v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-08 09:06:58    
মঙ্গোলিয় জাতির নারী ক্যাডার সুমুয়ার জীবনযাত্রা

cri
    মাদাম সুমুয়া চীনের অন্তমঙ্গোলিয়া স্বায়তশাসিত অঞ্চলের পায়ানজুওর শহরের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ।৫৫ বছর আগে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার সময়ে তিনি উলাটজং জেলায় মঙ্গোলিয়া জাতির একজন পশু পালকের পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন । স্থানীয় পশু পালকদের চোখে তিনি একজন অসাধারণ নারী ।

    ছোটো বেলায় সুমুয়ার মাবাবা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান । তিনি নানীর সংগে থাকতেন ।পড়াশোনার আগ্রহ তাঁর প্রবল । কিন্তু তাকে স্কুলে ভর্তি করানোর সংগতি তাঁর নানীর ছিল না । আনন্দের ব্যাপার এই যে , সংখ্যালঘু জাতির স্বায়তশাসিত অঞ্চলেরস্থানীয় সরকার চারনভুমির সংখ্যা লঘু জাতির ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃস্টির চেষ্টা করে এবং বিনা বেতনে লেখাপড়ার জন্য তাদের বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেয় ।

    সুমুয়া বলেছেন ,তখনকার দিনে সংখ্যালঘু জাতির ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে , সরকারের প্রেরিত শিক্ষকশিক্ষিকারা চারনভুমিতে গিয়ে পশু পালকদের তাবুতে তাবুতে ছাত্রছাত্রীদের বেছে নিতেন। একদিন একজন শিক্ষক আমার বাড়িতে এলেন । তিনি আমাদের বুঝিয়ে দিলেন যে , পড়াশোনা করলেই ভবিষ্যতে সমাজে তোমাদের মত মেয়েদের মর্যাদার উন্নতি হবে। আমার পীড়াপীড়িতে নানী আমাকে স্কুলে যেতে দিতে রাজী হলেন এবং অশ্রুভরা চোখে আমাকে ঘোড়ায় চড়িয়ে দিলেন ।

    সুমুয়া যে স্কুলে ভর্তি হন সেই স্কুলে যেমন মঙ্গোলিয় জাতি তেমনি হান জাতির ছাত্রছাত্রী ছিলো । মঙ্গোলিয় জাতির ছাত্রছাত্রীরা মঙ্গোলিয় ভাষার পাঠ্য বই ব্যবহার করে । শিক্ষকশিক্ষিরতাদের পড়ানও মঙ্গোলিয় ভাষায় । স্থানীয় সরকার ছাত্রছাত্রীদের কাপড়চোপড় ও নিত্যব্যবহার্য জিনিষ দেয় ।বোর্ডিং স্কুলে থাকতেও তাদের কোনো টাকা খরচ করতে হয় না ।

    স্কুলে পড়োশোনা শেষ করে সুমুয়া নানীর যত্ন নেয়ার জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছেড়ে জন্মস্থানে ফিরে ভেড়া চরাতে শুরু করেন । তার অক্লান্ত পরিশ্রমে ছ শোটিওবেশী ভেড়ার শরীর বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠে , সূর্যের আলোয় লোম চকচক করে । এ জন্য তিনি ক্ষুদে আদর্শ পশুপালক নির্বাচিত হন । অন্তমঙ্গোলিয়াস্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার অধ্যয়ন আর ভ্রমণ করতে তাকে পেইচিংয়ে পাঠায় । পেইচিংয়ে চীনের প্রয়াত নেতা মাও সি তং তাঁকে সাক্ষাতদান করেছিলেন ।

    প্রায়বিশ বছর বয়সে সুমুয়া জেলা সরকারের নেতৃস্থানয়পদে নিযুক্ত হন । তাঁর সহকর্মী জাং গুই ইং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , সুমুয়া সর্বদাই মাতৃভুমির গঠনকাজে বিদ্যা ও বুদ্ধিজীবীদের ভুমিকাকে গুরুত্ব দেন ।তিনি বলেছেন:আমার এখনো মনে পড়ে , আমরা কয়েকজন কর্মচারী উলাটজং জেলা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে চাকরি করার কথা ভাবছিলাম ,তা জেনে তিনি আমাদের সেখানে থেকে যেতে অনুরোধ করেন এবং কাজকর্ম আর দৈনন্দিন জীবনের দিক থেকে সুযোগ সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেন ,তার আন্তরিকতায় অভিভূত হয়ে আমরা উলাটজংজেলায় থেকে গেলাম ।

