v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-11-30 09:01:36    
চীনের সংখ্যালঘু পাই জাতির নৃত্য শিল্পী ইয়াং লি পিং

cri
    চীনের রংগমঞ্চে একজন বিখ্যাত পাই জাতির নৃত্যশিল্পী আছেন । ছোটবেলায় তিনি ছিলেন নাঙা পায়ে গমের শীষ কুড়ানী এবং নাচ-গান প্রেমী এক গ্রাম্য মেয়ে । তেরো বছর বয়সে তার জীবনের পরিবর্তন ঘটে । সেই বছরে তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তার জন্মভূমির একটি বিভাগ পর্যায়ের সংগীত ও নৃত্য দলে ভর্তি হন । এরপর কয়েক বছর অনুশীলনের পর তিনি বর্তমান চীনের একজন বিখ্যাত সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য শিল্পীতে পরিণত হন । তার পরিবেশিত ময়ুরের ভাবমূর্তি খুবই চমত্কার । এটা দর্শকদের মনে গভীর দাগ এঁকে দিয়েছে ।

    দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের তা লি পাই জাতির স্বায়তশাসিত বিভাগের একটি গ্রামে ইয়াং লি পিং ভূমিষ্ট ও বড় হন । সে গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই সুন্দর । সেখানেই তিনি আনন্দের সংগে তার শৈশব কাটিয়েছেন । তার জন্মভূমি সম্পর্কে অনেক বছর ধরে পেইচিংয়ে থাকা ইয়াং লি পিং বলেছেন , আপনি হাত বাড়ালেই পিচ ফল পেড়ে খেতে পারেন । বাড়ীর দরজার সামনে দিয়ে একটি বদী বয়ে যায় । নদীর পানি খুবই পরিষ্কার । সেখানে আপনি শাকসব্জী ধুতে পারেন এবং সেখান থেকে পানি আনতে পারেন , উয়িলো গাছের তলায় ব্যাঙের ছাতা সংগ্রহ করতে পারেন । আমার মনে আছে , একদিন নদীর তীরে গরু চরাছিলাম , পাশে অনেক সূর্যমুখী ফুল ফুটে রয়েছে । পানিতে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট মাছ আমার দু পায়ের মাঝখান দিয়ে সাঁতরে যাওয়ার সময় সমগ্র প্রকৃতি যেন আমার কাছে রপরূপ সৌন্দর্যে ফুটে ওঠেছে । আরো মনে আছে , নদীর তীরে শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে দেখছিলাম মেঘরাশির পরিবর্তনের খেলা , কত সুন্দর দৃশ্য , কত সুখী জীবন । পাইজাতি যে প্রকৃতিকে শ্রদ্ধাকরে এবং প্রকৃতির দানকে ভালোবাসে , ইয়াং লি পিনের মধ্যে তা প্রতিফলিত হয়েছে । তার চোখে প্রকৃতির সর্বত্রই নাচ । প্রকৃতির প্রতিটি পরতে পরতে ইয়াং লি পিনকে অসীম শিল্পকর্ম দেখেছেন , যা থেকে তিনি নাচের অনেক ভংগী রচনা করতে পেরেছেন ।

    ১৯৭১ সালে তেরো বছর বয়সী ইয়াং লি পিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইউন্ন প্রদেশের সিসুয়ানপান্না বিভাগের সংগীত ও নৃত্য দলে ভর্তি হয়ে একজন আনুষ্ঠানিক নৃত্যশিল্পী হন । সিসুয়ানপান্না হচ্ছে তাই জাতি অধুষিত এলাকা এবং চীনের ময়ৃরের জন্মভূমি । দলে ভর্তি হওয়ার দ্বিতীয় দিনই তিনি ' ময়ুর কন্যঅ ' নামক নৃত্যনাট্যে ময়ুর কন্যার ভূমিকায় অভিনয় করেন । এর পর ময়ুরের সংগে এই পাই জাতির মেয়ের যেন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠে ।

