখন তার এক নতুন মধুর প্রেম আছে ,তিনি হলেন তার সেই প্রথম প্রেমিক ।তিনি এখন দুরের বিদেশে । তারা চিঠি বা টেলিফোনের মাধ্যমে পরস্পরকে মনের কথা বলেন। তাদের কথা যেন শেষ হতে চায় না । কারন তারা দুজন মধ্যবয়সী হয়েছেন, তারা নানা কষ্ট আর অসুবিধার মধ্য দিয়ে উতীন হয়েছেন, এবং জীবনকে নতুন করে বুঝেছেন ।চাওহুইর উচ্চতা তাদের সম্পকে আর বাধা সৃষ্টি করবে না ।তারা এখন বুঝেছেন পরস্পরকে মূল্য দিতে হবে । চাওহুই তার প্রেমিকের ফিরে আসার আশায় আছেন ।