    জাং গুই ইং আরো বলেছেন , উলাটজংজেলার শিক্ষা বিভাগের ভারও ন্যস্ত হয়েছিল সুমুয়ার উপরে ।তিনি শিক্ষকশিক্ষিকার যোগ্যতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষাদানেরসুবিধা সৃষ্টির অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন । ফলে উলাটজংজেলার শিক্ষার মান দ্রুত উন্নত হয়েছে ।উলাটজংজেলায় এখন ৫০টিরও বেশী স্কুল ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ,প্রতি বছরে এই জেলার এক হাজারেরও বেশী ছাত্রছত্রী বিশ্ববিল্যালয় ও মাধ্যমিক প্রযুক্তি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ।কেউ কেই প্রসিদ্ধ পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় আর ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ।

    সুমুয়া সি আর আইয়ের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ,তিনি যখন ছোটো ছিলেন ,তখন উলাটজংজেলার পশুপালকরা যাযাবরের জীবন যাপন করতেন ।সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সংগে সংগে গবাদি পশুর সংখ্যা উত্তরোত্ত বৃদ্ধি পেয়েছে । সেই সংগে চারনভুমির প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতিও ঘটেছে ।তার প্রতিকারের জন্য গত শতাব্দির নববইয়ের দশকে স্থানীয় সরকার পশুপালকদের গোশালায় পশু পালন করতে উত্সাহ দিয়েছে। মঙ্গোলিয় তৃণভুমি ও মরুভুমিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত খুবই কম । পশুপালকদের জীবনে সচ্ছলতা আনার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু পালন করতে হবে ।

    উলাটজং জেলায় তথা পায়ানজুও শহরে মঙ্গোলিয়া জাতির লোকসংখ্যার অনুপাত তেমন উচুঁ নয় ।তবে চীন সরকারের সংখ্যালঘু জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বিষয়ক বিশেষ নীতি অনুযায়ী কিন্ডার গার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত মঙ্গোলিয় ভাষায় সকল বিষয়ের ক্লাস খোলা হয়েছে , উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠনেমঙ্গোলিয় ভাষার বিভাগ আছে ।বেতার কেন্দ্র ও টি ভি কেন্দ্র থেকে রোজ মঙ্গোলিয় ভাষার অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় , মঙ্গোলিয় ভাষার একাধিক সংবাদ পত্রিকাও প্রকাশিত হয় ।

    সুমুয়া সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , মঙ্গোলিয়া জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডার নির্বাচন ও প্রশিক্ষণকে বরাবরই গুরুত্ব দেয়া হয় ।স্থানীয় সরকারের যাবতীয় স্তরের নেতৃমন্ডলীতে সংখ্যালঘু জাতির ক্যাডার আছে

    পাঁচ বছর আগে সুমুয়া পায়ানজুওর শহরের গণ রাজনৈতিক পরামর্ষ পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন । এই শহরে তিনিই সর্বোচ্চ নেতৃপদে অধিষ্ঠিত মঙ্গোলিয় নারী ক্যাডার । তিনি বলেছেন :আমি অতীতে ছিলাম সাধারন পশুপালকের মেয়ে এবং স্কুলের স্নাতকোত্তর ছাত্রী ।পরে আমি যে একজন নেতৃস্থানীয় ক্যাডা হয়েছেন তার মুলে ভুমিকা পালন করেছে সরকারের সাহায্য।সরকার আমার মত সংখ্যালঘু জাতির কর্মচারীদের শিক্ষার যোগ্যতা বৃদ্ধির অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । আমি সাতবার পার্টির প্রশিক্ষন বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি । কখনো ছয় মাস ,কখনো বা দু বছর ।

    পায়ানজুওর শহরের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের চেয়ারম্যান হানকাং তিরিশ বছর ধরে সুমুয়ার সংগে কাজ করেছেন । গত শতাব্দির সত্তরের দশকে তিনি উলাটজং জেলার সচিবালয়ের সচিব নিযুক্ত হন । তখন সুমুয়া উলাটজং জেলার পার্টি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ।তখনকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন :সুমুয়া চারনভুমিতে বড় হয়েছেন , হান জাতির ভাষায় সাবলিলভাবে কথা বলতে পারেন না । হান ভাষার দলিল পড়তে প্রথমে তাঁর অসুবিধা ছিল ।তিনি অত্যন্ত বিনয়ী , কোনো শব্দ বুঝতে না পারলে তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করেন । এখন তিনি মোটামুটি হান ভাষায় পড়তে,লিখতে আর বলতে পারেন ।

    সুমুয়ার বয়স ৫৫ বছর ,তাঁর অবসর গ্রহনের দিন ঘনিয়ে আসছে । কিন্তু এখনো তিনি উত্সাহ-উদ্দীপনার সংগে চারনভুমির উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা করছেন।তিনি বলেছেন তাঁর সহকর্মীদের সংগে মিলে তাঁর জন্মস্থানের চেহারা পাল্টে দেয়াই তাঁর আজীবন লক্ষ্য ।