v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-06 16:10:14    
মান জাতির রীতিনীতি

cri
    চীনে মান জাতি এমন একটি জাতি , যার লোকসংখ্যা ৫৫টি সংখ্যালঘুজাতির মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি । মান জাতির লোকসংখ্যা ৯৮লক্ষ । তারা প্রধানতঃ উত্তর পূর্ব চীনে থাকেন । সম্প্রতি সংবাদদাতা উত্তর পূর্ব চীনের লিয়াও নিং প্রদেশের সিনপিং মান জাতি স্বায়ত্ত শাসিত জেলার হেতুআলা নগরে গিয়ে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । ওখানে তিনি মান জাতির ঘোর রেওয়াজ উপলব্ধি করেছেন ।

    চীনের ইতিহাসের সর্বশেষ রাজবংশ, ছিং রাজবংশের সম্রাট নুরহাছির উদ্যোগে হেতুআলা নগর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । মান জাতির অন্যতম উত্পত্তিস্থল হিসেবে তার ইতিহাস চার শো বছরেরও বেশী সময় পুরানো । আজ হেতুআলা নগরে যদিও মেরামত আর মজবুকরণের কাজ চালানো হয়েছে , তবু ওখানে বসবাসকারী মান জাতির পুরানো ও ঐতিহ্যিক আচার ব্যবহার এখনো সংরক্ষিত রয়েছে ।

    হেতুআলা নগরে মান জাতির ঐতিহ্যিক পোষাক পরা বহু যুবতী গাইড আছেন । আমাদের গাইড মিস ইয়াং উই  তো স্থানীয় মান জাতিরই মেয়ে । হেতুআলা নগরের ইতিহাস আর পুরাকীর্তি প্রসংগে তিনি বলেছেন , আমাদের নগরে এখনো চার শো বছরেরও বেশী সময় পুরানো হান ওয়াং নামে কূপ ও পুরানো প্রাচীরের একটি অংশ সংরক্ষিত আছে । পুরানো প্রাচীরের মধ্যে নগরের দক্ষিণাংশের এই অংশটা সবচাইতে সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষিত । হান ওয়াং কূপ নগরের একমাত্র প্রাচীন কূপ । কূপের ভেতরের কাঠ এখনো পঁচে হয় নি ।

    হান ওয়াং কূপের পানি স্বচ্ছ, খেতে মিষ্টি। খুশির ব্যাপার এই যে , কূপটি পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষিত হয়েছে এবং তার পানি এখনো খাওয়া যায় ।

    হেতুআলা নগর পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত হয়েছে । তার তিন দিক নদীদ্বারা বেষ্টিত । নগর প্রতিরক্ষা সহজ আর তা দখল করা কঠিন । নগরের চার দিকে উঁচু প্রাচীর নির্মান করা হয়েছে । নগরে বাড়িঘর প্রাচীন , সরল আর ব্যবহারযোগ্য । নগরের উত্তর প্রাচীরের নিকটবর্তী হান কোন নামে একটি সরকারী অফিস ভবনের ডিজাইনে মান জাতির নিখুঁত স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত আছে । এটাই প্রাচীন নগরের চিহ্ন।

    হেতুআলা নগরে গেলে নুরহাছির জন্মস্থল দেখতে হয় । তাতে মান জাতির আবাসের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায় । প্যাকেটের মতো বাড়িঘর , চীনা অক্ষর ওয়াং শব্দের মতো খান নামে রকমের খাট আর চিমনী ভূপৃষ্ঠে আছে । এটাই মান জাতির নিখুঁত আবাসের বৈশিষ্ট্য । প্যাকেটের মতো বাড়িঘরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সংরক্ষণ করা যায় । ওয়াং শব্দের মতো খাট বৈঠকখানা বলে ভুমিকা পালন করে। ওখানে বসা , শোয়া আর কথাবার্তা বলা যায় । চিমনী যে ভূপৃষ্ঠে নির্মিত হয় , তার উদ্দেশ্য খাটের ভেতরের তাপমাত্রা বেশী ক্ষণ বজায় রাখা যায় ।

    হেতুআলা নগরের পেছনে একটি সুন্দর বাগান আছে। ওখানের দৃশ্য খুব মনোরম । এটাই নব নির্মিত চীনের মান জাতির রীতিনীতি উদ্যান । এই উদ্যানের পরিচালনা বিভাগের পরিচালক চাও ছি সিং বলেছেন , চীনের মান জাতির রীতিনীতি উদ্যানে মান জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি বারান্দা আর একটি যাদুঘর অন্তর্ভুক্ত । বিশেষ করে মান জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি বারান্দায় দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে মান জাতির জন্ম , ছিং রাজবংশের বিকাশ আর মান জাতির বৈচিত্রময় রেওয়াজ তুলে ধরা হয়েছে । মান জাতির আচার ব্যবহার যাদু ঘরে মান জাতির রীতিনীতি ও সংস্কৃতি দেখায় ।

