v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-20 11:21:26    
চীনের বিশেষ খাবার ডাম্প্লিং

cri
    ডাম্প্নিংকে চীনা সংস্কৃতির একটি অংশ বলে গণ্য করা যায় , এই কথাটা মোটেই অত্যুক্তি নয় । এক পরিবারের সকলে মিলে এই ডাম্প্নিং খেতে বসলে তাতে পরিবারের সবার মিলন বোঝানো হয় । ডাম্প্নিং দিয়ে অতিথীদেরকে আপ্যায়ন করলে তাদের প্রতি সন্মানপ্রদর্শন আর আন্তরিকতা বোঝোনো হয় । একজন বিদেশী লোক চীনে এসে এই ডাম্প্নিং না খেয়েই যদি বিদেশে ফিরে যান , তাহলে তার চীনসফর মোটেই পরিপূর্ণ হয় নি বলে লোকেরা তাকে উপহাস করতে পারে ।

    মোটামুটি বলতে গেলে চীনা ডাম্প্নিং মানে চিয়অওজি হলো ময়দার দলা কেটে বেলন দিয়ে তা পাতলা করার পর তার ভেতর পুর দিয়ে তৈরী একরকম চীনা পিঠা যা ফুটন্ত পানিতে , বাষ্প-সিদ্ধ করে খঅওয়অ যায় । ডাম্প্নিং প্রধান্ত পানিতে সিদ্ধ করা হয় । অতীতে চীনে প্রধানত উত্সবরে সময়ে ডাম্প্নিং খাওয়া হতো , বিশেষ করে চীনা নববর্ষের আগের দিনের রাতে তা খাওয়া হয় । এখন চীনারা যার যার পছন্দ মতো যে কোনো দিনেই ডাম্প্লিং খেতে পারেন ।

    ডাম্প্লিংয়ের পুর তৈরী , ডাম্প্লিংয়ের আকৃতি আর খাওয়ার ওপর বিশেষ রীতি প্রযোজ্য হয় ।

    পুরের কথাই ধরা যাক , পুর নিরামিষ আর আমিষ্জাতীয় হতে পারে । সাধারনত আমিষ আর নিরামিষ একসংগে মিশিয়ে মিশ্র পুর তৈরী হয় । মাংস ইত্যাদি বা শাকসব্জী মোটা মুজবুত ধরনের কাঠের তক্তার ওপর রেখে চীনের রান্না ঘরে ব্যবহার্য বিশেষ দা দিয়ে মিহিন কুচি কুচি কিমা তৈরী করা হয় । কোনো কোনো লোক এতো নিপুণভাবে দা ঠূকতে পারেন যে , দার আঘাতের শব্দ শ্রুতিমধুর সংগীতের তালের মতো শোনায় । যারা পুর তৈরীর জন্যে দা দিয়ে আঘাত করেন , তারা চান , তার শ্রুতি মধর শব্দ যথা সম্ভব দীর্ঘকাল পর্যন্ত প্রতিবেশীদের কানে বাজুক এবং তাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করুক । পুর তৈরীর জন্যে মাংসের সংগে সাধারনত শাকশব্জী মিশিয়ে দেয়া হয় , শাক শব্দটার চীনা উচ্চারণ ছায় । ছায় শব্দটার উচ্চারণ শুনলে আবার অর্থ বা ধনসম্পত্তিও বুঝানো হয় । তাই দীর্ঘকাল দা ঠুকলে দীর্ঘস্থায়ী ধনসম্পদশালী থাকার অর্থ বোঝায় । পুর তৈরীর জন্যে দার আঘাতের শব্দ দীর্ঘকাল শোনা গেলে , বুঝানো হয় যে , এই ঘরে অনেক ডাম্প্লিং তৈরী হচ্ছে , তাদের জীবন বিশেষ সুখী বা সমৃদ্ধিশালী ।

    পুর তৈরী হবার পর ডাম্প্লিংয়ের আকৃতির ওপরও বিশেষ নজর দিতে হয় । চীনের বেশীর ভাগ এলাকায় ডাম্প্লিং চাঁদের কলার মতো বা অর্ধচন্দ্রাকার । এ রকম ডাম্প্লিং তৈরীর জন্যে প্রথমে ময়দাব দলা বেলন দিয়ে পাতলা করে পূর্ণিমার আকার করে দেয়া হয় । তাতে পুর দেয়ার পর ভাঁজ করে টিপতে টিপতে অর্ধচন্দ্রাকার ডাম্প্লিং তৈরী হয়ে যায় । এই ডাম্প্লিংয়ের আকার একটি বদলালেই চীনের মান্ধাতা আমলের মুদ্রা হিসেবে রৌপ্যপিন্ডের মতো হয়ে যায় । তাই এই রকম ডাম্প্লিং তৈরী করলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বোঝায় , মানে গোটা ঘরটাই রৌপ্যমুদ্রায় বা ধনরত্নে ভরা । কোনো কোনো কৃষক গমের শীর্ষ আকৃতির ডাম্প্লিং তৈরী করেন ।

