v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-06 15:08:26    
সুযৌ শহর

cri
   চীনের পূর্বাঞ্চলে ২৫০০ বছরেরও বেশী দীর্ঘ ইতিহাস সম্পন্ন একটি বিখ্যাত সংস্কৃতি শহর আছে।চীনারা এই শহরকে দুনিয়ার স্বর্গ বলে আখ্যয়িত করে থাকে। এই শহরের নাম হলো সুযৌ।সুযৌ শহরের উদ্যানগুলো সুদীর্ঘকালের।দেশ-বিদেশে এ সব উদ্যানের সুনাম আছে।শহরে ৬০টিরও বেশী জায়গায় প্রাচীনকালের উদ্যান এখনও সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত আছে।এগুলোর মধ্যে ৯টি বিশ্ব সাংস্কৃতিক উতরাধিকার তালিকায় অন্তভূর্ক্ত।আগামী জুন মাসে বিশ্ব উতরাধিকারের ২৮তম সম্মেলন সুযৌ শহরে অনুষ্ঠিত হবে।তখন সুযৌএর প্রাচীনকালের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সৌন্দর্য পুরোপুরি প্রকাশ পাবে।যদি আপনারা এই শহর সম্বন্ধে আগে থেকে জানতে চান তাহলে আজকের চলো না ঘুরে আসি এই বিশেষ অনুষ্ঠানে এই শহরের কিছু পরিচয় পাবেন আমাদের সহকর্মী চিয়াং চিং ছেনের উপস্থাপনায়।

    প্রাচীন সুযৌ শহরের প্রতিষ্ঠা খৃষ্টপূর্ব ৫১৪ সাল থেকে শুরু হয়।আশ্চর্য ব্যাপার হলো, গত ২৫০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে, অজস্র যুদ্ধের বিপর্যয় এবং দুর্যোগ অতিক্রান্ত হওয়ার পর আজও এই শহরের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। এই প্রাচীন শহরের কাঠামোও প্রায় আগের মতো বজায় রয়েছে।

    সুযৌ চীনের ইয়াংছি নদীর বদ্বীপে অবস্থিত। সেখানের জমি উর্বর, আবহাওয়া মনোরম এবং চলাফেরা সুবিধাজনক। খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর সামন্ত সমাজে চীনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই সুযৌ গিয়ে উদ্যান নির্মান করতেন।চীনের মিং আর ছিং রাজবংশের আমলে সুযৌর উদ্যানের স্থাপত্য রীতি আরো পরিপক্ক হয়। সুতরাং সেই সময়পর্বে ব্যাপক উদ্যান নির্মানের শিল্পী এবং প্রাচীন উদ্যানের স্থাপত্যের জম্ম হয়।

    সুযৌ শহরের উদ্যান বু্রোর মহা পরিচালক শু ভেন ঠাও ব্যাখ্যা করে বলেছেন, সুযৌর প্রাচীন উদ্যানগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ ছিল ব্যক্তিগত উদ্যান।সাধারণত এ সব উদ্যানের আয়তন খুব ছোট।তবে ছোট হলেও উদ্যান নির্মাতারা সীমিত জায়গায় এ সব উদ্যানে কৃত্রিম পাহাড়, গাছপালা , পুকুর ও ছোট সেতু সাজিয়ে দিয়েছেন।যার ফলে সুযৌর উদ্যানগুলো অত্যন্ত দৃষ্টি-আকর্ষী । লোকেরা এ সব ছোট ছোট উদ্যান থেকে স্থাপত্য শিল্পের মার্জিত কার্যকরীতা উপভোগ করতে পারেন।তিনি বললেন,