    মান জাতির আচার ব্যবহার উদ্যানে তিন ধরনের বিস্ময়কর লক্ষণ দেখা যায় । এক, জানালার বাইরে কাগজ লাগানো হয় । জানালার বাইরের কাগজে যে প্রানী ও উদ্ভিদের তেল দেয়া হয় , তাতে বালিঝড় প্রতিরোধ ও তাপমাত্রা সংরক্ষণ করা যায় । দুই, বাচ্চাকে দোলনায় রাখা হয়। দোলনা ঘরের উপরে ঝুলানো হয় । এই ভাবে বাচ্চা সবসময় দোলায়িত অবস্থায় আছে । তিন, অল্পবয়সী মেয়েরা ধূমপান করে । মান জাতির বয়স্করা ধূমপান পছন্দ করেন । তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য মেয়েরাও ধূমপান করে । মান জাতির রেওয়াজ অনুযায়ী, মেয়েদের ধূমপান পরিশ্রমের নিদর্শন।

    হেতুআলা নগরে গেলে ছিং রাজবংশের পুর্বপুরুষদের সমাধিস্হল--ইউনলিন সমাধিস্থলও দেখতে হয় । ইউনলিন সমাধিস্থল হেতুআলা নগর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এবছরের জুন মাসে ইউনেস্কো তাকে বিশ্বের একটি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি বলে নির্বাচিত করেছে ।

    ইউনলিন ষোড়শ শতাব্দির শেষ দিকে নির্মিত হয়েছে । তা পাহাড় ও নদী-মুখী। সমাধিস্থলের প্রধান তোরণ হচ্ছে একজোড়া গাঢ় লাল রংয়ের কাঠের দরজা । এতে কাঠের দরজাকে দেয়াল হিসেবে ব্যবহারে মান জাতির পুর্বপুরুষদের প্রাচীন রীতিনীতি দেখা দিয়েছে । হুসেন শহরের সংস্কৃতি ব্যুরোর উপ পরিচালক থুং তা ইউনলিন সমাধিস্থলের অদ্বিতীয় মূল্য প্রসংগে বলেছেন, চীনের অন্যান্য সমাধিস্থলের চেয়ে এই সমাধিস্থলের পার্থক্য আছে । এটা সংখ্যালঘুজাতির সমাধিস্থল , তাতে সংখ্যালঘুজাতির নিবিড় বৈশিষ্ট্য সংরক্ষিত রয়েছে । এখানকার দরজা যে কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়েছে , তাতে মান জাতির তখনকার রেওয়াজও দেখা যায় । এর ভেতরে চারটি স্মৃতি স্তম্ভ যে পরিপাটি আর সুশৃংখলভাবে দাঁড়িয়ে আছে , তাতে দেশ প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকে মান জাতির সমতা , সংহতি আর সংগ্রামী মনোবল প্রতিফলিত হয়েছে ।

    মান জাতির উত্পত্তিস্থলে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি পরিদর্শন আর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা ছাড়াও মান জাতির চমত্কার খাবারও আস্বাদন করা যায় । মান জাতির অধ্যুষিত এলাকায় 'আটটি প্লেট আটটি বাটি' মান জাতির সবচাইতে প্রসিদ্ধ খাওয়া দাওয়ার প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে যে প্লেট আর বাটির কথা বলা হয়, তা সত্যি বড় প্লেট আর গভীর বাটি । যখন এই সব বড় ও বিরাট প্লেট ও বাটির ব্যন্জন পরিপূর্ণভাবে টেবিলে ছড়িয়ে পড়ে , তখন আপনারা পেট ভরপুরে এগুলো খেয়ে ফেলতে বাধ্য ।

    বড় ও পুংখানুপুংখ ব্যন্জন ছাড়া মান জাতির জলখাবারও খুব জনপ্রিয় । নানা ধরনের মিষ্টান্ন খাবার মান জাতির ঐতিহ্যিক খাবার । বিশ্বাস করি , মান জাতির ঐতিহ্যিক ব্যন্জন ও জলখাবার আস্বাদন করার সংগে সংগে আপনিও হয়তো তা থেকে মান জাতির ইতিহাস আর খাওয়া বিষয়ক সংস্কৃতি সম্পর্কে আরো গভীর জানতে পারবেন ।