v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-12-02 20:13:21    
শনিগ্রহ পযবেক্ষণ , জীবনের রহস্য উদ্ঘাটন

cri
    পেইচিং সময় দুই হাজার চার সালের ১লা জুলাই দুপুরে "কাসিনি" নামক নভোযান সাফল্যের সংগে শনিগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে । সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহের চারদিকে প্রথমবারের মতো একটি কৃত্রিম "উপগ্রহ"দেখা দেয় । "কাসিনি" নামক নভোযানটির পযবেক্ষণ এ পযর্ন্ত প্রবতির্ত জটিলতম গ্রহ পযবেক্ষণ পরিকল্পনা বলে মনে করা হচ্ছে । নভোযানটির অন্তত: চার বছরের নিকট ব্যবধান থেকে পযবেক্ষণ শুধু শনিগ্রহ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকদের উপলব্ধিই গভীরতর করবে না , বরং পৃথিবী ও জীবনের রহস্য উদ্ঘাটনের পক্ষেও সহায়ক ।

    শনিগ্রহকে বৈজ্ঞানিকরা আদরের সংগে সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের মধ্যেকার "রিংরাজ" বলে অভিহিত করেন । সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমদিকেই ইতালির বিখ্যাত পন্ডিত প্রথমবারের মতো দূরবীন দিয়ে শনিগ্রহ পযবেক্ষণ করেন । কিন্তু তিনি বুঝতে পারতেন না যে , কেন বিভিন্ন সময়ে রাত্রিবেলার আকাশে  শনিগ্রহের বিভিন্ন আকৃতি পরিলক্ষিত হয় । তিনি উপলব্ধি করতে পারেন নি যে , সেই বিভিন্ন আকৃতি হলো বিভিন্ন দিক থেকে দেখা শনিগ্রহের রিং । তিনি বরং এই প্রবনতাকে শনিগ্রহের ভেতর থেকে গজিয়ে উঠা এবং তারপর অদৃশ্য হওয়া "বাহু"-র উপমা দিয়েছেন । প্রায় অধর্শতাব্দী পর নেদারল্যান্ডের জ্যোতিবির্দ হুইগেন্স পযবেক্ষণ করে শনিগ্রহের রিংয়ের তত্ত্ব উত্থাপন করেন । পরে ইতালীয়ান বংশোদ্ভূত ফ্রান্সের বৈজ্ঞানিক কাসিনি প্রমুখ এই তত্ত্বকে সপ্রমাণ করেন ।

    গত কয়েক শো বছরে প্রযুক্তির উন্নতির সংগে সংগে বৈজ্ঞানিকরা শনিগ্রহ পযবেক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অজর্ন করেন । সৌরজগতের গ্রহগুলোর গঠন গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শনিগ্রহের মূল্যও ক্রমেই প্রকট হয় । শনিগ্রহজগত নিদির্ষ্ট মাত্রায় অনেকটা "ছোটো সৌরজগতের" মতো । সৌরজগত গড়ে উঠার প্রথমদিকে সূয গ্যাস ও ধূলিকণার গোলক-বেষ্টিত ছিলো । ঠিক এই গ্যাস ও ধূলিকণার গোলকগুলোর মধ্যেই বিভিন্ন গ্রহের জন্ম বলে মনে করা হয় । বৈজ্ঞানিকরা বলেছেন , শনিগ্রহ ও তার সুন্দর রিং প্রথমদিকের সূয ও তার চারদিকের গ্যাস ও ধূলিকণা গবেষণার মডেলে পরিণত হতে পারে । শনিগ্রহের অনেকগুলো উপগ্রহ পযবেক্ষণ করে গভীরভাবে সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের বিবতর্নের প্রক্রিয়া বোঝার জন্য মূল্যবান তথ্যাদি পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে ।