    তার অর্থ নতুন বছরে ফসলের প্রাচুর্য হবে ।

    কাঁচা ডাম্প্লিং তৈরী হয়ে গেলো । এবার সেগুলো সিদ্ধ করার পালা । কড়াইয়ের মধ্যে পানি ফুটলে তাতে ডাম্প্লিমগুলো ঢেলে দিতে হয় , অনেকে একটির পর একটি ডাম্প্লিং ফুটন্ত পানিতে যখন ফেলে দেন , তখন মনে হয় এক একটি শিল্পকর্ম , পানিতে দেয়া হচ্ছে । ডাম্প্লিংগুলো যাতে কড়াইয়ে তলের দিকে ডুবে আঠার মতো না লেগে যায় , তার জন্যে বড় চামচ বা খুন্তি দিয়ে কড়াইয়ের তলদেশের দিকে দু এক বার নাড়তে হয় । ডাম্প্লিংসহ পানি আবার ফুটলে একবার আরও কিছু ঠান্ডা পানি ঢালতে হয় , আবার ফুটলে আবার কিছু ঠান্ডা পানি ঢালতে হয় , এমনি কিছু ক্ষণব্যবধানে মোট তিন বার ঠান্ডা পানি দিতে হয় । প্রায় পনেরো বা বিশ মিনিটের মধ্যেই সুস্বাদু ডাম্প্লিং সিদ্ধ হয়ে যায় ।

    ঐতিহ্যিক রীতি অনুযায়ী প্রথম বাটি ডাম্প্লিং পূর্বপুরুষদের স্মুতির উদ্দেশ্যে প্রসাদ হিসেবে নিবেদিত হয় । দ্বিতীয় বাটি গৃহদেবতার জন্যে প্রসাদ হিসেবে নিবেদিত করতে হয় । পরিবারের বৃদ্ধবৃদ্ধারা এই উপলক্ষে মন্ত্রের মতো কিছু ছড়া আবৃত্তি করে থাকেন । যেমন , একটি ছড়ার অর্থ এই :

    ডাম্প্লিংয়ের দুই মাথা ধারালো

    কড়াইয়ে ঢাললে তা হাজার হাজার হয়ে যায়

    সোনার চামচ দিয়ে রুপার বাটিতে তুলে রাখি

    টেবিলে পরিবেশন করে স্রষ্টার কাছে নিবেদিত করি

    প্রসাদ দেখে স্রষ্টাও প্রসন্ন হন

    তাতে সারা বছরই সুখশান্তি থাকবে

    তুতীয় বাটির ডাম্প্লিং থেকে পরিবারের সকলেই খেতে শুরু করেন । খোবার সময়ে কোনো কোনো বৃদ্ধ বা বৃদ্ধ ইচ্ছা করেই বলে থাকেন শাক খুব বেশী , অর্থাত্ চীনা ভাষায় ছায় উচ্চারণটির দুই অর্থ : শাক আর ধন । মানে ধনসম্পদশালী হবার শুভকামনা । খাওয়া শেষ হলেও ইচ্ছাকৃতভাবেই প্লেটে , বাটিতে এমন কি ডেকচি বা কড়াইয়ে কিছু বাকী ডাম্প্লিং এমনি রেখে দেয়া হয় , অর্থাত্ বছরে বছরে উদ্বৃত খাবার থাকুক ।

    চীনা বর্ষের শেষ রাতে অন্য শহরে বা অন্য প্রদেশে জীবিকা উপার্জনকারী লোকেরা যার যার বাড়ি ফিরে গিয়ে পরিবারের সবার সংগে মিলে ডাম্প্লিং খায় । ডাম্প্লিং খাওয়ার ঐতিহ্যিক রেওয়াজ আজকাল কিছু পরিবর্তিত হয়েছে , তবে ডাম্প্লিংয়ের সাংস্কৃতিক তাত্পর্য মোটামুটি অপরিবর্তিতই থেকে গেছে । আজকাল শহরবাসীরা নিজেরা খুব কমই কিমা বা শাকের পুর বা ডাম্প্লিং তৈরী করেন , খেতে চাইলে যে কোনো সময়ে সুপার মার্কেট থেকে নানা রকম ডাম্প্লিং যার যার পছন্দ মতো কিনতে পারেন । পরিবারের সমলেই একসাথে রেস্তোরাঁয় গিয়েও ডাম্প্লিং আরামেই খেতে পারেন । গ্রামেও ডাম্প্লিং খাওয়ার সময়ে রীতিনীতির জটিলতা এখন অনেক সহজ হয়েছে ।