গত কয়েক বছরে চীনের পল্লীগ্রামের উদ্বৃত্ত শক্তি হিসেবে যে বিপুল সংখ্যক কৃষক উপার্জনের জন্য শহরে প্রবেশ করেছেন তাঁদের মধ্যে বহু তরুণ তরুণী অবিবাহিত । তারাঁ শহরে চাকরি পেয়েছেন কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের আওতা সংকীর্ণ বলে তাদের পছন্দসই পাত্রপাত্রী খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন ।তাদের বিবাহ সমস্যা সমাধানে পুর্বচীনের হাংচৌ শহরের এক দল স্বেচ্ছসেবক সম্প্রতি নানা উপায়ে তাঁদের সাহায্য করতে উদ্যোগী হয়েছেন ।
২৯ বছর বয়স্ক সং লু ইউয়ান দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছংছিং শহরের উপকন্ঠের অধিবাসী । উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি কাজের সন্ধানে হাংচৌ শহরে আসেন । পাঁচ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে তিনি যে টাকা উপার্জন করেছেন তা দিয়ে তিনি একটি ঘর ভাড়া নিয়ে খাদ্যদ্রব্যের দোকান খুলেছেন । ব্যবসা তাঁর ভালোই চলছে । তবে এখনো বিয়ে হয় নি তাঁর । তিনি সি আর আইয়ের সংবাদাতাকে জানিয়েছেন , তিনি হাংচৌ শহরে সংসার পাততে চান , কিন্তু আজ পর্যন্ত সুযোগ্য পাত্রীর সন্ধান পাওয়া যায় নি ।সুদুর ছংছিং শহরের উপকন্ঠের গ্রামে অবস্থানরত তাঁর মাবাবা রাতদিন তাঁর বিবাহের জন্য উত্কন্ঠিত ।তিনি বলেছেন : বসন্ত উত্সব উপলক্ষেবাড়ি ফিরে গেলে বা টেলিফোনে তাদের সংগে কথা বললে তাঁরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে আমাকে তাগিদ দেন । তাদের মনের বাসনা বোধগম্য । তাঁরা বেঁচে থাকতে যদি আমি বিয়ে করতে না পারি তাহলে তা তাদের প্রতি অসম্মানের শামিল হবে ।
মি: সং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , হাংচৌ একটি মনোরম শহর , পশ্চিম হ্রদের নৈসর্গিক সৌন্দর্য অতুলনীয় । সন্ধ্যায় পশ্চিম হ্রদের ধারে বেড়াতে গেলে যখন প্রণয়ী-প্রণয়িনীদের দেখা পান তখন মনে মনে ভাবেন ,তাঁর প্রেমিকা কোথায়?
মিং সু হাই নি যার আদি বাড়ি জিয়াংসু প্রদেশের নান তং শহরে তিনি সং লু ইউয়ানের চেয়ে সৌভাব্যবান । হাংচৌ শহরে তাঁর পছন্দসই পাত্রী জুটেছে । দুজন এখন গভীর প্রেমে নিমজ্জিত । মি: সু বলেছেন , তিনি রঁদেভূ ক্লাবের কর্মী মাদাম তাং মিয়ানের সাহায্যে তার পাত্রীর সংগে পরিচিত হয়েছেন ।তিনি বলেছেন :তাং মিয়ান দিদির মাধ্যমে আমি আমার পাত্রীর সংগে পরিচিত হয়েছি । এখন আমাদের প্রেম ক্রমাগত প্রগাঢ় হচ্ছে । তাং মিয়ান দিদির প্রতি আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ । তার মত সহৃদয় মানুষ সংখ্যায় বাড়তে থাকবে বলে আমরা আশা করি । সেই সংগে আশা করি , আমার মত হাংচৌয়ে কর্মরত অন্যান্য প্রদেশের তরুণতরুণী সবাই সুখের মুখ দেখতে পারবেন ।
মি: সু যে হাংচৌ শহরের মাদাম তাং মিয়ানের কথা বলেছেন তিনি দয়ালু ও স্নেহশীল । তিনি চলতি সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শহরবাসী নামে একটি রঁদেভূ ক্লাব খুলেছেন এবং বিনা মুল্যে পাত্রপাত্রীর সন্ধানে বহিরাগত তরুণতরুণীদের সাহায্য করছেন । তিনি বলেছেন , বহিরাগত তরুণতরুণীরা হাংচৌ শহরের উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখেছেন ,আমি এই ব্যাপারে তাদের সাহায্য করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি ।
