v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-21 22:25:03    
একজন তিব্বতী কৃষক- আনু

cri
   আনু, লাসা শহরের উপকণ্ঠের একজন তিব্বতী কৃষক। তিনি তিব্বতে প্রথম নতুন ধরনের খামার পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষ শুরু করেন। তাঁর এই বিশেষ ধরনের পদ্ধতিতে চাষ করার ফলে তিনি প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপাজন করেছেন। সংগে সংগে তাঁর দেখাদেখি আশেপাশের কৃষকেরাও এ পদ্ধতিতে চাষ করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছে।

    আনু জন্ম থেকে তিব্বতে বড় হয়ে উঠেছেন। বেশ লম্বা, তামাটে বর্ণের ছিপছিপে মানুষটির ঘন ভ্রুর নীচে উদ্দীপ্ত একজোড়া বুদ্ধি-দীপ্ত চোখ। লাসা শহরের উপকণ্ঠে আনুর বাস । সেখান থেকে শহরে দূরত্ব মাত্র দশ কিলোমিটার। শহরে যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা চমত্কার। আনুর বাড়ি দেখলেই বুঝা যায় এটি ঐতিহ্যবাহী তিব্বতীদের বাড়ি। মাটির ঘর, বাইরের দেয়াল সাদা রঙ করা, উচু চালার নীচে দীর্ঘ লাল রঙের লেখাটানা, বর্গাকৃতি জানালার ফ্রেম কালো রঙের আর অনন্য তিব্বতীদের মতো তার ঘরের দরজাও লেপে দেয়া হয়েছে লাল রঙে। বাড়ির ছাদে খুটির শীর্ষে পাঁচ রঙের যে পতাকাটি বাতাসে ফুরফুর করে দোল খাচ্ছে। ওদিকে চোখ গেলেই যে কেউ বুঝতে পারবে এটা আনুর বাড়ি।

    আমরা যখন আনুর বাড়ি দেখতে গিয়েছি, তখন দেখেছি আনুর বসার ঘর তিব্বতী প্রথায় সুন্দর করে সাজানো। দরজা দিয়ে বসার ঘরে প্রবেশ করতে গেলে প্রথমে চোখে পড়ে ঘরে যে দেয়াল তাতে নানা ভঙ্গির বৌদ্ধ মূর্তি বসানো। মূতির সামনে প্রার্থনার ধুপ-ধুনো রাখার একটি ঘট। বসার ঘরে গোল করে সাজানো পরিচ্ছন্ন অনেকগুলো চেয়ার। হাতের কাজ করা নকশাদার চেয়ারগুলো হাতর সোনালী রঙের। আর বসার গদির উপর পাঁচ রঙের কাপড়ের আচ্ছাদন পেতে দেয়া হয়েছে। বসার ঘরের মাঝখানে চায়ের টেবিলে থালাভর্তি তরতাজা স্ট্রবেরি আর টমেটো। কথায় কথায় আনু এক ফাঁকে জানালেন এগুলো তার নিজ খামারেই উত্পাদিত।

    ১৯৮৯ সাল থেকে আনু শাক সবজি চাষ করতে শুরু করেন। তখন উন্নত মানের কোনোও চাষ পদ্ধতিই তার জানা ছিলো না। ফলে প্রথম দিকে চাষ করে সে তেমন লাভবানও হয় নি। এক সময় স্থানীয় সরকারের কৃষি বিভাগের একজন কৃষিবিদের কাছে সে যায়। তিনিই তাকে চাষের উন্নত প্রযুক্তির হাতখড়ি দিয়েছেন।

    আগে শাক-সবজি চাষের তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না। বিশেষ ধরনের এ খামার পদ্ধতিতে চাষ করতে তাঁকে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় সরকারের কৃষি বিভাগ আর আগের চেয়ে বতমানে শাক-সবজির বাজারও অনেক বেশ বিস্তৃত। সংগে সংগে অনেক ধরনের শাক-সবজিও উত্পাদিত হয়েছে। যেমন ক্যাপসিকাম, টমেটো,শসা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। তিনি এখন এক হেক্টর কৃষি জমিতে শাক-সবজি ও ফল-মূলের চাষ করেছেন। এখন থেকে বছরে তাঁর আয় প্রায় ৫০ হাজার ইউয়ান।

    সাধারণ মানুষের ধারনা, শাক-সবজি চাষ করা খুব সহজ। কিন্তু তিব্বতে মোটেওতা নয়। কারণ তিব্বতের ভুমি সমতল নয়। এখনকার ভূমি পাহাড়ি। সমতল ভূমি থেকে ৫ হাজার মিটার উঁচু। অন্যদিকে দিনের তাপমাত্রা আর রাতের তাপমাত্রা মধ্যে কোনো ভারসাম্য নেই। সংগে রয়েছে প্রবলবেগের বাতাস। এ সব নেতিবাচক কারণে আগে তিব্বতীদের শাক-সবজি চাষ হতো না। ফলে তিব্বতীদের শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাসও ছিলো না। এ সব কারণে প্রথম দিকে আনুকে সবজি চাষ করতে অনেক সমস্যা মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। একদিকে বীজ সংগ্রহের সমস্যা, অন্যদিকে ফলন উঠলে সে সব বিক্রির সমস্যা। এ সবই শুরুর দিকে আনুকে মোকাবেলা করতে হয়েছিলো।

