v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-13 11:09:35    
জানচাচের ভ্রমণ

cri

    জাতি সংঘ ইউনেস্কোর বিশ্ব প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় চীনের বেশ কয়েকটি দর্শনীয়স্থান অন্তর্ভুক্ত।আজকের এই আসরে আপনাদের যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি তাও বিশ্ব প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত। জায়গাটির নাম হলো উলিনউয়েন দর্শনীয়স্থান।এই দর্শনীয়স্থান চীনের হুনান প্রদেশের জানচাচে শহরে অবস্থিত।সুতরাং পর্যটকরা এই রহস্যময় জায়গাকে সংক্ষিপ্তভাবে জানচাচে বলে ডাকে।সেখানে আছে দক্ষ খোদাইকারদের খোদই করার মতো পাথর বন, আছে পাথর থেকে নেমে আসা ঝরনা, আছে প্রকতির শিল্পালংকার সমৃদ্ গুহা , আছে অতিথিপরায়ন থুচা জাতির সুস্বাদু খাবার।

    থুচা জাতির চিত্তার্কষক গানের মধ্য দিয়ে আমাদের জানচাচের ভ্রমণ শুরু হয়েছে।শহর থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে এই দর্শনীয়স্থান।চলাফেরা অত্যন্ত সুবিধাজনক।গোটা দর্শনীয়স্থান জানচাচের রাষ্ট্রীয় বন পার্ক, তিয়েনজি পাহাড়ের দর্শনীয়স্থান এবং সুশিইয়ে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা নিয়ে গঠিত । দর্শনীয়স্থানের মোট আয়তন ২৪৬ বর্গকিলোমিটার। অদভুত পাথরের শৃংগ বন হলো জানচাচে বন পার্কের দৃষ্টান্তমূলক দৃশ্য। পাহাড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে দূরের হাজার হাজার আকাশচুম্বীপাথরের শৃংগ দৃষ্টিগোচর হয়।এ সব পাথরের শৃংগগুলো হয় একলা দাঁড়িয়ে আছে সৈন্যবাহিনীর জেনারেলের মতো , নয় পরষ্পর মুখোমুখি হয়ে সারি -বদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মিশন পালনে অপেক্ষামান সৈন্যদের মতো।শত শত মিটার উঁচু পাথর যেন কুঠার দিয়ে কাটা অসিগুলোর মতো দাঁড়িয়ে আছে।এ দৃশ্য দেখে অবাক মানতেই হয়।জানচাচে বন পার্কের সংগে সংলগ্ল সমুদ্র-সমতলের তুনলায় ১২০০ মিটার উচু একটি তিয়েনজি পাহাড়।জানচাচে বন পার্কের মতো এই তিয়েনজি পাহাড়ের পাথরও বৈচিত্রময়।তিয়েনজি পাহাড়ে দাঁড়ালে যে সব পাথর আমাদের নজরে পড়ে সেসব পাথরের মধ্যে কোনো কোনো দেখতে মানুষের মতো, কোনো কোনোটা দেখতে হাঁস-মুরগীর মতো, কোনো কোনোটা আবার দেখতে বন্য প্রাণীর মতো।ছোট-বড় শৃংগগুলোর মাঝখানে একটি অতলস্পর্শী হ্রদ আছে।হ্রদের স্বচ্ছ পানি রোদে চকচক করে। অজস্র পাখি পানির উপর ফুর্তি করছে ।বিশাল জলসীমা পাহাড়ের সংগে মিশে যায় , পাহাড়গুলোর প্রতিবিম্ব স্পষ্টভাবে পানিতে দেখা যায়।চার দিক কী যে সুন্দর হয়ে উঠল সে আর কী বলব!ঝরনা দেখে আমার হাঠাত মনে পড়ল এই ঝরনার উত্স অনুসন্ধানের ধারণা। সুন্দরী গাইড মিস লিন ফেনের হাসি মুখে বর্ননা আমার মনের এই চিন্তা আপনাআপনি মুছে দিয়েছে।