চীনের অনেক মাঝারি ও বড় শহরের মত হাংচৌ শহরের বহিরাগত শ্রমজীবীদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশী ।তাদের মোট সংখ্যা ১১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে । তাদের মধ্যে বহু তরুণতরুণী অবিবাহিত । জীবন সংগ্রামের চাপে তাঁদের আমোদপ্রমোদ ও সামাজিক মেলামেশার অবকাশ নেই ।তাঁরা শুধু সহকর্মী ও জন্মস্থানের বন্ধুদের সংগে মেলামেশা করেন । এই কারণে প্রেম করা বিশেষ করে শহরের মেয়েদের সংগে প্রেম করার সুযেগ তাদের খুব কম মেলে । এটাই মাদাম তাং মিয়ানের ক্লাব খোলার অন্যতম কারণ ।
হাংচৌ শহরের পশ্চিমাঞ্চলের একটি হোটেলে তাং মিয়ানের ক্লাব অবস্থিত । ক্লাবটির আয়তন বেশী নয় , প্রায় তিরিশ বর্গ মিটার । কিন্তু প্রতিদিন বহিরাগত তরুণতরুণীরা নাম লিখাতে আসেন এবং ক্লাবটির নতুন সদস্য হন। তাদের অধিকাংশের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছর। তাঁদের মধ্যে কেউ ড্রাইভার ,কেউ শ্রমিক , কেউ বা দোকানের মালিক । ৪০ জোড়া যুবক যুবতি প্রেম করতে শুরু করেছেন ।তবে ছেলে ও মেয়েদের অনুপাত সুষম নয় । এই প্রসংগে মাদাম ইয়াং বলেছেন :আমাদের ক্লাবের চার-পাঁচ শো সদস্যের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা একশোরও কম। আমি আশা করি , আরো বেশী মেয়ে আমাদের ক্লাবে যোগ দেবেন যাতে ছেলেরা কাংক্ষিত পাত্রী পান ।
মাদাম ইয়াংয়ের ক্লাব ছাড়া হাংচৌ শহরের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকাও বহিরাগত তরুণতরুণীদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ।
হাংচৌয়ের ওয়াহাহা শিল্প গোষ্ঠী চীনের বৃহততম পানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম ।ওয়াহাহা শিল্প গোষ্ঠীর বহু সংখ্যক তরুণ শ্রমিক এসেছে অন্যান্য প্রদেশ থেকে। ওয়াহাহা শিল্প গোষ্ঠী থেকে হাংচৌ শহরের খাইতি রেশম কম্পানির শ্রমিকদের গঠন সম্পুর্ণ আলাদা । এর অধিকাংশ শ্রমিকই নারী । কিছু দিন আগে এই দুটো কম্পানির যৌথ উদ্যোগে তরুন তরুণী শ্রমিকদের জন্য যে একটি প্রীতি সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়, তাতে তাদের উপকার হয়েছে । কয়েক জোড়া তরুন তরুণী প্রীতি সম্মিলনীতে পরিচিত হওয়ার পর প্রেম করতে শুরু করেছে।
এ ছাড়া হাংচৌ শহরের কোনো কোনো আবাসিক এলাকায়ও বহিরাগত অধিবাসীদের জন্য মাঝে মাঝে পাটির আয়োজন করা হয় যাতে স্থানীয় নাগরিকদের সংগে তারা সহজে পরিচিত হতে পারেন । এমন তত্পরতা বিশেষজ্ঞদের সমর্থন পেয়েছে। জেজিয়াং প্রদেশের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর গবেষক মি: ইয়াং জিয়ান হুয়া মনে করেন : আবাসিক এলাকার আয়োজিত পার্টি বহিরাগত তরুণতরুণীদের মেলামেশার পরিধি সম্প্রসারিত করেছে । এটা তাদের প্রেম ও বিবাহ সমস্যা সুরাহার একটি প্রশংসনীয় উপায় ।তিনি বলেছেন : আবাসিক এলাকার আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পল্লীগ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য মেলামেশার এমন চমত্কার স্থান যুগিয়েছে যে সেখানে তারা পাত্রপাত্রী বাছাইয়ের পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছেন ।
|