এই সব মূল্যবান তথ্য থেকে আমরা শাং রাজবংশ আমলের সংস্কৃতি সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা পেতে পারি ।
প্রথমতঃআমরা নিশ্চিতরূপে অনুমান করতে পারি যে , শাং রাজত্বের সময়কার উত্পাদন -কৌশল বহু আগেই তাম্রযুগে প্রবেশ করেছিল । ঐ যুগের তাম্র-নির্মিত দ্রব্য ছিল বিভিন্ন প্রকারের আর তাদের মধ্যে সর্বাধিক ছিল রন্ধনশালায় প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ও কাটারি ,মদ্যপানের পাত্র ,যুদ্ধের অস্ত্র ইত্যাদি । বৃহত্ আকারের মধ্যে আছে বেশ কয়েক বছর পূর্বে প্রাপ্ত তাম্র-নির্মিত এবং সুন্দর কারুকার্যশোভিত সাতশত কিলোগ্রাম ওজনের একটি ত্রিপদ পাত্র । ক্ষুদ্র আকারের মধ্যে আছে যেমন চামচ , মদের পেয়ালা এবং তীরের ফলা । এগুলো খুবই শোভনীয় এবং চিত্তাকর্ষক । এই সব তাম্র -নির্মিত দ্রব্য সংখ্যার দিক থেকে , আকৃতির বিভিন্নতার দিক থেকে , কারিগরী দক্ষতার দিক থেকে এবং কারুকার্যের সৌন্দর্যের দিক থেকে পৃথিবীর তাম্রযুগীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক অতুলনীয় স্থান দখল করে আছে ।
দ্বিতীয়তঃশাং রাজত্ব কৃষি উত্পাদনের যুগে প্রবেশ করেছিল । কচ্ছপের খোলা এবং হাড়ের উপর ফসল-কাটা ও বৃষ্টি সম্বন্ধে খোদিত বর্ণনা থেকে জানা যায় যে , শাং রাজত্বের অর্থনীতিতে কৃষি ইতিমধ্যেই এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল সবচেয়ে অধিক উল্লিখিত হয়েছে ।তারপর গম । এ থেকে ধারণা করা যায় যে শাং আমলের লোকেদের প্রধান খাদ্য ছিল জোয়ার এবং গম । "রেশমীগুটিপোকা","তুঁতগাছ" এবং "রেশম ও রেশমীকাপড়" ইত্যাদি শব্দের বহু উল্লেখ তৈরী করার কথা জানতেন । গবাদি পশু পালন ঐ সময়ে ইতিমধ্যেই গৌণ বৃত্তিতে পরিণত হয়েছিল ।প্রত্মতত্ত্ববিদদের আবিষ্কার এবং কচ্ছপের খোলা ও হাড়ের উপর খোদিত লিপি থেকে আরও জানা যায় যে , শাং লোকেরা যে সব এবং শূকর । ভারবাহী পশু হিসেবে এবং রথ ও শকট চালনাতে ঘোড়া এবং গবাদি পশু ব্যবহ্নত হত । পীতনদীর উপত্যকায় ঐ সময়ে হাতির অস্তিত্ব ছিল এবং যুদ্ধক্ষেত্রে হাতি ব্যবহ্নত হত ।
তৃতীয়তঃশাং রাজত্বের সময়কার সমাজ ছিল দাসব্যবস্থাভিত্তিক সমাজ । ভূগর্ভ বহু সংখ্যক সুদক্ষ কারিগর ছিল এবং তাদের তদারকী করার জন্য অন্য লোকও ছিল । ঐ সব দাস-কারিগরেরা অভিজাত সম্পদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য বিলাসদ্রব্য তৈরি করত । আমরা আরও জানতে পারি যে তখন বহু ভবিষ্যদ্বক্তার অস্তিত্ব ছিল এবং তারা অর্ঘ্য অর্পণ করত ,ভবিষ্যদ্বাণী করত আর তার ফলাফল লিখত বা খোদাই করত । অবশ্য কৃষি অথবা পশুপালনের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের লোকের সংখ্যাই ছিল অধিক । তারা উত্পাদনের সঙ্গে সম্পর্কহীন লোকেদেরও জীবনধারণের প্রয়োজনীয় দ্রব্য যোগান দিত।
|