    স্থানীয় সরকারের কৃষি বিভাগ আনুর সমস্যাগুলো অনুধাবন করে তাঁকে কিভাবে সফল করা যায়, সে জন্য তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। স্থানীয় সরকার বুঝতে পেরেছে আনুর এই প্রচেষ্টা একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। এ উদ্যোগ সফল হলে অন্যরাও এ কাজে এগিয়ে আসবে এবং এতে তাদের জীবন ধারনের মান একটি পরিবর্তন সূচিত হবে। এর ফলে কৃষি শিল্পেরও প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে।

    দুইলংদেইছিং শহরের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা বাসাংচিরেন বলেছেন, এই কয়েক বছরের চেষ্টায় আনু একজন আদর্শ কৃষক হয়ে উঠেছেন এবং তাঁর প্রভাবও অন্যদের উপর পড়েছে।

    ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তার এই বেতিগ্রমিক উদ্যোগ, শাক সবজি চাষ আর শূকর পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুফল বয়ে এনেছে। আনুর পাশাপাশি বর্তমানে এ শহরের আরও চারটি পরিবার খামার পদ্ধতিতে শাক-সবজির চাষে এগিয়ে এসেছে। আনুর আয় বাড়ার সংগে সংগে তিনি তার সফলতার কথা অন্যদেরকেও বলেছেন। ফলে শহরের অনন্য লোকেরাও শাক-সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

    আনুর সবজি খামার ঘুরে অনেক সবজি লেটুস শাক এবং সেখান বেশী ক'জন শ্রোমিক সে সব সবজির পরিচর্যা করে। এর মধ্যে একজন হ্যান জাতীর কৃষিবিদ। আনু একা তার পদ্ধতি শেখানোর জন্য অন্যত্র থেকে নিয়ে এসেছে। আনু এই শ্রোমিককে প্রতিমাসে ১হাজার ইয়ান পারিশ্রমিক প্রদান করে থাকে। কথা প্রসংগে আনু জানালেন, তাঁর সবজি খামারে দুই মৌসুমে এই শাক চাষ করে থাকে। আনুর আয় সাধারণ কৃষক এবং পুশুজীবীদের চেয়ে বেশী।

    ধীরে ধীরে আনু একজন স্বচ্ছল মানুষ হয়ে উঠলেও ভূলে যান নি তাঁর চারপাশের গরিব মানুষদের। তিনি তাঁর সফলতার গল্প সাধারণ মানুষকে যেমন শুনিয়েছে, অন্যদিকে অনেক মানুষকে তাঁর খামারে কাজে সংস্থান করে দিয়েছেন। আনুর সহযোগিতায় তাঁর আশপাশের দশটি পরিবার এখন স্বচ্ছল। অন্যদের খামারগুলোও সুন্দর করে সাজানো। সে সব খামারে কেউ চাষ করছে শাক-সবজি, কেউ চাষ করছে ফল, কেউ বা নানা জাতের ফুল। আমাদের প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে জেনেছেন, গত দশ বছরের প্রচেষ্টায় আনুর শহর শাক-সবজি,ফল-মূল ও ফল উত্পাদনের বিশেষ স্থানে পরিণত হয়েছে। এই সবুজ শিল্পকে আরো দ্রুততার সংগে প্রসারও উন্নত করতে ওই শহরে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে শাক-সবজি, ফল-মূল ও ফূলের উত্পাদন সমিটি। এই সমিটির কাজ হলো আনুর মতো অনন্য শাক-সবজি, ফল-মূল ও ফুল চাষীদের উন্নত চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করা এবং উত্পাদিত এ সব শস্য কিভাবে বাজার জাত করা যায় , সে বিষয় তথ্য সরবরাহ করা।

    সমিতির পক্ষ থেকে আমরা শহরের কৃষক পরিবারগুলোকে একদিকে যেমন উন্নত যাদের চাষ পদ্ধতি শিখিয়ে থাকি, অন্যদিকে তাদের উত্পাদিত শস্য কিভাবে বাজার জাত করা যায়, সে বিষয়ও সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় আমাদের সমিটিতে এখন অন্তর্ভূক্ত হয়েছে ১১টি কৃষক পরিবার। সমিটি তার সদস্যদের বিনা মূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করে থাকে। উত্পাদিত শাক-সবজি,ফল-মূল এবং ফুল সমটির মাধ্যমেই সঠিক মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। ফলে কৃষকরা তাদের পন্যের ন্যার্যমূল্য পেয়ে থাকে।

    স্থানীয় সরকার এবং আনুর মতো উদাহরণ যোগ্য কৃষকদের প্রচেষ্টায় তিব্বতে এখন একদিকে যেমন প্রচুর শাক সবজি উত্পাদন হচ্ছে, অন্যদিকে তিব্বতের মানুষও ধীরে ধীরে তাদের খাদ্য তারিকায় শাক-সবজিকে সংযোজন করে নিচ্ছে। এতে তিব্বতের মানুষের জীবন যাত্রার মানও উন্নত হচ্ছে।

    কৃষক দাদা চৌমাচিয়াছুও তাঁর পরিবারের খাদ্য তারিকার পরিবর্তন উল্লেখ করে বলেছেন: "আগে আমরা শুধু আলু এবং চানপা(তিব্বতী জাতীয় খাবার) খেতো। প্রতিদিনই খাই। আর এখন আমরা অনেক ধরনের শাক-সবজি খাচ্ছে। আমাদের জীবন ধাররনের মানও অনেক উন্নত হয়েছে।" তিব্বতী মানুষের শাক সবজি খাওয়ার এই অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই আনুকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। আনু তার ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বললেন, ভবিষ্যতে সে তার উত্পাদন বাড়ানোর জন্য পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে চায় এবং এই পদ্ধতিগুলো শেখার জন্য তার আগ্রহের কোনো কমতি নেই, কারণ তাকে অনেক বড় হতে হবে।