    সুযৌর প্রাচীন উদ্যানগুলো সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত।একটি অংশ হলো আবাসিক এলাকা , আরেকটি অংশ হলো পার্ক।আবাসের অংশগুলোকে দক্ষিণ চীনের প্রাচীন স্থাপত্যগুলোর এক ধরনের শ্রেষ্ঠ শিল্প হিসেবে গণ্য করা হয়।পার্কের অংশগুলো প্রকৃতির সংগে মানুষের সমন্বিত মিলনের আদর্শ।এ কথা বলা যায় যে,সুযৌর প্রাচীন উদ্যানগুলোতে প্রাকৃতিক মর্ম কেন্দ্রীভুত হয়েছে।উদ্যানগুলোতে যে সব স্থাপত্য বা কৃত্রিম বস্তু লোকের চোখে পড়ে, সে সব জিনিস যেমন প্রকৃতি থেকে জম্ম নিয়েছে তেমনি প্রকৃতি থেকে আরো সম্প্রসারিতও হয়েছে।উদ্যানগুলোর দৃশ্য থেকে চারটি ঋতুর পরিবর্তন ষ্পষ্টভাবে দেখা যায়। মনে হয়, এই ছোট একটি উদ্যানে থাকলে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য না দেখলেও কোনো ক্ষতি নেই।

    সুযৌর প্রাচীন উদ্যানগুলোর প্রত্যেক কোণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনুভব করা যায়।চীনের প্রাচীনকালের উদ্যান নির্মানকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ নিমার্নকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি।তারা কবিতা লেখা এবং চিত্র আঁকায় নিপুণ। উদ্যানগুলোতে কৃত্রিম পাহাড় বানানো, পুকুর খনন করা এবং গাছ ও ফুল লাগানোর মধ্যমে তাদের কবিতার মর্ম প্রকাশিত হয়।সুতরাং সুযৌর প্রাচীন উদ্যানকে নীরব কবিতা,নিয়তাকার চিত্র বলে মনে করা হয়।উদ্যানে হাঁটলে মনে হয় আমরা একটি সুন্দর কবিতা আর চিত্র উপভোগ করছি।উদ্যানের মালিকদের শখ, আদর্শ এবং আশা-আকাংক্ষা প্রকাশ করার উদ্দেশে উদ্যানের স্থাপত্য আর দৃশ্যগুলোতে নানা ধরনের কবিতা খোদাই করা বা লাগানো হয়।যেখানে সেখানে সুন্দর সুন্দর কবিতা পযর্টকদের নজরে পড়ে।এ সব কবিতাগুলো উদ্যানের স্থাপত্য, কৃত্রিম পাহাড়, পানি , ফুল-গাছগুলোর সংগে সহজেই মিশে যায়।যার ফলে, উদ্যানগুলোর প্রত্যেকটি পাহাড়, প্রত্যেকটি গাছের যেন অন্তর্নিহিত তাতপর্য আছে।

    বিশ্ব সাংষ্কৃতিক উতরাধিকার কমিশন সুযৌর প্রাচীন উদ্যানের প্রণয়নের ধারণার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। ১৯৯৭ সালে সুযৌর ছিজেন উদ্যান,ওয়াংসি উদ্যান, লিও উদ্যান এবং সিংহ বন বিশ্ব সাংস্কৃতিক উতরাধিকার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।এর পর আরো পাচটি উদ্যান বিশ্ব উতরাধিকার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

    ওয়াংসি উদ্যান সুযৌ শহরের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত। তার আয়তন এক একরের কম হলেও সীমিত জায়গায় একটি ছোট মার্জিত উদ্যান নির্মিত হয়েছে।সুতরাং সুযৌ ভ্রমণ করতে আসা পযর্টকরা সাধারণত প্রথমে ওয়াংসি উদ্যানে গিয়ে সুযৌ উদ্যানের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যরীতি উপভোগ করতে ভালোবাসেন।যদি সন্ধ্যার পর আমরা ওয়াংসি উদ্যানে যাই ,তাহলে আমরা শুধু যে উদ্যানের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারি তাই নয়, স্থানীয় ঐতিহ্যসম্পন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করতে পারি। আমাদের সংগে রাতের বেলায় যদি ওয়াংসি উদ্যানে যান, তাহলে ওখানে আপনারা যে মজা পাবেন তা দিনের বেলায় কিছুতেই পাবেন না।