    এ পযর্ন্ত আমরা যত দূর জানি ,শনিগ্রহের একত্রিশটি উপগ্রহ আছে । সেগুলোর রাসায়নিক ,ভূতাত্ত্বিক ও বায়ুমন্ডলীয় ইত্যাদির গঠনের সমৃদ্ধ বৈশিষ্ট্য আছে । পরিকল্পনা অনুসারে "কাসিনি"নামক নভোযানটি চার বছরে ছিয়াত্তরবার শনিগ্রহ প্রদক্ষিণ করবে এবং বাহান্নবার শনিগ্রহের সাতটি উপগ্রহের সন্নিকটে পৌঁছুবে । এর মধ্যে শনিগ্রহের বৃহত্তম উপগ্রহ অথার্ত্ ছয় নাম্বার উপগ্রহ পযবেক্ষণ বিশেষ প্রত্যাশা করবার মতো । "কাসিনি"নামক নভোযানটি চার বছরে পঁয়তাল্লিশবার শনিগ্রহের ছয় নাম্বার উপগ্রহ অতিক্রম করবে এবং তার ভূপৃষ্ঠে "হুইগেন্স" নামক প্রোব্ নিক্ষেপ করবে ।

    বিজ্ঞান ক্ষেত্রে পৃথিবীর জীবনের উত্পত্তি এখনও একটি রহস্য । ব্যাপকভাবে মনে করা হয় যে , বোধ হয় তথাকথিত "অরিজিন্যাল সূপ"নামে একধরণের পদার্থের সংগে জটিল কাবাইর্ড মিশে যাওয়ার পর পৃথিবীর জীবনের সৃষ্টি হয়েছে । কিন্তু বৈজ্ঞানিকরা প্রথমদিকের পৃথিবীর রাসায়নিক পরিবেশ সম্পর্কে কিছুই জানেন না । জানেন না জীবনের উত্পত্তির সময়ে পৃথিবীতে কি কি কাঁচা উপকরণ ছিলো । "কাসিনি"আর "হুইগেন্সের"শনিগ্রহের ছয় নাম্বার উপগ্রহ পযবেক্ষণ বৈজ্ঞানিকদের এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করবে ।

    শনিগ্রহের ছয় নাম্বার উপগ্রহের আকার বুধগ্রহ ও প্লুটোগ্রহের চেয়েও বড় । তার রয়েছে নাইট্রোজেন ও মিথেন-সমৃদ্ধ ঘন বায়ুমন্ডল । সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ ও তাদের উপগ্রহগুলোর মধ্যে শুধু পৃথিবী ও শনিগ্রহের ছয় নাম্বার উপগ্রহের বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেন মিশে আছে । প্রথমদিকের পৃথিবীতে বোধ হয় বিপুল পরিমাণ মিথেনের মতো হাইড্রোকাবর্ন ছিলো বলে অনুমান করা হচ্ছে । বৈজ্ঞানিকরা বলেছেন ,শনিগ্রহের ছয় নাম্বার উপগ্রহে সম্ভবত:অনেক রাসায়নিক মিশ্রিত পদার্থ হিমায়িত করা আছে এবং কিছু অনুরূপ রাসায়নিক মিশ্রিত পদার্থ সম্ভবত:জীবনের উত্পত্তির আগেই পৃথিবীতে বিদ্যমান । এমন কি কোনো কোনো বৈজ্ঞানিক মনে করেন ,"কাসিনি"ও "হুইগেন্সের"পযবেক্ষণের ফলাফলে দেখা যাবে ,প্রথমদিকের পৃথিবীর সংগে বতর্মান পৃথিবীর চেয়ে শনিগ্রহের ছয় নাম্বার উপগ্রহের সাদৃশ্য বেশী । ইউরোপের মহাশূন্য ব্যুরোর "হুইগেন্স" প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক বলেছেন , শনিগ্রহের ছয় নাম্বার উপগ্রহ পযবেক্ষণ অনেকটা "চার বিলিয়ন বছর আগেকার পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার" মতো ।