পশ্চিম চীনের মালভূমিতে শ্যুন হুয়া নামে সালা জাতি স্বায়ত্ত শাসিত জেলা আছে । পাহাড় ঘেরা এ জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী--- হোয়াং হো । চীনের অন্যতম সংখ্যালঘুজাতি সালা জাতির লোকেরা বংশপরম্পরায় এখানে থাকেন । তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন এবং তাদের অসাধারণ রীতিনীতি আছে ।
বর্তমানে সালা জাতির লোকসংখ্যা ৯০ হাজারেরও বেশী । চেন হুয়া জেলার কেন্দ্রস্থলে একটি বিরাট মসজিদ আছে । প্রতি দিন মসজিদে ইমাম কোরান পাঠ করেন । নিয়মিতভাবে নামাজ পড়ার জন্য তিনি মুসলমানদের আহবান জানান । রীতিনীতি অনুসারে সালা জাতির মেয়েদের মাথা পাগড়ী দিয়ে মোড়ানো । অবিবাহিতদের পাগড়ীর রঙ সবুজ আর বিবাহিতদের পাগড়ী কালো বা সাদা । সালা জাতির পুরুষদের পোষাক সরল , তাদের মাথা শুধু একটি ছোট সাদা টুপি দিয়ে ঢাকা। এটাই মুসলমানদের প্রতীক ।
সালা জাতির একটি কিংবদন্তী অনুযায়ী , ৭ শো বছরেরও বেশী সময় আগে সালা জাতির পূর্বপুরুষরা স্থানীয় শাসকের নির্যাতনে বাধ্য হয়ে জাতির লোকদের নিয়ে প্রাচ্যে নতুন সুখী স্থান অনুসন্ধান করার জন্য মধ্য এশিয়ার সমরখন্দ থেকে রওয়ানা হয়েছেন । তাদের সংগে ছিল একটি সাদা উট ও একটি কোরান । যখন তারা একটি উঁচু পাহাড়ে উঠছিলেন , তখন সাদা উটটি হারিয়ে যায়। পরের দিন তারা নিকটবর্তী একটি স্থানে একটি ঝরনা আবিস্কার করেছেন । সাদা উটটি শাদা পাথরে পরিনত হয়েছে । সালা জাতির লোকেরা ঝরনাটিকে উট ঝরনা নাম দিয়েছেন । তার পর তারা এখানে বাস করেন , জমিতে চাষ করেন এবং সুখী জীবনযাপন করেন । তাদের মনে উট ঝরনা তাদের জাতির প্রতীক। ৬০ বছরেরও বেশী বয়সী হান চাং সিয়াং দীর্ঘকাল ধরে সালা জাতির রীতি নীতি ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন করেন। তিনি বলেছেন , সালা জাতি একটি উপজাতি ছিল । সালা জাতি ১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসে জাতি হিসেবে দেখা দিয়েছে । সালা জাতির নিজস্ব ভাষা আছে , লিখিত আকারে ভাষা নেই । তাদের মৌখিক সাহিত্য অপেক্ষাকৃত উন্নত । শ্যুন হুয়া সালা জাতি স্বায়ত্ত শাসিত জেলায় আমরা রুপ কথায় বর্ণিত উট ঝরণা দেখেছি । একটি সাদা প্রস্তরের উট ঘাঁসের ভেতরে শুয়ে রয়েছে , তার পাশে একটি বিশুদ্ধ ঝরণা । গত কয়েক শো বছর ধরে এই ঝরনা সালা জাতিকে লালন পালন করে । ঝরণার পাশে শুয়ে থাকা শাদা উট সালা জাতির জনগনের পরিশ্রম ও সহিষ্ণুতার প্রত্যক্ষদর্শী। তাতে আজকের সালা জাতির নতুন জীবনযাত্রাও প্রতীয়মান হয়েছে ।
চীনের অন্যান্য অনেক জাতির মতোই সালা জাতিও বহু দুঃখ দুর্দশা ভোগ করেছিল । নয়া চীন প্রতিষ্ঠার সংগে সংগে সালা জাতির লোকেরাই নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রন করেছে । সংস্কার আর উমুক্ততা প্রবর্তিত হবার পরর্বতী বিশাধিক বছরে সালা জাতির উত্পাদন ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে ।