    এখানকার ঝরনা পুরোপুরি প্রত্যেকটি গাছের গোড়ার নীচে, প্রত্যেকটি ঘাসের নীচে , প্রত্যেকটি পাথরের নীচে এমন কি পাথরের প্রত্যেক ফাঁকের মাঝখান থেকে একটি একটি বিন্দু গড়িয়ে পড়ে।এই ঝরনা একদম স্বচ্ছ।সারা বছর এই ঝরনা অবিনাম প্রবাহিত হয়। একটু বিশ্রাম নেওয়ার পর শরীরটা সেরে উঠল।আমার মন গুহা দেখার জন্য উত্সুক হয়ে উঠল।গাইডের সংগে আমরা সুশিউয়ে প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকার হুওয়াংলন গুহায় আসলাম ।হুওয়াংলন গুহা হলো একটি প্রকৃত চুনা পাথরের গুহা।বর্তমানে যেগুলো আবিস্কৃত হয়েছে সেগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার।গুহার ভিতরের উচ্চতা ১৬০ মিটার, চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে ।এই গুহা স্টেলাকটাইট আর স্টেলে পরিপূর্ণ।বড় গুহার ভেতরটা ছোট ছোট গুহায় পরিপূর্ণ। তা ছাড়া, গুহারে নদীও আছে।দৃশ্য দেখে পযর্টকরা হাঁ হাঁ করে প্রসংশায় পঞ্চ মুখ।আরো আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, গুহার ভিতরের স্টেলে আর পাথরের স্তম্ভগুলো বিভিন্ন রংয়ের আলোয় চকচক করছে।গুহার ভিতরে হাঁটতে হাঁটতে অজানতে মানুষ যেন কল্পলোকে এসে পড়েছে।গাইড হুওয়াংছিন ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছেন,

    হুওয়াংলণ গুহার উঁচু আর প্রশান্ত হল , নিহিত অতল নদী, ঝুলন্ত জলপ্রপাত এবং ঘনঘন স্টেলে নিয়ে একটি সুমহান গুহার রুপ ধরেছে।কেউ কেউ বলে এটা একটি রুপকথায় বর্ণিত জগত, আবার কেউ কেউ বলে এটা হলো তুনিয়ার স্বর্গ।হুওয়াংলণ গুহারের ভিতরের মাটিতে হাঁটতে হাঁটতে পরিদর্শন শেষ হওয়ার পর পর্যটকরা নৌকায় চেপে ভ্রমন করতে পারে।গুহার ভিতরের নদীর দৈর্ঘ্য ১২০০ মিটারেরও বেশী, চওড়া ৩ মিটার।নদীর দু পাশের স্টেলাকটাইট রৌদ্রেমাঝে মাঝে চকচক করে আবার অন্ধকারে মিশে যায়। আমি এই অকল্পনীয় দৃশ্য চাক্ষুষ করতে করতে, তখন টের পেলাম নৌকা আবার মেঘমুক্ত আকাশের নীচে উপস্থিত হয়েছে।

    জানচাচের এই তিনটি প্রধান দর্শনীয়স্থান পরিদর্শন করার পর আমরা মহা ক্লান্ড হয়ে পড়লাম।ঠিক সেই সময় থুচা জাতির লোকসংগীত বাতাসে ভেসে আসছে।এই সংগীতের আভাষ থেকে বুঝা যায়, স্থানীয় অধিবাসীদের বাসায় আমাদের খাওয়া-দাওয়ার সময় হয়েছে।এখানে প্রধানত থুচা জাতির বাস।বংশানুক্রমে তারা পাহাড়ে বসবাস করেছে বলে তাদের সরল জীবনযাত্রার রীতি খুব ষ্পষ্টভাবে দেখা যায়।তাদের জীবনে লোকসংগীতের অভাব নেই।লোকসংগীত গাওয়া তাদের আবেগ প্রকাশ করার একটি প্রধান পদ্ধতি।থুচা জাতির অভ্যর্থনার গান শোনার পর , আমি অতিথি হিসেবে এক থুচা বাসায় ঢুকলাম।এই বাড়ীর মালিক আমাকে ঐশ্বর্যবান খাবার পরিবেশন করেছেন।খাওয়া-দাওয়ার সময়ে তিনি থুচা জাতির খাবার ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছেন,

    এটা হলো আমাদের থুচার শুকনো টমেটো। তা শুকানোর পর আমরা এই টমেটো মাংসের সংগে রান্না করি।খেতে খুব সুস্বাদু।এটা হলো শুকনো শিশি ।সুপে দিলে এই শিশি খেতে খুব ভাল লাগে।এটা হলো শুকনো কুমড়ো খেতে সুস্বাদু।থুচা জাতির লোকেদের পুজার অভ্যস আছে। তারা মনে করে, পূর্বপুরুষ তাদের পরর্বতীকালের সন্তানকে রক্ষা করতে পারেন।সুতরাং প্রত্যেকটি বাসায় পূর্বপুরুষদের পুজা করার জন্য একটি দেবতামুর্তি আছে।খাওয়া-দাওয়ার আগে তাদের মুখে বিড়বিড় করে যেন কিছু বলা হয়।থুচা লোকের বাসায় আমি পেট ভরে খাবার পর , অতিথিপরায়ন মালিকদের বিদায় দিয়ে ফিরে আসার পথ রওয়ানা হলাম।জানচাচে ভ্রমণ আমার মনে গভীর ছাপ রেখেছে।