    ১৯৮৬ সালে ইয়াং লি পিন চীনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংখ্যালঘু জাতির সংগীত ও নৃত্য দল অর্থাত চীনের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতির সংগীত ও নৃত্য দলে বদলী হন । এক বছর পর জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় তার রচিত ' ময়ুরের হৃদয়মন এবং আত্মবোধশক্তি ' নামক নৃত্য দুটো প্রথম শ্রেণীর পুরষ্কার পায় । ইয়াং লি পিন চীনের রংগমঞ্চের একটি উজ্জ্বল তারকায় পরিণত হন ।

   ' ময়ুরের হৃদয়মন আর আত্মবোধশক্তি' নামক নৃত্যে তার রচিত ময়ুরের ভাবমূর্তি দর্শকদের মনে গভীর দাগ কেটেছে । ইয়াং লি পিন বলেছেন , ময়ুরের প্রতি তার এক ধরণের বিশেষ ভালোবাসা আছে । এই ভালোবাসা পাই জাতির একটি সুন্দর কিংবদন্তী থেকে এসেছে । কিংবদন্তী অনুসারে সিসুয়াং পান্নায় একটি সুন্দর স্বর্ণহ্রদ ছিল । হ্রদে অসংখ্য পদ্মফুল ফুটেছে । একজন সুন্দর ময়ুরকন্যা সেখানেই বাস করেন । সিসুয়াংপান্না বিভাগের সংগীত ও নৃত্য দলে থাকার সময়ে একটি আকস্মিক সুযোগে একজন প্রবীণ ব্যক্তি ইয়াং লি পিনকে কিংবদন্তীতে বর্ণীত সেই স্বর্ণহ্রদের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন । সেখানে ইয়াং লি পিং একটি অত্যন্ত সুন্দর হ্রদ দেখেছেন । দেখেছেন হ্রদের তীরে একটি অতিকায় পিপুলগাছে বহু পিপুল ফল ধরেছে এবং গাছের তলায় একটির পর একটি ময়ুর পেখম মেলছে । কি সুন্দর দৃশ্য । এই দৃশ্য ইয়াং লি পিনকে বিস্ময়াভিভুত করেছে । দশ বারো বছর পর ইয়াং লি পিন ময়ুরকে তার শিল্পকর্ম রচনার বিষয় হিসেবে গ্রহন করে ' ময়ুরের আত্মা ' নামক নৃত্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন ।

    সাফল্যের সংগে ময়ুরের ভাবমূর্তি রচনা করার পর ইয়াং লি পিং পর পর ' জোছনা ' , ' বৃষ্টিধারা ' , ' দুটো গাছ ' , ' শীতে জমাট সাপ ' প্রভৃতি প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তোলার আরো নৃত্য রচনা করেছেন । লিন ফন নামক একজন ব্যক্তি এ ভাবে ইয়াং লি পিনের নৃত্যের মূল্যায়ন করে বলেছেন , আমি মনে করি , তার নৃত্যশিল্প যে এমন উচ্চস্তরে পৌচেছে , তা তার হৃদয়মনের পরিশীলন থেকে বিচ্ছিন্ন নয় । তিনি পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাসে অনুধাবন করেছেন নেচেছেন । তাই তার নৃত্যশিল্প হচ্ছে তার আত্মপ্রকাশ এবং তার হৃদয়মন থেকে নি:সৃত ঝরণা ।

    জীবনযাত্রায় ইয়াং লি পিন প্রকৃতির আরো কাছাকাছি । তিনি জমিচাষ করতে ভালোবাসেন এবং শাকসব্জীর চাষ করতে ও ফলগাছ লাগাতে সুনিপুন । নিজের পছন্দের নাচ সম্পর্কে ইয়াং লি পিন বলেছেন , নাচ আমার একটি সখ । আমি নেচে জীবন , জীবনযাত্রা ও প্রকৃতির প্রতি আমার কিছু অনুভুতি প্রকাশ করে থাকি । নাচ হচ্ছে এক ধরনের জীবনের চাহিদা ।