    প্রাচীন সুযৌ শহরের দক্ষিণ-পূর্বাংশের একটি গলির প্রান্তে গেলে একটি প্রগাঢ় লাল-রংগা বিরাট দরজা অবশ্যই আপনাদের নজরে পড়বে। দুটো বড় আকারের পাথরের তৈরী সিংহ দরজার দু পাশে বসানো হয়। এটা হলো ওয়াংসি উদ্যান।গাইড মিস জেন ব্যাখ্যা করে বললেন, ওয়াংসি উদ্যানের বৈশিষ্ট্য এই যে,সাধারণত সামনের অংশ ড্রইং রুম, পিছনের অংশ উদ্যানের মালিকের থাকার জায়গা। গাইডের সংগে কয়েটি কক্ষ পার হওয়ার পর হঠাত একটি সুন্দর উদ্যান আমাদের সামনে পড়ে। আমাদের অজ্ঞাতে ওয়াংসি উদ্যানের পিছনের অংশে আমরা এসে পড়লাম।একটি পুকুরকে কেন্দ্র করে এই উদ্যান নির্মান করা হয়েছে।উদ্যান আর পুকুর বেশ বড় নয় বটে,কিন্তু এগুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।এই সীমিত জায়গায় উপস্থিত হলে লোকেরা আনন্দে মেতে উঠে। পুকুরের উপরে নানা ধরনের সেতু তৈরী করা হয়েছে। পুকুরের চার দিকে ভেভিলিয়াং আছে।সেতুগুলো বেশ উচু নয় এবং ভেভিলিয়াংগুলোর আকারও বেশ বড় নয়। তাই পুকুরে পানির সীমা বিস্তৃত মনে হয়।আঁকাবাঁকা দেওয়াল দেখতে দেখতে , হাওয়া থেকে ভেসে আসা নানা ধরনের ফূলের সুগন্ধ শুঁকতে শুঁকতে এবং প্রাচীন আর মার্জিত সংগীত শুনতে শুনতে উদ্যানের ঘাস, গাছপালা ,কৃত্রিম পাহাড় , পাথর , ইট প্রভৃতি জিনিস যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।তারা যেন নিজ নিজ নিহিত সৌন্দর্য প্রকাশ করতে মানুষের সামনে উসখুস করছে।অষ্ট্রেলিয়া থেকে আসা একজন তরুণ শিক্ষক আনন্দের সংগে বললেন.

    এটা সত্যি একটি সুন্দর জায়গা ।তা ছাড়া একটি আদর্শ অবসর বিনোদনের জায়গা বটে।এত সুন্দর পরিবেশে আমরা চীনের সংস্কৃতির আড়ালের প্রগাঢ় ইতিহাস গভীরভাবে উপলদ্ধি করেছি।

    মার্কিন নাগরিক টমাস সুযৌতে এ নিয়ে তিন বার সফর করেছেন ।তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বারই সুযৌর উদ্যানগুলো দেখতে আসেন, তার অনুভুতি ভিন্ন রকমের।তিনি বললেন,

    আমি এখানকার উদ্যানগুলো খুব পছন্দ করি। এখানকার পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এখানে এসে চীনের প্রাচীন সংগীত শুনলে উতেজিত হই।আমার মনে হয়, এটা হলো আমার চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির অনুসন্ধান। আমি যা খুঁজতে চেয়েছিলাম এখানে আমি তা পেয়েছি।

    তাদের মূল্যায়ন হয়ত সুযৌ সম্বন্ধে বিশ্ব সাংষ্কৃতিক উতরাধিকার কমিশনের মূল্যায়নের কমবেশি প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্ব সাংস্কৃতিক উতরাধিকার কমিশনের মূল্যায়ন এই যে, ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এ সব উদ্যান খুবই নিষ্ঠার সংগে নির্মান করা হয়েছে। এগুলোতে প্রতিফলিত চীনের সংস্কৃতি যেমন প্রাকৃতিক তেমনি অলৌকিক ।