v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2004-11-29 11:41:41    
থিয়েনজিন

cri
    থিয়েনজিন শহর রাজধানী পেইচিং মহা-নগরের দক্ষিণ-পুর্ব দিকে অবস্থিত।হাইওয়ে ধরে পেইচিং থেকে থিয়েনজিন যেতে মাত্র এক ঘন্টার কিছু বেশী সময় লাগে।থিয়েনজিন একটি সৈকত শহর।তার ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছরের।আধুনিকতার দিকে অগ্রসরমান এই শহরের গভীর বৈশিষ্ট্য এখনও প্রকাশ পায়।থিয়েনজিনের ইতিহাস, ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি এবং রীতিনীতি হচ্ছে এই শহরের উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ।

    থিয়েনজিন শহর উতর চীনের সমভূমিতে অবস্থিত।তার দক্ষিণ-পুর্ব দিকে বোহাই সাগর।সুতরাং এই শহরের ইতিহাস এবং উন্নয়ন ভূগোলের সংগে নিবিড়ভাবে সম্পকির্ত।১৩০০ বছর আগে, থিয়েনজিন একটি স্থল আর জল বন্দর ছিল।দেশের বিভিন্ন জায়গার ছোট-বড় জাহাজগুলো থিয়েনজিনের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতো।বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এখানে আসতেন।৬০০ বছর আগে থিয়েনজিন একটি শহরের রুপ নেয়।তবে এই শহরের সম্মুন্নতির আরম্ভ মাত্র ৬০০ বছর আগে।দীর্ঘদিন ধরে থিয়ানজিন শহরের ইতিহাস গবেষণায় নিয়োজিত লো সি ব্যাখ্যা করে বলেছেন,

    ১৮৪০ সালের আফিম যুদ্ধ হওয়ার পর , বিপুল সংখ্যক বিদেশী অভিযাত্রী , ধনাঢ্য ব্যক্তি ও মিশিনারীরা থিয়ানজিনে গিয়ে ব্যাংক, গির্জা , বাণিজ্য সংস্থা , উদ্যান ইত্যাদি স্থাপন করে ।অভ্যন্তরের রাজনীতিবিদ, যুদ্ধবাজ আর মুতসুদ্দিরাও সুযোগ বুঝে থিয়েনজিনে গিয়ে জমি কিনতো এবং বাড়িঘর নির্মান করতো।গত ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের বিকাশে বর্তমানে থিয়েনজিন অত্যন্ত উতপ্ত হয়েছে। কিন্তু ঐতিহাসিক অবশেশগুলো এখনও এই শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ।বলাবাহুল্য,যদি আপনি একটি শহর সম্বন্ধে জানতে চান, তাহলে ঐতিহাসিক সংরক্ষণগুলো দেখা সবচেয়ে ভালো ।আচ্ছা, আজকে আমরা প্রথমে থিয়েনজিন শহরের পুরানো এলাকা থেকে আমাদের ভ্রমন শুরু করছি।

    থিয়েনজিনের পুরানো এলাকা হচ্ছে এই শহরের কেন্দ্র। ইতিহাসে বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করতে সমবেত। এই পুরানো এলাকা থিয়েনজিনের রীতিনীতি ও সংস্কৃতির জম্ম স্থান ।তা ছাড়া আধুনিক যুগে এই এলাকা থিয়েনজিনের রাজনৈতিক, অথনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।গুলৌ বাণিজ্য এলাকা একটি বিরাটাকারের বাণিজ্য কেন্দ্র যেখানে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। আমরা তাকে হাঁটা-পথ বলি। এই কেন্দ্রে পযর্টন, সংস্কৃতি , কেনাকাটা আর আমোদ-প্রমোদ প্রভৃতি ব্যবস্থা আছে। এই কেন্দ্র আবার তিন ভাগে বিভক্ত।পূর্ব ভাগ নানা ধরনের বিখ্যাত মার্কার জিনিসপত্র কেনার এলাকা, উতর ভাগ পুরাকীতি ও গয়নাগাটি কেনাকাটার এলাকা , দক্ষিণ ভাগ আমোদ-প্রমোদ নগর।৭০ বছর বয়স্ক ওয়াং জেন ডং একজন পুরানো থিয়ানজিনবাসী। তিনি মাঝেমাঝে এই এলাকায় ঘুরতে পছন্দ করেন।অতীতের কাহিনী স্মরণ করে তিনি বলেন,

    থিয়েনজিনের পুরানো ঘড়ি ভবন থিয়েনজিন শহরের প্রতীক। এই অতি প্রাচীন প্রতীকের ইতিহাস ৬০০ বছরের।এটা দেখে ইতিহাস সম্পর্কে অনেকের স্মৃতি জাগরিত হয়।বতর্মানে এখানে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। অতীতের কথা স্মরন করার জন্যে মিষ্টার ওয়াং নিয়মিত গুলৌ এলাকা বেড়াতে আসেন। আসলে থিয়ানজিনে এ ধরনের জায়গা আরো অনেক আছে।উতাডাও নামক একটি জায়গার কথাই ধারা যাক, ওখানে এখনও বিদেশীদের নির্মিত ব্যাংক, গির্জা , বাণিজ্য সংস্থা, উদ্যান প্রভৃতি স্থাপত্য সুরক্ষিত। স্থাপত্যগুলো সবই আফিম যুদ্ধকালে অর্থাত ১৬০ বছরেরও বেশী সময়ের আগের নির্মাণ। এ জায়গাকে বহুদেশীয় স্থাপত্য প্রদর্শনী ভবন হিসেবে গণ্য করা হয়।এ প্রসংগে থিয়ানজিন শহরের হোপিং বিভাগের সংস্কৃতি ও পযর্টন ব্যুরোর পরিচালক ওয়াং ই মিন ব্যাখ্যা করে বলেছেন,

    পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বতর্মানে উতাডাও পযর্টন আকর্ষন এলাকায় মোট ২৩০টি ইউরোপীয় স্থাপত্য-শৈলীর ভবন আছে।এ সব গন্যমান্য ব্যক্তি আর বিখ্যাত স্থপতি এক সংগে মিলে আমরা একটি সুন্দর পযর্টন লাইন তৈরী করেছি।এই লাইন হচ্ছে গত এক শো বছরে চীনের পরিবর্তন প্রকাশ করার পযর্টন লাইন।এ কথাও বলা যায় যে, চীনের অভ্যন্তরে এটা হলো একটি অদ্বিতীয় আকর্ষণীয় জায়গা।পযর্টকরা ওখানে যেমন ইউরোপীয় স্টাইলের ঘোড়ার গাড়ীতে বসে বিদেশী স্থাপত্যগুলো উপভোগ করতে পারেন, তেমনি এ সব স্থাপত্যের মাধ্যমে আধুনিক যুগে থিয়েনজিন সম্পর্কে নানা ধরনের ঘটনাগুলো জানতে পারেন। ফলে পযর্টকরা থিয়েনজিনের উতাডাও এলাকার প্রগাঢ় সংস্কৃতির মর্ম সহজেই বুঝতে পেরেছেন।

    থিয়ানজিন শহরে যেমন আছে ঐতিহ্যিক বাণিজ্য এলাকা, তেমনি আছে নব নির্মিত শপিং মল ।অর্থনৈতিক উন্নতির সংগে সংগে বাণিজ্যও আপনাআপনি দিন দিন সম্মৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। নতুন বাণিজ্য কেন্দ্র এবং বিরাটাকারের পেশা-ভিতিক বাজার পর পর আবির্ভূত হয়েছে। সুদীর্ঘকালের পুরানো দোকানপাটগুলো সম্প্রসারিত হয়েছে।যদি শুধু উতাডাও এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে একসময় আপনার ভালো না লাগে , তাহলে স্বর্ণ দোকান , খাবার দোকান , প্রাচীন সংস্কৃতি দোকানগুলো দেখতে যেতে পারেন ।ওখানে আপনি অবশ্যই আপনার ইচ্ছা মতো জিনিসপত্র কিনতে পারবেন এবং আপনার থিয়েনজিন ভ্রমনের আনন্দে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। মিষ্টার ওয়াং আবার বললেন

    থিয়েনজিন ভ্রমনে শহরের দৃশ্য ছাড়া, সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য না দেখলে চলবে না।চীনে বিখ্যাত প্যান পাহাড় থিয়ানজিন শহরের জিয়েন জেলার কেন্দ্র থেকে মাত্র ১২ মিটার দূরে।এই পাহাড়কে সবর্দাই থিয়েনজিনের অন্তরের উদ্যান বলে মনে করা হয়। প্যান পাহাড়ের তিনটি দর্শনীয়স্থানের সুনাম আছে।এই তিনটি দর্শনীয়স্থান হলো, পাহাড়ের চূড়ার পাইন গাছ, পাহাড়ের মাঝখানের অদ্ভূত পাথর এবং পাহাড়ের তলার পানি।যদি প্যান পাহাড় মেঘের সমুদ্রে ডুবে যায় , তাহলে পাহাড়ের দৃশ্য খুবই মনোরম।

    পাহাড় দেখার পর সাগর দেখতে যাওয়া যাক।এর আগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, থিয়েনজিন শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বোহাই সাগর। গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত নানা ধরনের ততপরতাগুলো থিয়ানজিনের বাইরের পযর্টকদের আকর্ষণ করে।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এক দিন জেলের জীবন অনুভব করতে পারলে পযর্টন ইভেন্টে অনুক্ষণ-ব্যস্ত শহরবাসীরা সত্যিই অভুতপূর্ব আরাম অনুভব করবেন ।পযর্টকদের সাগরে মাছ ধরার আগ্রহ মেটানোর জন্যে মাঝেমাঝে বন্দর থেকে বিশটিরও বেশী নৌকা সাগরে পাঠানো হয়।মাছ-ধরা নৌকার মালিকরা নি:সন্দেহে মহা খুশী। থিয়েনজিন ঠানগু হোশিন মতস্য কোম্পানীর ম্যানেজার ওয়াং জি ছি বলেছেন,

    আমরা ঐতিহ্যিক পযর্টন ইভেন্টের ব্যবস্থা করেছি।পযর্টকদের জন্যে আমরা মাছ ধরার জাল প্রভৃতি সরঞ্জামের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের এই ততপরতায় পযর্টকদের জেলের জীবন সম্বন্ধে জানতে চাওয়ার আগ্রহ মেটানো হয়। তা ছাড়া, আমরা সমুদ্রে ঘুড়ি উড়ানোর ব্যবস্থা করেছি।এই ততপরতায় নতুনত্ব আছে। নীল আকাশে উড়ন্ত ঘুড়িগুলোর চার পাশে যখন শংখচিলগুলো চক্কর দিতে থাকে, তখন কী যে সুন্দৱ লাগে! থিয়েনজিনের সৌন্দর্য শুধু গ্রীষ্ম আর শরতকালে সীমাবদ্ধ নয়, শীতকালের বরফ আর তুষার পযর্টন উতসবও বেশ আর্কষনীয়।সময় পেলে থিয়েনজিন বেড়াতে আসুন।