চেন হুয়া জেলার চা ই সংখ্যালঘুজাতির নিত্য ব্যবহার্য পণ্য লিমিটেড কোম্পানি একটি সংখ্যালঘুজাতির শিল্প সংস্থা ।এই শিল্প সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তি হান সিয়াও ফেং বলেছেন , শিল্প সংস্থা স্থাপন করা যেমন চেন হুয়া জেলার জন্য বিরাট অর্থনৈতিক ফলপ্রসূতা আর কর্মসংস্থানের সুযোগ যুগিয়েছে , তেমনি তাতে সালা জাতির মহিলাদের চাকরি না দেয়ার পুরানো রীতিনীতিও পরিবর্তিত হয়েছে ।তিনি বলেছেন , আগে সালা জাতির নারীরা চাকরি করতেন না । এই শিল্প সংস্থা স্থাপনের কল্যাণে বহু গ্রামীন নারীরা কারখানায় কাজ করছেন । এতে তাদের আয় বেড়ে যাওয়ার সংগে সংগে তারা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে সমতা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছেন ।
হান চ্যু ইউ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল স্নাতক পাশা। তিনি এখন এই কারখানার একজন কর্মী। তিনি বলেছেন , এখানে আসার পর আমি ব্যবস্থাপনা , সুতা কাটা আর কম্পিউটার জ্ঞান শিখেছি । দু'বছর ইংরেজী শেখার জন্য কোম্পানি আমাকে পেইচিং বিদেশী ভাষা ইনস্টিটিউটেও পাঠিয়েছিল ।
সালা জাতি প্রকৃতি খুব ভালোবাসে। তাদের বাড়ীর প্রাঙ্গনে ফুল বা ফলমূল গাছ লাগানো হয় । বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে বাসায় বাসায় ফুল ফুটে , শরত্কালে ফলমূল হয়।
সালা জাতির স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস আছে । এটা প্রতি বছর শ্যুন হুয়া ভ্রমণের জন্য বিপুল সংখ্যক দেশী -বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করে ।গত কয়েক বছরে সালা জাতির রীতিনীতিভিত্তিক পর্যটন তত্পরতা সালা জাতির পাহাড়ী অন্চলে ব্যাপকভাবে চালানো হচ্ছে । গত কয়েক বছরে সালা জাতির কৃষক হান সিয়াং মিনের বাড়িতে পারিবারিক পর্যটন তত্পরতা চালানো হয়েছে । তার বাড়ীর প্রাঙ্গন সবুজ গাছ আর রঙবেঙের ফুলে ভরপুর । তিনি বলেছেন , এখন থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভ্রমনে আসছেন । তার বাড়ীতে প্রতি বছর প্রায় দশ হাজার পর্যটককে স্বাগত জানানো হয় ।
শ্যুন হুয়া জেলার পর্যটন বিভাগের কর্মকর্তা লাং থিয়েন বলেছেন , পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সংগে সংগে চেন হুয়া জেলার অর্থনীতির বিকাশ তরান্বিত করা দরকার। তিনি বলেছেন , শ্যুন হুয়া ছিনহাই-তিব্বত মালভূমির পরিবেশের একটি প্রতীক । এখানে তৃণভূমি , প্রাচীন অরণ্য, হ্রদ, হোয়াং হো নদীর সংস্কৃতি আর সালা জাতির স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রীতি নীতি ও ধর্মীয় সংস্কৃতি আছে । তিনি এই জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশের উপর খুব আশাবাদী।
|