কোরিয় জাতির নারী শিল্পপতি নান সুন চি , দেখতে ফরসা , জামা-পোষাক পরিপাটী , ছিপছিপে শরীর। প্রথম দর্শনে মনে হয়, একজন ভদ্র ও শান্ত গৃহিনী , কিন্তু আপনারা হয়তো ভাবতে পারছেন না , তিনি আসলে একটি বৃহত্ শিল্প প্রতিষ্ঠানের শিল্পপতি । গত ৫ বছরে তিনি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন । তার প্রচেষ্টায় একটি দেউলিয়ার সম্মুখীন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং সেটা একটি আধুনিক লিমিটেড শিল্প প্রতিস্ঠানে পরিনত হয়েছে । এখন ৩ বিলিয়ান ইউয়ানের পূঁজিসম্পন্ন এই বৃহত্ শিল্প প্রতিষ্ঠান শেয়ার বাজারেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ।
উত্তর চীনের চিলিন প্রদেশের থুমেনচিয়াং নদীর ধারে প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোরম আর নিবিড় বনান্চল আছে । নানসুনচি এই অন্চলে জন্ম গ্রহণ করেছেন এবং ছোট বেলা থেকে ওখানে জীবনযাপন করে আসছেন । ১৯৭৯ সালে যখন তিনি স্থানীয় একটি বৃত্তিমূলক কলেজ থেকে স্নাতক হন , তখন তিনি একটি স্থানীয় বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান-- সি ইয়েন কাগজের কলে একজন শ্রমিক নিযুক্ত হন । নয়া চীনের প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিতএই অন্যতম কাগজের কলে তৈরী কারখানায় একসময় অসাধারণ মর্যাদা দেখা দিয়েছে । তখন কারখানাটিতে যেমন চীনের সবচেয়ে উন্নত মানের কাগজ তৈরীর প্রযুক্তি ও সরন্জাম ছিল, তেমনি চীনের কয়েকটি বড় সংবাদপত্রের জন্য তা নিউস্ প্রিন্ট সরবরাহ করা হতো । ওখানে বহু নতুন কাগজের কলের কারখানার জন্য বেশ কিছু যোগ্য প্রকৌশলী ও শ্রমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । বহু বছর ধরে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের আয় গোটা থুমেন শহরের মোট উত্পাদন মূল্যের অর্ধেক । এই কারখানায় নানসুনচি কর্মনিষ্ঠ। কারখানা বিকশিত হওয়ার সংগে সংগে তার ব্যক্তিগত সব কিছুও সফল হয়েছে । তিনি বলেছেন, যখন আমি করাখানার শ্রমিক ছিলাম , তখন আমি কর্মনিষ্ঠ । কাজ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমি যথাসাধ্য আত্মনিয়োগ করতাম। শ্রমিক থেকে যুব লীগের সম্পাদক তারপর জেনারেল ম্যানেজার আর চেয়ারম্যান। বলা যায় , আমার ক্রমাগত পদোন্নতি হয়েছে । কিন্তু ধীরে ধীরে চীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের মতো শিল্প প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত ভার আর চীনের বাজারে বিদেশী কাগজের কলে প্রবেশের কারণে গত শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে নানসুনচি ও অন্যান্য কর্মীদের কারখানাও অভুতপূর্ব উন্নয়ন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছিল । এই কঠিন সময়ে নানসুনচি কারখানাটির পরিচালক নিযুক্ত হন । তখনকার কঠিন অবস্থার স্মৃতিচারণ করে' তিনি বলেছেন , তখন কাগজের কলগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই দেউলিয়ার সম্মুখীন হয় । কর্মচারী আর শ্রমিকদের জীবনযাপনে বিরাট অসুবিধা দেখা দেয় । আমার বাবাও এই কারখানায় চাকরি করেছেন । সুতরাং আমি এই কারখানাকে খুব মূল্য দেই ।
নানসুনচির বাবা এই কারখানার প্রবীণতম কর্মীদের একজন । যখন তিনি প্রাথমিক স্কুলে পড়ছিলেন , তখন তার বাবা মারা গেছেন । তার পরিবারের দুই প্রজন্মের সংগে জড়িত কারখানাটির এই দুরূহ অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য তিনি কারখানাটিতে ব্যাপকভাবে সংস্কারের কাজ চালিয়েছেন । আগে সব খরচ কারখানার মাধ্যমে বহন করা হত ।যেমন বিনা খরচে শ্রমিকদের বাড়িঘর বন্টন করা হত আর শ্রমিকদের সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়ার সুযোগ সুবিধা দেয়া হত । এখন এই সব ব্যবস্থার পরিবর্তে বাজার অর্থনীতির নিয়মাবলী প্রবর্তন করা হচ্ছে । কারখানাটি শেয়ারভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। নতুন সরন্জাম কেনা হয়েছে । তা ছাড়া প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার কাজ জোরদার করার জন্য কারখানাটি চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে কাগজের কল থেকে যোগ্য প্রকৌশলী ও দক্ষ শ্রমিক আমদানি করেছে। তিনি বলেছেন , এই সব ব্যক্তি আমাদের কারখানায় আসার পর শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে । আগে আমাদের কারখানায় ব্যবস্থাপনা খুব বিশৃংল ছিল । পানি ও বিদ্যুতের অপচয় ছিলো খুবই ব্যাপক। সংস্কার চালাবার পর উত্পাদনের কাঁচামাল ও খরচ কমে গেছে । এখন এক টন কাগজ উত্পাদনের কাঁচামাল ও খরচ ৫ শো ইউয়ান বাঁচানো হয়েছে । আমাদের কারখানার বার্ষিক উত্পাদন ক্ষমতা ২ লক্ষ টন কাগজ । অর্থাত্ বছরে আমাদের মুনাফা ১০ কোটি ইউয়ান বেড়েছে । এখন কোম্পানিতে ক্যাপার বাছাই করার ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দিতার ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে । এর ফলে শ্রমিকদের দায়িত্ব বোধ জোরদার হয়েছে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান আরো দ্রুত বিকশিত হয়েছে ।
গত বছর শি ইয়েন কাগজের কল শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । বর্তমানে একটি বৃহত্ শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে শি ইয়েন কাগজের কলের প্রকৌশলী আর শ্রমিকের সংখ্যা ৩ হাজারেরও বেশী হয়েছে । শাংহাই আর পেইচিংয়ে তাদের কোম্পানির শাখা আছে । কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে কাজের জন্য বছরে তাকে দুই তৃতীয়াংশ সময় বাইরে থাকতে হয় । তিনি বলেছেন , শিল্প প্রতিষ্ঠানের সফলতার মূল অভিজ্ঞতা হচ্ছে অন্যদের বেশী বেশী বোঝা আর তাদের অপরের প্রতি বেশী যত্ন নেয়া দরকার ।
তার পরিবার, স্বামী ও সন্তান প্রসংগে তিনি বলেছেন, আমি মাঝে মাঝে কাজের জন্য বাইরে থাকি । বাইরে যাওয়ার আগে আমি বাড়িতে পরণীয় জামা-পোষাক আর স্বামী ও সন্তানের খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করি । কাজ শেষে ফিরে আসার পর আমি বাড়িতে সব জায়গায় ঝাড়ু দেই , যে সব কাপড় ধুতে হবে , সেগুলো কাচি ।
|